মিজান নয়ন।।ভোলাবাণী।। চরফ্যাশন ব্যুরো॥
চরফ্যাশন বাজারে অগ্নিকান্ডে ১৭ টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে নগদ ৩০ লাখ টাকাসহ ৩ কোটি টাকার ব্যবসায়ীক সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার ব্যবসায়ী সমিতি। গতকাল শনিবার ভোর পৌনে ৪টায় সদর রোডে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। হাছান টেইলার্সে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সুত্রপাত বলে ফায়ার সার্ভিস অফিস সুত্রে জানাগেছে। অগ্নিকান্ডের পর ফায়ার সার্ভিসের চরম ব্যর্থতায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি তদন্তে গতকালই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ফায়ার সার্ভিসের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) শামীম আহসান চৌধুরী । এসময় ভোলা জেলার উপ-সহকারী পরিচালক মো. বেল্লাল উদ্দিন তার সাথে ছিলেন।পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভোর পৌনে ৪টায় থানা রোডের মাথায় সদর রোডের সাবেক স্টীল ব্রীজ সংলগ্ন মার্কেটে হঠাৎ আগুনের শিখা দেখা যায়। তখন স্থানীয় মসজিদগুলোতে ফযর নামাজের আযান চলছিল। অগ্নিকান্ড শুরুর অন্তত ৩০ মিনিট পর ফায়ার সাভিসের চরফ্যাশন স্টেশনের ২টি ইউনিয়ট ঘটনাস্থলে পৌছে। যার মধ্যে একটি ছিল ওয়াটার ট্যাংকি এবং অপর ইউনিটটি ছিল পাম্প মেশিন। দু’টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছলে ৩ মিনিটের মধ্যে ওয়াটার ট্যাংকির পানি ফুড়িয়ে যায় এবং এই ট্যাংকিতে পানি সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ওই ইউনিটটি আর কোন কাজে আসেনি। অপর দিকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পাম্প মেশিনটি চালু করা যায়নি। দু’টি ইউনিট অকেজো হয়ে পরলে আগুণের লেলিহান শিখায় জ্বলন্ত মার্কেটে ব্যবসায়ীদের আহাজারী আর উৎসুক মানুষের ভীরে ফায়ার কর্মীরা আতংকিত হয়ে গা-ঢাকা দেয়। ফায়ার সাভিসের তৎপরতা বন্ধ হয়ে গেলে সাধারন মানুষ আগুণের লেলিহান শিখার কাছে দৃশ্যত অসহায় হয়ে পরেন। এক ঘন্টা পর ভোর পৌনে ৫টায় ফায়ার সাভিসের লালমোহন ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছে প্রথম কার্যকর ভাবে অগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পরে ১৫ মিনিট পরপর বোরহান উদ্দিন ,তজুমদ্দিন এবং ভোলা সদর স্টেশন থেকে আরো ৪টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। কিন্তু ততক্ষণে অগ্নিকান্ড এলাকার সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান- অগ্নিকান্ড এলাকাটি চারপাশে প্রশস্ত খাল আর সড়ক বেষ্টিত ছিল। যার উত্তর পাশে থানা রোড, পূর্ব পাশে পৌর শৌচাগার রোড,পশ্চিম পাশে সদর রোড এবং দক্ষিণ পাশে রয়েছে পৌর খাল। চার পাশের সড়ক আর খালের বেষ্টনি থাকায় আগুন গোটা বাজারে ছড়িয়ে পরতে পারেনি। বেষ্টনির মধ্যে সবগুলো দোকান পুড়ে ছাই হয়ে আগুন নিভে যায়। তবে পরবর্তীতে আশপাশের উপজেলা থেকে ছুটে আসা ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো থানা রোডে ছড়িয়ে পড়া আগুণ নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হয়।
চরফ্যাশন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মনির উদ্দিন চাষী অভিযোগ করেন- চরফ্যাশন ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনে ২টি পাম্প মেশিন ছিল। কিন্ত ঘটনাস্থলে ১টি পাম্প মেশিন আনা হয়। ঘটনাস্থলে আসার পর ওই পাম্প মেশিনও চালু করা যায়নি। এই অভিযোগ স্বীকার করে ষ্টেশন অফিসার আব্দুর রশিদ (ভারপ্রাপ্ত) জানান- ১টি পাম্প মেশিন বিকল ছিল। বিকল ওই পাম্প মেশিন মেরামতের জন্য বরিশাল অফিসে ট্যাকনিশিয়ায় চাওয়া হয়েছিল। কিন্ত ট্যাকনেশিয়ান না আসায় তা মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ষ্টেশনের চালু থাকা একমাত্র পাম্প মেশিনটি দূর্ঘটনাস্থলে পৌছার পর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে ফায়ার কর্মীরা ঘটনাস্থলে অসহায় হয়ে পরেন। গতকাল ঘটনাস্থলে পরিদর্শন শেষে ফায়ার সাভিসের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক শামীম আহসান চৌধুরী এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের বলেছেন- ফায়ার সার্ভিসের যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪০:১৬ ৫০১ বার পঠিত |