আজ তোফায়েল আহমেদের জন্মদিন

প্রথম পাতা » ভোলার রাজনীতি » আজ তোফায়েল আহমেদের জন্মদিন
রবিবার, ২২ অক্টোবর ২০১৭



---ভোলাবাণী ডেক্স।।বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী জননেতা তোফায়েল আহমেদ ১৯৪৩ সালের ২২ অক্টোবর ভোলার কোড়ালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৌলভী আজহার আলী ও মাতা ফাতেমা বেগম ছিলেন এলাকার সম্মানিত ব্যক্তি। ১৯৬৪ সালে ধনিয়ার আলহাজ মফিজুল হক তালুকদারের জ্যেষ্ঠ কন্যা আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে তিনি পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তারা এক কন্যা সন্তানের জনক-জননী।
জননেতা তোফায়েল আহমেদ ভোলা সরকারি হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে আইএসসি এবং বিএসসি পাহ করেন যথাক্রমে ১৯৬২ এবং ১৯৬৪ সালে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে এমএসসি পাস করেন। কলেজ জীবন থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক পদে এবং কলেজের হোস্টেল অশ্বিনী কুমার হলের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৬২ সনে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ১৯৬৪ সালে ইকবাল (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) হল ছাত্র-সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক, ১৯৬৫ সালে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহ-সভাপতি এবং ১৯৬৬-৬৭ সালে ইকবাল হল ছাত্র-সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ডাকসু’র ভিপির দায়িত্ব পালনকালে চারটি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে বঙ্গবন্ধু মুজিব প্রদত্ত ৬ দফাকে হুবহু ১১ দফায় অন্তর্ভুক্ত করে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন। উল্লেখ্য যে, ১৯৬৬-এর ৮ মে থেকে ১৯৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৩৩ মাস কারাগারে আটক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র সব রাজবন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তিদানে তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারা বাংলায় তৃণমূল পর্যন্ত তুমুল গণআন্দোলন গড়ে তোলে এবং ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ বঙ্গবন্ধু মুজিবসহ সব রাজবন্দিকে মুক্তিদানে স্বৈরশাসককে বাধ্য করেন। আর ’৬৯-এর ২৫ মার্চের মধ্যে তথাকথিত প্রবল পরাক্রমশালী লৌহমানব আইয়ুব খানকে পদত্যাগে বাধ্য করে গৌরবের যে ইতিহাস সৃষ্টি করেন তা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের ড্রেস রিহার্সেল। ১৯৬৯-এ তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০-এর ৭ জুন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। বস্তুত এরপর সংগ্রামী জননেতা তোফায়েল আহমেদ জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের একজন বলিষ্ঠ সংগঠকে পরিণত হন।
স্বাধীনতা যুদ্ধ পূর্ব ছাত্র ও গণআন্দোলনে সফল নেতৃত্ব প্রদান করায় তোফায়েল আহমেদ দেশবাসীর অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করেন। আবাসিক হল ও ডাকসুর ভিপি থাকাকালেই তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সাহচর্যে আসেন। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে ভোলার দৌলত খাঁ-তজুমদ্দিন-মনপুরা আসন থেকে মাত্র ২৭ বছর বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন ১৯৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ‘মুজিব বাহিনী’র অঞ্চল ভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার অধিনায়কের অন্যতম। বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া ও পাবনা সমন্বয়ে গঠিত মুজিব বাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার সংগ্রামে তোফায়েল আহমেদের ভূমিকা অতুলনীয়। ১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১০ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগরে ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’ প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক এবং ১৯৭২-এ বাংলাদেশ গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত ও বলবৎকৃত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ‘সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া’য় তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭২-এর ১৪ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় তাকে রাজনৈতিক সচিব নিয়োগ করেন। ১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এ পদে বহাল ছিলেন। ১৯৭৩-এ নিজ জেলা ভোলা থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫-এ দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ঘোষণার পর প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী নিযুক্ত হন। তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সফরে তার সফর সঙ্গী হন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, অটোয়াতে কমনওয়েলথ সম্মেলন, লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলন, আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন এবং জ্যামাইকায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগদান। এছাড়াও যুগোশ্লাভিয়া এবং ইরাক সফর করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনকের নির্মম হত্যাকা-ের পর একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর তোফায়েল আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘ ৩৩ মাস তিনি কারান্তরালে ছিলেন। ১৯৭৮-এ কুষ্টিয়া কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন তিনি সাফল্যের সঙ্গে এই পদ অলঙ্কৃত করে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৮৬, ’৯১ এবং ’৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত হন। ’৯১ এবং ’৯৬-এর নির্বাচনে ভোলা-১ ও ভোলা-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬-এ অনুষ্ঠিত নির্বাচনের গণরায়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর মহান জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে জননেত্রী শেখ হাসিনার জাতীয় ঐকমত্যের সরকারে তিনি শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। অর্পিত দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে যথাযথভাবে পালন করে দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন। মন্ত্রী হিসেবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সম্মেলনে যোগদান করে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পণ্য উন্নত দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের অঙ্গীকার আদায়ে সফল নেতৃত্ব প্রদান করেন।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রত্যাবর্তনের আন্দোলনে তোফায়েল আহমেদের অবদান উল্লেখ করার মতো। যে কারণে তিনি এরশাদ আমলে চারবার এবং ১৯৯৫ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যে আন্দোলন সংগঠিত হয় তাতে খালেদা জিয়ার আমলেও দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন। এছাড়াও ২০০২-এ খালেদা-নিজামী জোট সরকারের শাসনামলেও তিনি কারাবন্দি হন এবং তাকে তার রাজনৈতিক জীবনে সর্বমোট সাতবার কারাগারে অন্তরীণ হতে হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সাবেক সদস্য এবং সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে রাজনৈতিক জীবনে ব্যাপক সংগ্রাম ও বিস্তর বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। আজও তিনি তার অব্যাহত সংগ্রামী জীবনে সততা, মেধা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও বাগ্মিতা দিয়ে সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে জনকলাণমূলক রাজনীতির অভিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন। ১৯৭৫ উত্তরকালে বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে দল ও মতাদর্শ পরিবর্তনের চরিত্র অনেকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হলেও তোফায়েল আহমেদ কখনোই প্রলোভন ও হুমকির সামনে কোনদিন মাথা নত করেননি। এমনকি ১/১১-এর পরে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও স্ত্রী-কন্যাসহ মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রকার প্রলোভন বা হুমকির কাছে নতি স্বীকার করেননি। জেল-জুলুম-হুলিয়া তার রাজনৈতিক জীবনের প্রধান অলঙ্কার। ছাত্রাবস্থা থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনায় তিনি সততই অবিচল থেকেছেন। প্রায় পঞ্চাশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে একই আদর্শে ও দলে ধারাবাহিকভাবে থেকে ‘রাজনৈতিক ইন্টিগ্রিটি’ বজায় রাখার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। এলাকার রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, মসজিদ-মন্দির ইত্যাদি শিক্ষা, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে পূর্বেকার সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছেন এবং অনাগত দিনে গোটা ভোলা জেলাসহ স্বাধীন বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করার মহতী স্বপ্ন দেখেন তিনি।
বিগত ১ অক্টোবর ২০০১-এর নির্বাচনে চারদলীয় জোটের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকা-ের ফলে তার অনুকূলে প্রাপ্ত নির্বাচনী রায় ছিনতাই হয়। এ নির্বাচনের পর দেশব্যাপী খালেদা-নিজামীর সরকার সংখ্যালঘু জনসাধারণসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর প্রচ- অত্যাচার-নির্যাতন করে। এর বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হন এবং চারদলীয় জোট ও ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিরোধী আন্দোলনে গুরুদায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুগোশ্লাভিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ ইয়েমেন, ইরাক, মিসর, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, পশ্চিম জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। ২০০৮-এর ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোলা-২ আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ২০১৪’র ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজনীতি ছাড়াও ব্যক্তিগত চরিত্র ও আচরণে অমায়িক এই সংগ্রামী রাজনীতিকের পরোপকার, বদান্যতা, সাহিত্য-সঙ্গীত ও সুকুমার শিল্পের প্রতি বিশেষ আগ্রহ তার মনন ও চেতনাকে মহিমান্বিত করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ৯:২৪:৪৯   ৩১৪ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ভোলার রাজনীতি’র আরও খবর


অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান ভোলাবাসীকে পবিত্র ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মজনু মোল্লা
চরফ্যাশন মনপুরাবাসীকে পবিত্র ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন এমপি জ্যাকব ॥
এমপি জ্যাকবের পক্ষে পবিত্র ঈদ উল ফিতরের উপহার মনপুরায় দুঃস্থ মহিলাদের মাঝে শাড়ী বিতরন ॥
ভোলা ইসলামী আন্দোলনের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল।
২৬শে মার্চ পালন উপলক্ষে মনপুরায় আওয়ামীলীগের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত ॥
ভোলা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ভোটরদের জানান দিলেন দুই চেয়াম্যান প্রার্থী
শিবপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী পথসভায়আমি আপনাদের ভাগ্য উন্নয়নে সবসময় পাশে থাকতে চাই- মোহাম্মদ ইউনুস
প্রতীক দেওয়া, না দেওয়া দলের এখতিয়ার ‘নৌকা ছাড়াই’ স্থানীয় সরকার নির্বাচন,
ভোলার রাজনীতিতে জনপ্রিয় ও সফল ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইউনুছ
ভোলায় উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহন সম্পন্ন

আর্কাইভ