গ্রাম গঞ্জে বিলপ্তির পথে উপকারী প্রাণী গুইসাপ

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » গ্রাম গঞ্জে বিলপ্তির পথে উপকারী প্রাণী গুইসাপ
বুধবার, ৯ আগস্ট ২০১৭



---মো:আমজাদ হোসেন।।ভোলাবাণী।।লালমোহন প্রতিনিধি:গুইসাপ সরীসৃপ শ্রেণির প্রাণী৷বাংলাদেশের সর্বত্রই এদের দেখা যায়। বিশেষ করে বনজঙ্গল, ঝোপঝাড, বাস্তুবন ও কৃষি জমিতে দেখা যায়৷ কোনো একসময় এদের প্রায়শই দেখা যেত৷ এখন তেমন একটা দেখা যায়না৷আজকাল নিরীহ উপকারী এই প্রাণীটি বিভিন্ন কারণে আমাদের চারপাশের পরিবেশ থেকে বিলপ্তির পথে।দেশের অনেক প্রাণী গবেষক এবং প্রাণী বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্ক রয়েছে এমন বেশিরভাগ ব্যক্তিই মনে করছেন মানুষ দ্বারাই এই প্রাণীটি বিলপ্তির পথে।এ প্রসঙ্গে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মতিয়ার রহমান স্যার বলেন নিরীহ এই প্রাণীটি বিলপ্তির জন্য আমি মনে করি মানুষ ই দায়ী।কারণ গুইসাপ আমাদের ক্ষতি তেমন একটা করেনা তবে বেশিরভাগই উপকার করে।পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য এই প্রাণীটির অবদান সবচেয়ে বেশি।এটা আমাদের চারপাশের বিষধর সাপ খেয়ে এদের আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করে।তিনি আরও বলেন কিছু অসাধু ব্যক্তি এর চামড়া পাচার করার কাজে লিপ্ত।এ নিরীহ প্রাণীকে বিলপ্তির হাত থেকে রক্ষার দায়িত্ব শুধু প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের একার নই আমাদের সকলের।বর্তমানে গুইসাপের তিনটি প্রজাতি কোনোরকমে টিকে আছে৷এগুলো হল কালো গুইসাপ,সোনা গুইসাপ ও রামগদি গুইসাপ৷কালো গুইসাপ লোকালয়ে বসতবাড়রি আশেপাশে বেশি থাকে৷বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Chordata
শ্রেণী: Reptilia
বর্গ: Squamata
উপবর্গ: Sauria/Lacertilia
পরিবার: Varanidae
গণ: Varanus
প্রজাতি: V. salvator
দ্বিপদী নাম
Varanus salvator
(Laurenti, 1768)।
বড় গুইসাপ বা রামগদি, (ইংরেজি: Water Monitor) (বৈজ্ঞানিক নাম: Varanus salvator) হলো এক প্রকার বড় জাতের গিরগিটি।সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ ফুটের মতো লম্বা হতে পারে এরা। তবে গড় দৈর্ঘ্য ৪ ফুট ১১ ইঞ্চির মতো। ওজন ২৫ কেজির মতো হতে পারে। তবে বেশির ভাগেরি ওজন এর অর্ধেক।
বড় গুই বা রামগাদি দেখতে গাঢ় বাদামি বা কালচে, তাতে হলুদ রঙের রিং বিদ্যমান। পা ও নখ লম্বাটে। লেজ চ্যাপ্টা ও শিরযুক্ত। এরা দ্রুত গাছে উঠতে পারে। সাঁতরে খাল-বিল-পুকুর সহজেই পাড়ি দিতে পারে।বড় গুইসাপ দেখতে পাওয়া যায় ভারত, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, ইন্দোচীনে।এরা ভালো সাতারু।পৃথিবীতে কমোডো ড্রাগন হচ্ছে সবচেয়ে বড় গুইসাপ প্রজাতি। কিছু লোক বিচিত্র এই প্রাণী ও এদের বসত এলাকা বিলীন করতে উঠে পড়ে লেগেছে।তারা চামড়ার জন্য এদের ধরতে আসে বাংলাদেশের ১৯৭৪ [২] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।সোনা গুইসাপ চোখে পড়ে হাওড় ও বিলের আশেপাশে৷ গুইসাপ মূলত গর্তবাসী প্রাণী৷ মাটির গর্ত, উইঢিবি, গাছের কোটর ও ফাটলে এরা বাস করে৷ পানিতেও দেখা যায়৷ এরা সাঁতার কাটতে ও গাছে উঠতে পারে৷ বিষধর সাপ ও ক্ষতিকর পোকামাকড় এদের প্রিয় খাদ্য। অন্যান্য খাদ্যের মধ্যে রয়েছে- এদের প্রধান খাদ্য কাঁকড়া,শামুক, ইঁদুর,পচা-গলা প্রাণীদেহ ও উচ্ছিষ্ট। বড় গুইসাপ মাছ, সাপ, ব্যাঙ ও পাখি খায়। তারা ছোট কুমির, কুমিরের ডিম ও কচ্ছপও খায়।ছোটসাপ, ব্যাঙ, ইদুর, মাছ, কেঁচো, শামুক, কাঁকড়া ইত্যাদি৷ সুযোগ পেলে হাঁস-মুরগির ছানা ও ডিমে হানা দেয়৷গুইসাপ খুবই নিরীহ প্রাণী৷ মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়৷ তারা অতি উপকারী প্রাণী৷ বিষধর সাপ ও ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে আমাদের উপকার করে৷ ক্ষতিকর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করে৷ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুইসাপের ভূমিকা অতূলনীয়৷ এরা খাদ্যশৃঙ্খলে বিশেষ ভূমিকা রাখে৷এদের সংখ্যা হ্রাস পেলে প্রধান খাদ্য পোকামাকড়রে সংখ্যা বেড়ে যাবে, ইদুরের উৎপাত বেড়ে যাবে, অনুকূল পরিবেশ হবে বিষাক্ত সাপের৷যা পরিবেশ ও মানুষের জন্য মোটেও সুখকর নয়৷ফসলের জমিতে পোকামাকড় দমনের জন্য ব্যবহার করা হয় উচ্চমাত্রার কীটনাশক, ফলে অনেক উপকারী অনুজীব ধ্বংশ হয়ে যায়ও মাটির গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়৷ফসলে সৃষ্টি হয় নিম্নমাত্রার বিষক্রিয়া যা মানুষকে ধীরে ধীরে ক্ষতি করে৷অন্যদিকে গুইসাপ ও ব্যাঙ এসব কীটনাশকের চেয়ে অনে বেশি কাজ করে কোনোরূপ ক্ষতি ছাড়া৷এরা মৃত জীবজন্তু খেয়ে পরিবেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে৷তাদের অর্থনৈতিক গুরুত্বও অনেক৷এদের চামড়া অতি মূল্যবান৷ এই উপকারী প্রাণীটি আজ বিলুপ্তির পথে৷এদের অনেক প্রজাতি হারিয়ে গেছে৷বর্তমানে যে তিনটি টিকে আছে হয়তো কিছুদিন পর আর থাকবেনা৷এদের বিলুপ্তির কারণ- চোরাচালান,অতিমাত্রার রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার, বনজঙ্গল ধ্বংশ ও হাওড়া বিলের পরিবেশ বিনষ্টকরা৷এদের অধিকাংশ মারা যায় মানুষের আক্রমনে৷খাবারের সন্ধানে যখন হানা দেয় হাঁস মুরগির ডিম ও ছানার দিকে,তখন লাঠি দিয়ে পিঠিয়ে মেরে ফেলা হয়৷ অনেক সময় লোহার তৈরী বিশেষ ফাদে শুটকি মাছ বা মৃত ছানা টোপ দিয়ে মারা হয়৷কোন কোন উপজাতি জনগোষ্টী খাদ্যের জন্য শিকার করে৷ এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে উপকারী প্রাণীটি৷গুইসাপ সংরক্ষণ করা অতি জরুরি৷ এদের শিকার ও পাঁচাররোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে৷ জনসচেতনতা সৃষ্টি করে অবাধ শিকার বন্ধ করতে হবে৷প্রয়োজনে টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় উপকারী প্রাণীদের রক্ষায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে৷প্রাণী সংরক্ষণবিরোধী বিজ্ঞাপন অনুমোদন দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷ সরকার, জনগন ও প্রাণী অধিকার সংরক্ষণে জড়তিদের যৌথ উদ্যোগেই সম্ভব প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা,সতেজ থাকা প্রকৃতি ও সুন্দরের মাঝে৷

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৮:২৫   ১৫৫৯ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন মুফতি মাও: মুজির উদ্দিন
চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি থাকলেও ভোলায় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
লালমোহনে জাগোনারী’র অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর ভোলায় মধ্যরাত থেকে মাছ শিকারে নামবেন জেলেরা
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে আরও ইউরোপীয় দেশ
তজুমদ্দিনে ৮৫৬টি গাছ কেটে রাস্তা চওড়া করার প্রস্তুতি সম্পন্ন ,স্থানীয়দের ক্ষোভ
ভোলায় ডিবির অভিযানে অস্ত্রসহ ৩ দস্যু আটক, অপহৃতরা উদ্ধার
গুজবে কেউ কান দেবেন নাঅটো চেয়ারম্যান হওয়ার দিন শেষ জনগনের ভোট লাগবে: মোহাম্মদ ইউনুছ
৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৪মনপুরায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ৫ জন ॥ মোট প্রার্থী ১১ জন
তজুমদ্দিনে আগুনে পুড়ে ১৩ দোকান ছাই পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতি ॥

আর্কাইভ