চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি থাকলেও ভোলায় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি থাকলেও ভোলায় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
বুধবার, ১ মে ২০২৪



স্টাফ  রিপোর্টার।।ভোলাবাণী।।ভোলা জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৩০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বোরহানউদ্দিনে দুটি কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট থেকে বর্তমানে ৩৫০ মেগাওয়াট ও জেলা সদরের রেন্টাল প্লান্ট ভেনচার এনার্জি রিসোর্স থেকে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি থাকলেও লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। চলমান তাপদাহে তীব্র গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের যাওয়া-আসা।

 

ভোলায় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।

দুটি রেন্টাল প্ল্যান্ট বন্ধ, ট্রান্সফরমার বিকল, গ্রিড সাবস্টেশন ও টেকসই সঞ্চালন লাইনের অভাবে এ অবস্থা বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এর পরও গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণের জন্য জেলা সদরের চরসমাইয়া ও চরফ্যাসনে পাওয়ার গ্রিড কো¤পানি জমি অধিগ্রহণ করে বালু ফেলে রেখেছে।

ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ বলছেন, রেন্টাল প্লান্ট বন্ধ হওয়ার পর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের সোর্স লাইন দিয়ে বোরহানউদ্দিন থেকে বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে। সঞ্চালন লাইনের দূরত্ব বেশি হওয়ায় চাহিদা মতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। ঝড়বৃষ্টিতেও অনেক সময় লাইন বিচ্যুতি হচ্ছে। এ ছাড়া বোরহানউদ্দিন প্লান্টের একটি নষ্ট। এসব কারণে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণের ওপর গুরুত্ব দেন এ কর্মকর্তা।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. ইছাহাক আলী জানান, বিদ্যুতের ঘাটতি কমাতে দ্রুত রেন্টাল প্লান্ট সংস্কার করা প্রয়োজন। জেলার ৪ লাখ ৮০ হাজার গ্রাহকের জন্য চাহিদা রয়েছে ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। প্রয়োজনীয় সরবরাহ না পাওয়ায় প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মেগাওয়াট ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এ ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত চলছে ঘন ঘন লোডশেডিং। ফলে চলমান তাপদাহের মধ্যে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য। ভোলার শাহবাজপুর কূপের গ্যাস দিয়ে বোরহানউদ্দিনে ২২৫ মেগাওয়াটের দুটি কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট থেকে বর্তমানে ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। জেলা সদরের ভেনচার এনার্জি রিসোর্স লিমিটেড সাড়ে ৩৪ মেগাওয়াট রেন্টাল প্লান্টে উৎপাদন হতো ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। রেন্টাল থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ দিয়ে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কো¤পানি (ওজোপাডিকো) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জেলা শহর ও সদর উপজেলার একাংশের অর্ধলক্ষাধিক গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। অন্য উপজেলায় সরবরাহ হতো বোরহানউদ্দিনের প্লান্ট থেকে। বোরহানউদ্দিনের অবশিষ্ট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে হয়ে চলে যায় দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য জেলায়। কিন্তু গত ২৫ জানুয়ারি সদরের রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্টের দুটি ইউনিট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায় বোরহানউদ্দিনের বিদ্যুৎ প্লান্ট। কিন্তু বোরহানউদ্দিনের দুটি ট্রান্সফরমারের একটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে নষ্ট। বর্তমানে ৯০ মেগাওয়াটের ধারণ ক্ষমতার একটি ট্রান্সফরমার দিয়ে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু চাহিদার চেয়ে ৩০ মেগাওয়াট সরবরাহ কম পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া গ্রিড সাবস্টেশন না থাকায় ৪০ কিলোমিটার দুরের সোর্স থেকে আনা বিদ্যুৎ বিতরণ করতে গিয়েও নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বিতরণকারী সংস্থাগুলোকে। তাই বিতরণ কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই লোডশেডিং দিচ্ছে।

ওজোপাডিকো সূত্র জানায়, জেলা সদরে ২০ মেগাওয়াট, বোরহানউদ্দিন ও চরফ্যাসনে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে ২০ থেকে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।

ফলে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এ ছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৯১ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে তারা বোরহানউদ্দিন প্লান্ট থেকে ৬৮ থেকে ৭০ মেগাওয়াট ও রেন্টালের একটি ইউনিট থেকে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে। এতেও ১০ থেকে ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

ভোলার চর সামাইয়া ইউনিয়নের শান্তিরহাট ব্রিজ বাজারের ব্যবসায়ী মো. ফরিদ জানান, গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিংও বেড়ে গেছে। আধাঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে দুই ঘণ্টা অন্ধকারে থাকতে হয়। সামান্য বাতাসেই বিদ্যুৎ উধাও হয়ে যায়। ঝড়বৃষ্টি হলে ২-৩ দিন পর বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। বিদ্যুৎভিত্তিক যেসব ব্যবসা আছে সেগুলো প্রায় বন্ধের পথে।

চর সামাইয়া ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাহক মিজানুর রহমান, মিরাজ ও আবদুল মতিন জানান, দিনে ৭-৮ বার লোডশেডিং করছে পল্লী বিদ্যুৎ। সারারাতে ২ ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।

ভোলা বিসিক শিল্পনগরীর উদ্যোক্তা জামাল খান জানান, তার কারখানার উৎপাদন ১০ ভাগ কমে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে লোকসান গুনতে হবে মিল-কারখানার মালিকদের।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. সুলাইমান বলেন, ভোলা থেকে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে অন্যান্য জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। অথচ স্থানীয় গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। তিনি দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার দাবি জানান।

জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানান, সমস্যা সমাধানের জন্য সাড়ে ৩৪ মেগাওয়াট রেন্টাল প্লান্টটি সচল করতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গ্রিড সাবস্টেশন দ্রুত নির্মাণের জন্যও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮:২৬:১৫   ১৪১ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানালো যুক্তরাষ্ট্র
মনপুারায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে নিম্নমানের বালু ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় হামলায় নিহত ১
গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় ৯৭০ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
ড. মুহাম্মদ ইউনূসে সঙ্গে সেনাপ্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ
ভোলায় সাংবাদিকদের সম্মানে জামায়াত ইসলামীর ইফতার মাহফিল
তেতুলিয়ায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ ৫ জলদস্যু আটক
বোরহানউদ্দিনে চাষাবাদকৃত জমির ফসল লুটপাট ব্যপক ক্ষতি সাধন
ভোলায় খেলাফত মজলিসের উদ্যোগে আলোচনা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত
বোরহানউদ্দিনে যুবদলের আয়োজনে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত
১৮ মার্চ : আজকের নামাজের সময়সূচি

আর্কাইভ