ভোলাবাণী ডেক্সঃ
গতকাল বুধবার ১০ এপ্রিল ২০১৯ তারিখ রাঙ্গামাটি নৌপথে স্পীড বোট এবং স্টাফ বোটের চলাচল বন্ধের দাবীতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার চেয়ারম্যান মইনুদ্দীন সেলিম এর নেতৃত্বে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। ধর্মঘটে রাঙামাটি হতে অন্যত্রে সকল নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, আজ বুধবার ১০ এপ্রিল ২০১৯ তারিখ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বিজু উৎসব পালিত হবে। তাদের এই বিজু উৎসবে তারা বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত, বাজারঘাট, আত্মীয় স্বজনদের বাসায় গমন এবং নানা ধরণের অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।
তাদের এই উৎসবকে বাঁধাগ্রস্ত করার জন্য উদ্দেশ্যমূলক ভাবে বর্ণিত মইনুদ্দীন সেলিম এই কর্মসূচীর ডাক দিয়েছেন বলে সাধারণ জনগন মনে করেন।
মূলত পাহাড়ীদের এই বর্ণিল উৎসব বাঁধাগ্রস্ত করে প্রশাসনকে জিম্মি করার মাধ্যমে নিজেদের দাবী দাওয়া আদায়ের এই হীন উদ্দেশ্য রাঙামাটির মানুষের মাঝে সংশয় ও বিস্ময় তৈরি করেছে। সবাই ভাবছে প্রশাসনকে জিম্মি করার এই দুঃসাহস এর উৎস কি? কে তাকে শক্তি যোগাচ্ছে?
নিজস্ব প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে যে, মইনুদ্দীন সেলিমের সাথে রাঙামাটির আঞ্চলিক দলগুলোর অত্যন্ত গোপন ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। বর্তমানে আঞ্চলিক দলগুলো কিছুটা কোনঠাসা অবস্থায় আছে। অনেক সাধারণ জনগণ মনে করছেন আঞ্চলিক দলগুলোকে বিশেষ কোন সুবিধা পাইয়ে দেয়ার জন্য মইনুদ্দীন সেলিম এই হীন কর্মে লিপ্ত কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখা প্রয়োজন ।
কারণ বিজু উৎসব বাঁধাগ্রস্ত হলে তা রাঙামাটির সাধারণ পাহাড়ী মানুষদের ক্ষুদ্ব করবে এবং এই ক্ষুদ্বতাকে কাজে লাগিয়ে আঞ্চলিক দলগুলো সাধারণ পাহাড়ীদের বাঙালী বিদ্বেষী করতে সক্ষম হবে, যা পাহাড়ী-বাঙালীর মাঝে সৌহার্দ্যপূণ্য পরিবেশে বিঘ্নিত করবে।
আলোকিত রাঙ্গামাটিকে তিনি বলেন, প্রশাসন স্পীড বোট গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য এ অবরোধ চলবে। ১লা বৈশাখ উপলক্ষে পাহাড়ের বিঝু/সাংগ্রায়ের সময় কেন এ অবরোধ- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তা আমাদের বিবেচনায় আছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাঙামাটির লঞ্চ মালিক সমিতির অবরোধকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখছে সাধারণ লোকজন। ফারুক হোসেন লিখেন “কাপ্তাই হ্রদে স্পীড বোটে যাত্রী পরিবহনের প্রতিবাদে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবরোধ দিয়েছে রাঙামাটির লঞ্চ মালিক সমিতি। বিষয়টি অত্যন্ত অযৌক্তিক, দুঃখজনক, হাস্যকর ও খামখেয়ালী ছাড়া আর কিছু নয়।
আরে ভাই হ্রদে যাতায়াত করা মানুষকে আর কত কাল জিম্মী করে রাখবেন? তেলের দাম লিটারে ১ টাকা বাড়লে জনপ্রতি ভাড়া বৃদ্ধি করেন ২০ টাকা। ২ ঘন্টার রাস্তা তেল বাঁচানোর জন্য ৬ ঘন্টা সময় লাগান এতে মানুষের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও সময় বিনষ্ট হয়। এমনকি অনেক রোগী হাসপাতাল নেওয়ার আগেই মারা যায়। একই লঞ্চে হাঁস-মুরগীর, গরু-ছাগল ও মানুষ পরিবহন করে নিজেদের পকেট ভারি করেন ঠিকই কিন্তু দুর্গন্ধে যাত্রীরা সিটে বসে থাকতে পারেনা। মোটকথা কাপ্তাই হ্রদে বিকল্প কোনো পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় আপনারা দীর্ঘকাল ধরে যাচ্ছেতাই করে যাচ্ছেন।
নিজেদের ব্যবসা ছাড়া কখনো রাঙামাটির যাত্রীদেরকে মানুষ মনে হয়নি আপনাদের কাছে। গত কিছুদিন ধরে মানুষ যখন আপনাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বিকল্প যানবাহন হিসেবে স্পীডবোটে যাতায়াত শুরু করলো তখনই আপনাদের কলিজায় জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে গেছে।
বাস্তবতা হলো, স্পীড বোট সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকে মানুষ অনেক হয়রানি থেকে মুক্তি পেয়েছে। লংগদু, বাঘাইছড়ি, বরকলের মত দূরবর্তী এলাকা থেকেও জেলা সদরে গিয়ে অফিসিয়াল কাজ করে দিনে দিনে ঘরে ফিরে আসতে পারছে। এতে মানুষের সময় ও অর্থ দুটিই বেচে যাচ্ছে। জরুরী রোগী নিয়ে এক ঘন্টার মধ্যে জেলা সদরে পৌছাতে পারছে। এছাড়াও বিভিন্ন বিপদ-আপদে মানুষ দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌছে যাচ্ছে।
সাধারণ মানুষের এত এত সুবিধা আপনারা নিজেদের হীন সার্থে বন্ধ করে দিতে চান? মানুষকে জিম্মি করে আর কত কাল বাণিজ্য করবেন? প্রযুক্তি, আধুনিকতা ও কালের স্রোতকে কখনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠির সার্থ দিয়ে জিম্মি করে রাখা যায়না। আমার বিশ্বাস যত চেষ্টাই করেন আপনারা রাঙামাটির মানুষের এই মৌলিক চাহিদাকে ঠেকাতে পারবেন না। কারণ এটা সময়ের দাবি। পারলে নিজেদের পরিবহনকে আধুনিক ও যুগপোযোগী করে যাত্রীদের মন জয়ের প্রতিযোগিতা করে ব্যবসা করুন।
তাহলেই রাঙামাটির মানুষ আপনাদের অবরোধ মেনে নিবে। অন্যথায় পাবলিকের গণধোলাই খাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছেনা।
সর্বমহলের প্রশ্ন কে এই মইনুদ্দীন সেলিম! তার শিকড়ের উৎস কোথায়? কোন সাহসে সে পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে? প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, কেন?
বাংলাদেশ সময়: ১০:১৩:২৯ ২৫১ বার পঠিত |