চরফ্যাশনে ঈদের আগে পাকা ঘর পেলেন ভূমিহীন ৩৭০ পরিবার

প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » চরফ্যাশনে ঈদের আগে পাকা ঘর পেলেন ভূমিহীন ৩৭০ পরিবার
বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০২৪



 

---মিজান নয়ন।।ভোলাবাণী।।চরফ্যাশন।।

ভোলার চরফ্যাশনে ঈদের একদিন আগে পাকা ঘর পেয়েছেন ভূমিহীন ৩৭০ পরিবার। বিগত ঈদে জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করা এসব পরিবারগুলো আগামীকাল বৃহস্পতিবার  নতুন পাকা ঘরে  ঈদ উদযাপন করবেন এটা তাদের মধ্যে উৎসবের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। নতুন ঘর পাওয়া ৩৭০ পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি জরাজীর্ণ ঘরে দীর্ঘ সময়ে কষ্টে বসবাসের পর মজিব বর্ষের ঘরের আদলে ঘরগুলো পুনঃনির্মাণের  ব্যবস্থা গ্রহণকারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরিন হকের প্রতিও  কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,জরাজীর্ণ   ঘরগুলো পুনঃনির্মাণ শেষে মঙ্গলবার দুপুরে হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ঝিনুক আশ্রয়ন প্রকল্পে ১০০ , ও চর মানিকা ইউনিয়নের কবি মোজাম্মেল হক আশ্রয়ন প্রকল্পে ১৫০ এবং জাহানপুর ইউনিয়নের আটকপাট গ্রামের মাইকেল মধুসূদন আশ্রয়ন প্রকল্পের ১২০টিসহ ৩৭০ হতদরিদ্র ভূমি হীন পরিবারের মধ্যে সেমি পাকা ঘর বিতরণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরিন হক। সহকারী কমিশনার ভূমি সালেক মূহিদ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।  আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সেমি পাকা চার কক্ষ বিশিস্ট ঘর পেয়ে হাসি ফুটেছে হত দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে। মঙ্গলবার আশ্রায়ন প্রকল্পে আশ্রিত পরিবার এবং প্রকল্পের ঘর পুনঃনির্মাণে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এই প্রকল্প নিয়ে আশ্রিতদের জীবনের হতাশা আর আশাজাগানিয়া অজানা অনেক কথাই ফুটে উঠেছে।

 

জানাগেছে, গত বছরের জুলাই মাসে  নওরীন হক চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে  যোগদানের পরপর আশ্রায়ন প্রকল্পগুলো ঘুরে দেখেন। এসময় ঘর গুলোতে আশ্রিতদের

দুর্দশা এবং ঘরগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে তিনি প্রকল্পের ঘরে আশ্রিত হতদরিদ্র অসহায় মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে উদ্যোগী হন এবং মুজিববর্ষের ঘরের আদলে আশ্রায়ন প্রকল্পের সবগুলো ঘর পুনঃনির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠান । প্রাথমিক ভাবে অনুসন্ধান করে এমন জরাজীর্ণ ২২শ ঘরে আশ্রিতদের তালিকা প্রস্তত করেন। প্রেরিত প্রস্তাব অনুযায়ী গত নভেম্বর মাসে  মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম ধাপে ৩শ ৭০টি ঘর পুনঃনির্মাণের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের মধ্যেও পুনঃনির্মাণ কাজ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে চালিয়ে এখন পুনঃনির্মিত ঘরগুলো নির্মাণ শেষে আশ্রিতদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। চর মানিকা ইউনিয়নের আশ্রিত অন্ধ সুরমা বেগম জানান, অল্প বয়সেই তার বিয়ে হয়। জম্ম থেকেই তিনি দুচোখে দেখেন না। প্রায় ১৭ বছর আগে স্বামী ভুমিহীন দিনমুজর আলাউদ্দিন কবি মোজ্জাম্মেল হক আশ্রয়নে একটি ঘর বরাদ্দ পেয়ে অন্ধ নব বধুকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। কয়েক বছর যেতেই তাদের বসবাসের একমাত্র আশ্রয়ের ঘরটি জরাজীর্ন হয়ে যায়। পলিথিনের ছাওনিতে কাটিয়ে দেন বছরের পর বছর । এবছরে প্রধানমন্ত্রী ঈদ উপহার হিসেবে তারা একটি স্বপ্নের পাকা ঘর বুঝে পেয়েছেন। সেমি পাকা ঝকঝক্ একটি নতুন ঘর অন্ধ সুরমার জীবনে একঝলক হাসি হয়ে ধরা দিয়েছে। আশ্রয়নের বাসিন্ধা জেলে বধু হালিমা বেগম জানান, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচরে নদী ভাঙ্গনের কবলে পরে হারিয়েছে ভিটে বাড়ি। ১৫ বছর আগে প্রকল্পের একটি ঘর পান তিনি। এই ঘরে থেকেই  স্বামী- শ্বশুর শ্বাশুরী ও তিন সন্তান নিয়ে বাসা বেঁধেছেন তিনি। ক্ষুদ্র মৎস্য শ্রমিক স্বামীর আয়েই চলে তার সংসার। কয়েক বছরেই ঘর জরাজীর্ণ হয়ে যায়। ঘরটি মেরামতের জন্য কোন সাধ্য ছিলোনা তাদের। জরাজীর্ণ ঘরটি পলিথিলিন মুড়িয়ে রোদ- ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষার চেষ্টা করলেও আর্থিক দৈণ্যতার কারণে ঘরটি সংস্কারের কথা চিন্তাও করতে পারেননি। সেই ঘরটি এখন পুনঃনির্মাণ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। মুজিব বর্ষের ঘরে আদলে নির্মাণ করা সেমি পাকা ঘরটি বুঝে পাওয়ার আয়োজনে ইয়াছিন ও হালিমা দম্পতির কাছে মেঘ চাওয়ার আগেই বৃষ্টি হয়ে ধরা দিয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানাযায়, আশ্রয়হীন,ভূমিহীনের মতো  ভাসমান মানুষের নিজস্ব ঠিকানা নিশ্চিত করতে আশ্রায়ন প্রকল্প শুরু হয় এবং এসব প্রকল্পে নিজের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন সুরমা, হালিমা ও ছকিনা , নাসিমার মতো সমাজের চরম নিঃস্ব  অসহায়  ১ হাজার ৩শ ৯০টি চরম দরিদ্র পরিবার।এক যুগ বা তার চেয়েও বেশী আগে নির্মিত  আশ্রায়ন  প্রকল্পের ঘরগুলো সময়ের ব্যবধানে এখন জরাজীর্ণ এবং বসতির অনুপযোগী হয়ে পরেছে। দীর্ঘ এই সময়ে সরকারি ভাবেও ঘরগুলো সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।  কিন্ত দারিদ্রের কবলে পতিত অসহায় মানুষগুলোর  এসব ঘর সংস্কারের সামর্থ কখনো হয়ে উঠেনি। এমন বাস্তবতা দেখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হকের উদ্যোগে  মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করে আশ্রায়ন  প্রকল্পের জরাজীর্ণ ২২০০ ঘর পুনঃনির্মাণের  উদ্যোগ গ্রহনের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়। যার প্রেক্ষিতে প্রথম পর্যায়ে চরফ্যাসনে ৩শ ৭০টি ঘর পুনঃনির্মাণ  কাজ সম্পন্ন করে হতদরিদ্র পরিবার গুলোকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হক জানান, ভাসমান দরিদ্র মানুষের আশ্রয় নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময়ে টিনের ছাউনী আর টিনের বেড়ার এসব  ঘর নির্মাণ করা হয়। ঘরগুলো এতো জরাজীর্ণ যে তা সংস্কারের উপযোগীও নেই। তাই আশ্রিত পরিবারগুলোর দুর্দশা লাগবের কথা ভেবেই ঘরগুলো মুজিববর্ষের ঘরের আদলে পুনঃনির্মাণের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর করেছি। যার প্রেক্ষিতে চরফ্যাসনে প্রথম ধাপে ৩শ ৭০টি ঘর পুনঃ নির্মাণ কাজ শেষ করে আশ্রিতদেকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘরগুলো পুনঃনির্মাণে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রত্যেকটি ঘর পুনঃনির্মাণে  ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা। সেমি পাকা এসব ঘরে থাকছে রঙ্গিন টিনের ছাউনি। বারান্দাসহ ২টি কক্ষ, রান্নাঘর  এবং একটি সংযুক্ত শৌচাগার । আছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এবং পাকা ঘাটলাসহ পুকুর।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩০:১৬   ১১০ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

চরফ্যাশন’র আরও খবর


চরফ্যাসনে হিটস্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু
চরফ্যাশনে স্বামীর প্রহার থেকে স্ত্রীকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত-৩
চরফ্যাশনে ঈদের আগে পাকা ঘর পেলেন ভূমিহীন ৩৭০ পরিবার
চরফ্যাশনে ২০ হাজার প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ
নানা বাড়িতে এসে পানিতে ডুবে দুই খালাতো ভাইয়ের মৃত্যু
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চরফ্যাশনে যাকাত ফান্ডের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চরফ্যাশনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত
চরফ্যাশনে তরমুজের বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে হাসি
অভয়াশ্রমে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় দুর্দশায় জেলেরা
চরফ্যাশনে বাবার লাশ দাফনে সন্তানদের আপত্তি নির্ধারিত সময়ে জানাজা হয়নি, সমঝোতার চেষ্টা

আর্কাইভ