স্টাফ রিপোর্টার।।ভোলাবাণী॥
একদিকে রমজান অন্য দিকে অভয়াশ্রমে (মার্চ ও এপ্রিল) দুই মাস মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। এই বছরে নিষেধাজ্ঞার আগ থেকেই নদীতে মাছের তেমন দেখা পাইনি জেলেরা। এদিকে নিত্য পণ্যের দামও বেশি তাই জেলেরা সংসার ও সন্তানদের পড়াশুনার খরচ চালাতে হিমশিম খা”েছ। অনেকেই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ধার-দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়ছেন। অভয়াশ্রম মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় পড়ে আয় না থাকার কারনে দুর্দশায় পড়তে হয়েছে ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার জেলেরা।
সোমবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন মৎস্য ঘাটে শত শত ট্রলার নোঙ্গর করে রেখেছেন জেলেরা। নদীতে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারনে কেউ দলবেঁধে মনের আনন্দে জাল মেরামতের কাজ করছেন, কেউ ট্রলার মেরামত করছেন, আবার কেউ অন্যে পেশার কাজ করছেন। এদিকে মৎস্য ঘাট গুলোতেও সুনসান নীরবতা নেই কোন হাঁক-ডাক।
চরফ্যাসন উপজেলা মৎস্য অফিস জানায়, এই উপজেলাতে নিবন্ধীত জেলে ৪৪ হাজার ৩১১ জন। এদের মধ্যে ভিজিএফের আওতায় রয়েছেন ২১ হাজার জেলে। বছরে ৫ বার মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা জেলেদের জীবনযাত্রা নির্বাহের জন্য সরকারের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় বেকার জেলে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে এ চাল দেওয়া হয়।
বাংলা বাজার মৎস্য ঘাটের জেলে বাবুল গাজি জানান, সে দীর্ঘ ৫০ বছর যাবত জেলে পেশায় রয়েছেন। এই বছরে নদীতে কোন ধরনের মাছের দেখা মিলছেনা। ধার-দেনা করে সংসার চালাতে হ”েছ। ছোট বেলা থেকে এই পেশায় নিয়োজিত। তাই অন্য কোন পেশার কাজ জানেন না বাবুল গাজি। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে কোন আয়-রোজগার না থাকায় চরম হতাশায় রয়েছেন এই জেলে।
চৌকিদার খাল মৎস্য ঘাটের জেলে কবির মাঝি জানান, নিষেধাজ্ঞার আগ থেকেই নদীতে মাছের তেমন দেখা মেলেনি। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সংসার এবং সন্তানদের পড়াশুনার খরচ বহন করতে হ। তাদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছেন জেলে কবির মাঝি।
এছাড়াও অধিকাংশ জেলেদের অভিযোগ, সরকারের দেওয়া কোনো সুবিধা মেলেনি তাদের কপালে। বরাদ্দের সিংহভাগই স্থানীয় ইউপি সদস্য, প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা লুটেপুটে খায়। তাই নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
চরফ্যাসন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার জানান, চরফ্যাসন উপজেলায় নিবন্ধীত ৪৪ হাজার ৩১১ জেলের মধ্যে ২১ হাজার জেলে ভিজিএফের আওতায় রয়েছে। জেলেদের সংখ্যানুপাতে সীমিত পরিমাণ বরাদ্দের ফলে বঞ্চিত অনেক জেলে। মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে উপজেলার সব জেলেদের একসঙ্গে চালের সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে না। তাই জেলেরা সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। পর্যায়ক্রমে সকল জেলেকে অবরোধ চালাকালীন চালের সুবিধা প্রদানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩২:১৫ ১২০ বার পঠিত |