সাহসী এবং সংগ্রামী নেতা এডভোকেট লায়েকুজ্জামান মোল্লাকে যেমন দেখেছি

প্রথম পাতা » ভোলার আইন-আদালত » সাহসী এবং সংগ্রামী নেতা এডভোকেট লায়েকুজ্জামান মোল্লাকে যেমন দেখেছি
সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৭



 

---

খলিল উদ্দিন ফরিদ, ভোলাবাণী: সৃষ্টির সুচনা লগ্ন থেকেই কিছু মানুষ তাদের নিজ স্পৃহা,কর্ম দক্ষতা, আদর্শ দ্বারা সমাজে মানুষের উপকার করে আসছেন তারই ধারাবাহিকতায় আজ এমন একজন আলোকিত মানুষের জীবন নিয়ে পাঠকরে সামনে উপস্থিত হয়েছি

এডভোকেট লায়েকুজ্জামান মোল্লা

প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক “বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ”। তার স্নেহ দ্বারা লালিত “বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ”

জন্ম, বংশ পরিচয় ও শৈশবঃ
এডভোকেট লায়েকুজ্জামান মোল্লা ১৯৪৭ সালের ২০ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানাধীন ওড়াকান্দি ইউনিয়নের খাগড়াবাড়িয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার (মোল্লা পরিবারে) জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আব্দুর রউফ মোল্লা ছিলেন একজন স্থানীয় জন-প্রতিনিধি এবং সমাজসেবক। জমিদার পরিবারে জন্ম নেয়া মা সবুরন নেছা ছিলেন সমাজসেবী, তিনি নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন “সবুরন নেছা হাইস্কুল” এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি। নয় সন্তানের মধ্যে লায়েকুজ্জামান মোল্লা হলেন ২য়।

শিক্ষা জীবনঃ
শৈশবে দুরন্তপনার মধ্যে বেড়ে ওঠা লায়েকুজ্জামান পড়াশোনা শুরু করেন ওড়াকান্দি মিড (মিশনারি) হাই স্কুলে। দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি প্রথম বারের মত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে আসেন (সে গল্প অন্যদিন তুলে ধরার ইচ্ছা আছে)। তিনি ওড়াকান্দি মিড (মিশনারি) হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। কলেজ জীবনের প্রথমে তিনি ভর্তি হন রামদিয়া শ্রী কৃষ্ণ কলেজে, পরবর্তীতে ভর্তি হন বি.এল কলেজে এবং সর্বশেষ রাজেন্দ্র কলেজে থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত, রাজনীতির সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল থেকে দর্শন, লাইব্রেরী সায়েন্স এবং অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল এল.বি. ডিগ্রি লাভ করেন।

রাজনৈতিক জীবনঃ
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সময়কালীন লায়েকুজ্জামান থাকতেন ইকবাল হলে (বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল)। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগমন উপলক্ষে আগের দিন থেকেই লায়েকুজ্জামানের নেতৃত্বে প্রায় ৪০০-৪৫০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছিল। কিন্তু ১৫ আগস্ট ভোরে তাঁরা জানতে পারলেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, এ খবরে উপস্থিত সকলে দিকভ্রান্ত ও হতাশ হয়ে পড়েন। এগিয়ে আসেন লায়েকুজ্জামান, দিক নির্দেশনার জন্য ছুটে যান সিনিয়র ছাত্র নেতাদের কাছে কিন্তু আশাহত হন তাদের অসহযোগিতায় (সেসব কথা পরে কখনো তুলে ধরা হবে)। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং পদার্থ বিজ্ঞানী বোস অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী লায়েকুজ্জামানকে আন্তরিক ভাবে সহযোগিতা করেন। দিকভ্রান্ত ও হতাশ ছাত্রদের দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য উঠে দাঁড়ান লায়েকুজ্জামান, সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে লায়েকুজ্জামানের অগ্নি কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসে অগ্নি শ্লোগান “মুজিব হত্যার পরিণাম, বাংলা হবে ভিয়েতনাম”। সেসময় লায়েকুজ্জামানের সাহসিকতায় অনেকে তাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করেন। এসব ঘটনার ফলাফল স্বরূপ লায়েকুজ্জামান হল ছাড়তে বাধ্য হন, শুরু হয় তাঁর পলাতক জীবন কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি ছাত্রদের সংগঠিত করতে থাকেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ডঃ দুর্গাদাস ভট্টাচার্য তাঁর এক বক্তব্যে বলেন, লায়েকুজ্জামান তখন শুধু ছাত্রদের নয়, শিক্ষকদেরও সংগঠিত করেছিলেন।

আইন পেশা ও সাংগঠনিক জীবনঃ
এডভোকেট লায়েকুজ্জামান মোল্লা ১৯৭৯ সালে ঢাকা জজ কোর্টে আইন পেশা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইন পেশায় যুক্ত হন। ৩৯ বছরে তিনি নিজেকে বাংলাদেশের অন্যতম সফল আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ছাত্র জীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে যখন রাজনীতি নিষিদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ তখন পদার্থ বিজ্ঞানী বোস অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরীর নেতৃত্বে লায়েকুজ্জামান সহ অন্যান্যরা মিলে গড়ে তোলেন “বঙ্গবন্ধু পরিষদ”।

১৯৭৯ সালে লায়েকুজ্জামান মোল্লা ও অন্যান্য আইনজীবীগণ প্রথমবারের মত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা এবং যিয়ারত করতে যান কিন্তু পাহারায় থাকা সেনা সদস্যরা তাঁদেরকে বাধা প্রদান করে। তখন লায়েকুজ্জামান বলে উঠলেন, “আজকে এখানে আমাদের আইনজীবীদের ফুল দিতে দেয়া হচ্ছেনা কিন্তু একদিন এখানে শুধু বাংলাদেশ নয় সারা পৃথিবী থেকে মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে আসবে”। একথা শুনে সেনা সদস্যরা তাঁদেরকে শ্রদ্ধা জানাতে এবং কবর যিয়ারত করতে দেন।

বঙ্গবন্ধু প্রাণ এডভোকেট লায়েকুজ্জামান মোল্লা আইন অঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অভাববোধ করতেন প্রতিনিয়ত, সেই বোধ থেকেই ১৯৯৬ সালে গড়ে তোলেন “বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ”। তিনি উক্ত সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। “বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ” বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এবং সারাদেশের জজ কোর্ট সমূহ থেকে শুরু করে আইন অঙ্গনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অন্যতম বৃহৎ আইনজীবীদের শক্তিশালী সংগঠন। যে সংগঠন প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচার সাধারণ জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে।

একটি ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয় বলে মনে হচ্ছে, আওয়ামীলীগ যখন বিরোধী দলে ছিল তখন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অফিস কক্ষ থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ফেলা হয়েছিল। সেসময় আওয়ামী আইনজীবীদের অনেকেই বিষয়টি জেনেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ বা প্রতিবাদ করেননি। কিন্তু ব্যতিক্রম একজন, এডভোকেট লায়েকুজ্জামান মোল্লা সেদিন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, প্রতিবাদ করেছিলেন নিজের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে। সেদিনই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সুপ্রিম কোর্ট অফিস কক্ষে পুনঃস্থাপন করেছিলেন। যা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অঙ্গীকারের, বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালবাসার এবং সাহসিকতার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।

“বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ” –এর ধারাবাহিকতায় আইনের ছাত্রদের সংগঠন হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় এডভোকেট লায়েকুজ্জামান মোল্লার দিক নির্দেশনায় গড়ে তোলা হয় “বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ”। উল্লেখ্য ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করায় বঙ্গবন্ধুকে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং এইদিনটিকে স্মরণ রেখেই “বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ” ২৯ মার্চ, ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

আজীবন সংগঠন প্রিয় এবং আদর্শ নেতা এডভোকেট লায়েকুজ্জামান মোল্লা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায়, চেষ্টা করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় সাধারণ জনগণের জন্য আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য। “বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ” এবং “বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ” এর একমাত্র লক্ষ্য জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আইন অঙ্গন তথা সারাদেশে শক্তিশালী করা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় এবং এডভোকেট লায়েকুজ্জামান মোল্লার দিকনির্দেশনায় “বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ” একটি শক্তিশালী আইনের ছাত্রদের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলায় আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবেই এই প্রত্যাশায়।

সুত্র- মশিউর রহমান মোল্লা

সাধারন সম্পাদক

বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ

কেন্দীয় কমিটি

বাংলাদেশ সময়: ১০:০৮:৩৫   ১৪৫২ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ভোলার আইন-আদালত’র আরও খবর


চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত
ভোলায় ডিবির অভিযানে অস্ত্রসহ ৩ দস্যু আটক, অপহৃতরা উদ্ধার
ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপত্তায়ভোলায় ঈদে যাত্রীদের ভোগান্তি লাগবে পুলিশের ফ্রি বাস সার্ভিস
ভোলায় জেলায় ২য় বারের মত শ্রেষ্ঠ ওসি লালমোহন থানার এসএম মাহবুব
দক্ষিণ আইচায় ২৫ বছর করে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি গ্রেফতার
ভোলায় বৃদ্ধ হত্যা মামলার মূল আসামি গ্রেফতার
পুলিশি সেবা ভোলার জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হবে: এসপি মাহিদুজ্জামান
ইলিশ মাছ রান্না না করায় বোরহানউদ্দিনে মাকে কুপিয়ে হত্যা করল ছেলে
ভোলায় ১৬৫ টাকায় পুলিশের চাকরি
ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে ৫ কেজি গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ

আর্কাইভ