ভোলাবাণী।।লাইফস্টাইল ডেস্ক
মানুষের কাছে এখন আতঙ্কের নাম ‘ডেঙ্গু’। এবারের ডেঙ্গু কেবল ঢাকাতেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী। স্প্রে, কয়েল, অয়েনমেন্ট, মসকিউটো রেপিলেন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করেও ডেঙ্গু থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে যেসব ঘরে শিশু, গর্ভবতী নারী কিংবা বৃদ্ধ আছেন, তাদের নিয়ে ভয় আরও বেশি। আগামী দুই থেকে তিনমাস পর্যন্ত এই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্প্রে, কয়েলের মতো বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারে মশার আক্রমণ কমে গেলেও তাতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে। তাই শারীরিক ক্ষতি হয় না, এমন উপাদান ব্যবহার করাই ভালো।মশা, মাছি তাড়ানোর প্রাচীন একটি পদ্ধতি হলো ধূপ। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হওয়ায় শরীরের ক্ষতি করে না। বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ধূপগাছ জন্মে। গাছের কাণ্ড থেকে যে নির্যাস বা আঠা পড়ে, তা দিয়েই তৈরি হয় ধূপ।
বাসায় প্রতিদিন দুই বা তিনবেলা ধূপ দিলে মশার উপদ্রব কমে যায়। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয় বলে ধূপের ধোঁয়া শরীরের কোন ক্ষতি করে না।
বাজার থেকে ধূপদানি, নারকেলের আঁশ ও ধূপ গুঁড়া কিনতে হবে। এসব পণ্যের দাম বেশি না। ফলে সাধ্যের মধ্যেই কেনা সম্ভব।
বাজারে দুই ধরনের ধূপদানি পাওয়া যায়। একটি মাটি দিয়ে তৈরি এবং অন্যটি পিতলের। পিতলের তৈরি ধূপদানির দাম একটু বেশি, তবে অনেকদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। ভালো মানের পিতলের একটি ধূপদানি প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ব্যবহারের উপযোগী থাকে।
ধূপদানিতে তিন বা চার টুকরো নারকেলের আঁশ দিতে হবে। এরপর দিয়াশলাই দিয়ে নারকেলের আঁশে আগুন ধরিয়ে তাতে ১ চা চামচ পরিমাণ ধূপের গুঁড়া দিতে হবে। প্রচুর ধোঁয়া হবে ও সুন্দর গন্ধ পাওয়া যাবে।
ধূপ জ্বালানোর পর প্রথম ৫ মিনিট ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে। এরপর জানালা খুলে দিন। এতে ঘরের মশা চলে যাবে। ১০ মিনিট জানালা খোলা রাখার পর আবার বন্ধ করে দিন। ধূপ দেওয়ার পর জানালা বন্ধ রাখাই ভালো। এতে বাইরের মশা ঘরে ঢুকবে না।
মশার আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে ধূপ বেশ কার্যকর। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে ঘরে ধূপ দেওয়া ভালো।
ধূপ ব্যবহারে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি না থাকলেও কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা দরকার।
• ধূপের আগুন মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তাই এই ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। ধূপ জ্বালানোর পর ধূপদানি কাপড় কিংবা তুলাজাতীয় জিনিস থেকে অনেক দূরে রাখতে হবে। ধূপদানির জন্য ফাঁকা জায়গা নির্বাচন করা ভালো।
• ধূপ জ্বালানোর আগে ঘরের ফ্যান বন্ধ করতে হবে। ফ্যানের বাতাসে ধূপের আগুন ঘরের চারপাশে উড়ে গেলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ধূপের আগুন ভালোভাবে নিভে গেলে ফ্যান ছাড়তে হবে।
• ধূপের ধোঁয়ায় অনেকসময় শিশুদের চোখ জ্বালা করতে পারে। তাই ধোঁয়া থেকে শিশুদের দূরে রাখুন।
• ২০-২৫ মিনিটের বেশি ধূপ জ্বালিয়ে না রাখাই ভালো। এতে ঘরে ধোঁয়াটে ভাব চলে আসে।
• ধূপদানি শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
শুধু মশা মাছি তাড়াতেই নয়, ধূপ প্রাকৃতিক এয়ারফ্রেশনার হিসেবেও ভালো কাজ করে। নিয়মিত ধূপ দিলে ঘরের ভ্যাপসা ভাব দূর হয়। মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে ধূপ হতে পারে আপনার অন্যতম হাতিয়ার।