চরফ্যাশনে ঘুমাচ্ছেন কর্তারা ॥ মেঘনায় মা ইলিশ নিধন উৎসবে জেলেরা

প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » চরফ্যাশনে ঘুমাচ্ছেন কর্তারা ॥ মেঘনায় মা ইলিশ নিধন উৎসবে জেলেরা
বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৭



---চরফ্যাশন অফিস,ভোলা বানী ॥
ভোলার চরফ্যাশনের মেঘনায় দিনে আড়ালে আর রাতে উৎসবমুখর পরিবেশে মা ইলিশ শিকার করা হচ্ছে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্ধারিত হারে ঘুষ পরিশোধ করে রাতে মাছ শিকারের ‘অনুমতি’ নিয়েছেন বলে জেলেরা জানিয়েছেন। রাতের শেষভাগে স্বল্প সময়ের জন্য মেঘনা পাড়ের  জমে উঠা মাছঘাট গুলোতে হানাদিয়ে পুলিশের লোকজনও  জেলেদের  শিকার করা মাছে ভাগ বসাচ্ছে। গত রবিবার দিবাগত রাত ১০ টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত  মেঘনার বেতুয়া,  নতুন স্লুইজঘাট, সেন্টারের ঘাট এবং ডাকতারের ঘাট এলাকায় সরেজমিনে অনুসন্ধানে মা ইলিশ শিকার এবং বেচা-বিক্রির উৎসব দেখাগেছে। যদিও এসময় মেঘনা নদী বা সংলগ্ন ঘাটগুলোতে প্রশাসনের কোন লোকজনের উপস্থিতি দেখা যায়নি।
জানাযায়, চরফ্যাশনে প্রশাসনের কর্মকর্তারা মেঘনার ঘাটেঘাটে দালালদের মাধ্যমে জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে  নিষিদ্ধ সময়ে মাছ শিকারের  ‘অনুমতি’ দিয়েছে। এজন্য রাতের মেঘনায় মা ইলিশ শিকারের উৎসব চলছে। এমন খবরের ভিত্তিতে রবিবার রাত ১০টার পর  স্থানীয় সংবাদকর্মীদের  একটি দল মেঘনার বেতুয়া , নতুন স্লুইজ, সেন্টারেরঘাট এবং ডাকতারের ঘাট এলাকায় অবস্থান নেয়। মধ্যরাতে জাল ফেলার সময় হলে জেলেরা জাল নৌকা নিয়ে মেঘনায় নেমে যায়। রাত ৩টার পর থেকে জেলেরা নৌকাভর্তি মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরতে থাকে। কিন্ত সংবাদকর্মীদের ‘অপ্রত্যাশিত’ উপস্থিতির খবর পেয়ে জেলেরা ঘাট ছেড়ে দ্রুত অন্যত্র চলে যেতে থাকে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি অবহিত করার জন্য চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমীনুল ইসলাম, কোস্টগার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার এবং উপজেলা মৎস্যসম্পদক কর্মকর্তা পলাশ হালদারকে ফোন দেয়া হয়। কিন্ত তারা কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেননি। ফলে সংবাদকর্মীরা ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাং সেলিম উদ্দিনকে  বিষয়টি অবহিত করেন। জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবহিত করতে বলেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেঘনায় অভিযানিক দল মোতায়েন আছে বলে সংবাদকর্মীদের জানান। কিন্ত এমন কোন দল মেঘনায় নেই বলে সংবাদকর্মীদের তরফ থেকে জানানোর পর নির্বাহী অফিসার বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন। রাত ৪টা পর্যন্ত প্রশাসনের কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে মেঘনায় দেখা যায়নি। রাত ৩টার  কিছুপর  নুতন স্লুইজঘাটে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার মাছ নিয়ে ঘাটে আসে। কিন্ত সংবাদকর্মীদের দেখে ট্রলার মালিক বাকের,মাঝি জামালসহ ৬ জেলে ট্রলার এবং জাল-মাছ ফেলে পালিয়ে যায়। একই সময় ডাকতারের ঘাটে মাছ নিয়ে আসে মান্নান মাঝির ট্রলার। সংবাদকর্মীরা মাছসহ মাঝি মান্নানকে ঘিরে ধরলে শাহাবুদ্দিন ছায়েদসহ অপর ২ জেলে পালিয়ে যায়। সংবাদকর্মীদের উপস্থিতির খবর ছড়িয়ে পরলে ঘাটে ফেরার জন্য অপেক্ষমান ট্রলারগুলোকে মাঝ নদীতে নোঙ্গর ফেলে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। দু’ ঘাটে আটক দু’টি ট্রলার এবং জাল-মাছসহ নদীতে ভাসমান ট্রলারগুলো জব্দ করতে প্রশাসনের লোকজনের কোন সহযোগিতা মেলেনি। তবে রাত ৪টার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিদের্শে একজন সহকারী সাব ইন্সপেক্টর এবং একজন অনসার সদস্য নতুন স্লুইজঘাটে পৌছে জেলেদের ফেলে যাওয়া ট্রলার জাল এবং মাছ জব্দ করেন।
রাতভর সংবাদকর্মীদের অনুসন্ধান কালে  তালতলা ঘাটের জেলে আব্দুল মান্নান জানান, ঘাটের দালাল কুদ্দুস এবং ছায়েদ প্রশাসনকে ম্যানেজ করার জন্য জেলেদের থেকে টাকা নিয়েছে। যেসব জেলেরা টাকা দিয়েছে প্রত্যেক রাতে কেবল সেই সব জেলেরা রাতের মেঘনায়  মাছ ধরতে পারছে। ডাকতার ঘাটের জেলে নুর হোসেন জানান-রাতের মেঘনায় শিকার করা মাছের একটা অংশ প্রতি রাতে দালালদের থেকে পুলিশ বুঝে নিচ্ছে। পুলিশের অংশ বাদ দিয়ে বাকি সব মাছ দালাল কুদ্দুস এবং ছায়েদ ৫ হাজার টাকা পোন দরে জেলেদের থেকে  কিনে নেয়। পরে এই মাছ দালালরা সাড়ে ৭ হাজার টাকা পোন দরে বাছাইকৃত ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে। ক্রেতাদের একটা অংশ চরফ্যাশন বাজারের মাছ ব্যবসায়ী। যারা এসব মাছ বাড়িতে বাড়িতে ফেরি করে বিক্রি করছে।
জেলেদের অভিযোগ এবং রাতে মেঘনায় মা ইলিশ শিকারের উৎসব প্রসঙ্গে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ হালদার জানান-রবিবার রাতে মৎস্য বিভাগের একটি দল তেতুলিয়া নদীতে অভিযানে ছিল। মেঘনায় অভিযানের কথা ছিল কোস্টগার্ডের। কিন্ত কোস্টগার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার নিজের নাম বলতে অস্বীকার করে বলেছেন- ওই রাতে মেঘনায় কোস্টগার্ডের অভিযানে থাকার কথা সঠিক নয়। কোস্টগার্ড ওই রাতে তেতুলিয়া নদীর  মানিকার ঠোডা এলাকায় অভিযানে ছিল।
জেলেদের শিকার করা মাছে পুলিশের ভাগ বসানোর বিষয় সম্পর্কে চরফ্যাশন থানার অফিসার ইনচার্জ ম. এনামুল হক জানান- ঘাট থেকে পুলিশের মাছ সংগ্রহের বিষয়টি তার জানা নেই। পুলিশের কোন লোক এমন অপকর্ম করলে তার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যকে বহন করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০:২৯:৩৯   ১৯৬ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

চরফ্যাশন’র আরও খবর


চরফ্যাসনে হিটস্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু
চরফ্যাশনে স্বামীর প্রহার থেকে স্ত্রীকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত-৩
চরফ্যাশনে ঈদের আগে পাকা ঘর পেলেন ভূমিহীন ৩৭০ পরিবার
চরফ্যাশনে ২০ হাজার প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ
নানা বাড়িতে এসে পানিতে ডুবে দুই খালাতো ভাইয়ের মৃত্যু
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চরফ্যাশনে যাকাত ফান্ডের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চরফ্যাশনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত
চরফ্যাশনে তরমুজের বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে হাসি
অভয়াশ্রমে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় দুর্দশায় জেলেরা
চরফ্যাশনে বাবার লাশ দাফনে সন্তানদের আপত্তি নির্ধারিত সময়ে জানাজা হয়নি, সমঝোতার চেষ্টা

আর্কাইভ