মিজানুর রহমান নয়ন,চরফ্যাশন অফিস ভোলা বানী॥ সুশাসন হলো একটি দেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সম্পদের কার্যকরী ব্যবস্থা, তবে ব্যবস্থাটি হবে উন্মুক্ত, স্বচ্ছ জবাবদিহিতামূলক ও ন্যায্য সমতাপূর্ণ।’
নারীর ‘বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। দিন বদলের সাথে সাথে বিলুপিÍ ঘটেছে এ কথাটির। এখন নারীরা পুরুষতন্ত্রকে সমূলেই উৎপাটন করে তাদের অধিকার আদায়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
আকলিমা ফারুক মিলা বোরহান উদ্দিন থানার টবগী ইউনিয়নের আজিজুর রহমানের কন্যা । জন্ম স্থান বোরহান উদ্দিনে হলেও পিতা সেনা সদস্য আজিজুর রহমান চরফ্যাশন বাড়ি করায় ৫বছর বয়সে মিলা বাবা মায়ের কোলে চড়ে চরফ্যাশন আসেন। এখানে তার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন। আর উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন কেরেছেন লালমোহন থানার ধলীগৌর নগর কলেজ থেকে। বিএ পাশ করা এই নারীর শৈশব কৈশর এবং বর্তমান সময় কাটছে চরফ্যাশনে। এসএসসি পাশ করার পরই আব্দুর রব পঞ্চায়েতের পুত্র ওমান প্রবাসী ফারুক হোসেনের সাথে তার বিয়ে হয়। বিবাহিত জীবনে এই নারী ২সন্তানের জননী। তার ছেলে আবদুল্যাহ আল আদনান কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। মেয়ে তানজিলা হোসেন ইনতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
মিলা ১৯৯২সনে এসএসসি পাশ করার পরই পরিবারের সিদ্ধান্তে তাকে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়। কিন্তু তার জীবনের পরিকল্পনা ছিল বিএ পাশ করবে। তার ইচ্ছা শক্তির কারনে বিয়ে হওয়া সত্বেও নিজের এবং স্বামীর পরিবারকে বুঝিয়ে তার ইচ্ছা পুরন করেছেন। অর্জন করেছেন ¯œাতক ডিগ্রি। ২০০৮সনে স্বামীর উৎসাহে তিনি রাজনীতিতে অংশ গ্রহন করে প্রথম পৌর মহিলা আওয়ামীলীগেরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপান। ২০১৪সনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বর্তমানে উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বেও আছেন। দায়িত্বে থাকার কারনে তার কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সভাসমাবেশে গ্রামীন নারীদের সুশাসন এবং অধিকার আদায়ে কথা বলেন। সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করে কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান বেতন ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া ও রাজনীতিতে নারী প্রতিনিধি বাড়ানোর দাবিতে, নারীর যৌন হয়রানি বন্ধ করা,পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আকলিমা ফারুক মিলা বিভিন্ন সেমিনারে ভুমিকা রাখছেন।
জনপ্রতিনিধি আকলিমা ফারুক মিলা নারীদের ক্ষমতায়ন,অধিকার,সক্ষমতা ও সহিংসতা উত্তোরণ নিয়ে বলেন, আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এক সময় নারীরা নিজের বিয়ের বিষয়ে অভিভাবকের নিকট মতামত প্রদান করতে পারতোনা। কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা কাজ করলেও তাদের সে আয় স্বামীর সংসারে কিংবা যৌথ পরিবারে স্বাধীনভাবে নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী খরচ করতে পারতো না। কিন্তু এখন সে অবস্থার ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারীদের উপস্থিতি বেশি হলেও এখনো পুরুষের তুলনায় অনেক কম। এখনো বাংলাদেশের কোনো না কোন স্থানে নারী সহিংসতা বা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সুশাসন এবং অধিকার আদায়ে প্রতিবন্ধতা নারীর সচেতনতা,শিক্ষার অভাব,অর্থনৈতিক দৈন্যতা এবং বাল্য বিবাহ। সুশাসন এবং অধিকার আদায় করতে হলে নারীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। হতে হবে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী। আর এর জন্য নারীকে আয় বর্ধক কাজ করতে হবে। নারীর বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সবাই মিলে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি পরিবার এবং নারীর নিজেরও বেশ কিছু ভূমিকা রয়েছে। স্বেচ্ছাচারী হয়ে পুরুষের প্রতি বিরূপ আচরণ করবে তা নয়। নারী-পুরুষ উভয়কে পরস্পরের প্রতি পরস্পরের সহনশীল হতে হবে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক এমনকি মনস্তাত্তি¦ক ক্ষেত্রে বৈষম্য থাকা সত্তে¦ও নারী দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ে ভূমিকা রেখে চলেছে। তবে বাংলাদেশে এখনো এমন অনেক পরিবার আছে, যেখানে নারী উপেক্ষিত। সামাজিকভাবেও নারীর অবস্থান সেভাবে তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এজন্য নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার আদায়ের ঐক্যবদ্ধ হয়ে নারীকেই এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৩০:২৯ ৪৬৪ বার পঠিত |