ভোলায় আশঙ্কা জনক হারে বাড়ছে সাইবার ক্রাইম ॥ নেই নজড় দারি ॥ চাই সচেতনতা

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ভোলায় আশঙ্কা জনক হারে বাড়ছে সাইবার ক্রাইম ॥ নেই নজড় দারি ॥ চাই সচেতনতা
বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৭



---আদিল হোসেন তপু, ভোলাবাণী :
ছবি আপনার আইডি আপনার কিন্তু চালাচ্ছে আরেক জন। শুধু তাই নয় আপনার ফেইসবুক আইডি হেক করে আপনার আইডি দিয়ে বাজে ছবি থেকে শুরু করে অশ্লিল ভিডিও পোস্ট করা হচ্ছে । এমনকি আপনার আইডি দিয়ে আপনার বন্ধু থেকে শুরু করে আত্মীয় স্বজনদের বিভিন্ন বাজে ছবি বা ভিডিও ম্যাসেজ কিংবা টেক করার ঘটনা ঘটছে। এমন সাইবার ক্রাইম এর ঘটনা ভোলাতে আশঙ্কা জনক হারেই বেড়েই চলছে।
এর ফলে সামাজিক ভাবে তরুন-তরুনী থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পদস্ত কর্মকতা, রাজনীতিবিদ,ব্যাংকার, সাংবাদিক, নানা পেশার মানুষ এই ধরনের ঝুঁকি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
এই ঘটনায় বেশির ভাগই সামাজিক ও পারিবারিক ভাবে মেয়েরাই লাঞ্চনার শিকার হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রতি জেলায় সাইবার সাইবার ক্রাইম ট্রাইবুনাল গঠন করা,সাইবার ক্রাইম এর উপর সচেতনতা ও আইসিটি আইনের সঠিক ব্যাবহারই এই অপরাধ কমিয়ে আনতে পারে। আর আইন শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনী বলছে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে টিম গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ আসলে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

প্রযুুক্তির কল্যাণে সময়ের সাথে পাল্টেছে মানুষের জীবনযাত্রা। সেই সাথে পরিবর্তন এসেছে মানুষের যোগাযোগের মাধ্যমও। এই ধরনের যোগাযোগ সময়, শ্রম বাচাঁতে ও কাজের ক্ষেত্রে সুবিধা পেয়ে থাকলেও কিছু ঘটনার ফলে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে অনাকাঙিক্ষত বিভিন্ন খবর।
সময় ও প্রযুক্তির সাথেই যেন পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে অপরাধ জগৎতের নতুন সংস্করন সাইবার ক্রাইম।
বর্তমানে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমানে ছেলে-মেয়ে উভয়েই অনলাইনে সমান তালে চলছে। তবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের নানা রকম ঝুঁকি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়। শৈশব থেকেই আমাদের সমাজে মেয়েরা নানান বাধাঁ ও ঝুঁকি নিয়ে বেড়ে উঠছে তার ব্যতিক্রম নাই ভার্চুয়াল জগতেও। সেখানেও রয়েছে পদে পদে ঝুঁকি ও বিপদ। নিরাপদ ইন্টারনেট মেয়েদের ক্ষেত্রে সুলভ নয়। বাস্তব জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান করা গেলেও অনলাইনের সমস্যা সমাধানের তেমন বেশি সুযোগ নাই। সাইবার ক্রিমিনালরা অনলাইন মাধ্যমে মেয়েদের ফেইসবুক আইডি হেক, ছবি দিয়ে ভুয়া আইডি খুলে আপত্তিকর ছবি, ভিডিও পোস্ট করে মেয়েদের ব্লাক মেইল করা হচ্ছে। ফলে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয় মেয়েদেরকে।

এ নিয়ে সরজমিনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রোদেলা জানান, বর্তমান সময় ফেইসবুকে নারীরা বিভিন্ন ধরনের হেরেজম্যান্টের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে নারীদের বিভিন্ন ছবি ডাউন লোড করে সেই ছবি এডিটিং করে ফেইবুকে ভাইরাল করে দিচ্ছে। এমনকি অনেক সময় আইডি হেক করে ব্ল্যাকমেইল করে। তা না দিলে বাজে ছবি ছড়িয়ে দিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংস্কৃতিক শিল্পী বলেন, বর্তমানে আমার নামে ৩ টি আইডি ফেইবুকে ওপেন করা। আমার ছবি আমার রিয়েল আইডি থেকে নিয়ে এই আইডি গুলো গুলে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তুু এর থেকে পরিত্রান পাওয়ার কোন উপায় পাচ্ছিনা। কোথায় যাবো কার কাছে অভিয়োগ করবো জানা নেই। আইনশৃঙ্গলা বাহিনীকে যানালেও তারা কোন ব্যাবস্থা নিচ্ছেনা।
আরেক শিক্ষার্থী শ্রাবনী জানায়, প্রযুক্তির কল্যানে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরাই সবচেয়ে ঝুকিঁতে পরছে। মেয়েদের ছবি এডিটিং করে বৃকিতি করে ফেইসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছে । এতে করে ঐ মেয়েটি যখন রাস্তা ঘাটে বের হয় তখন ইভটিজিং এর মত ঘটনা ঘটে। তখন সেই মেয়েটি ও তারা পরিবার সামাজিক ভাবে হেও হচ্ছে। অনেক সময় এই ধরনরে ঘটনায় আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটছে। কিন্তুু আইন শৃঙ্গলা বাহিনীদের আমরা এইধরনের ঘটনায় তেমন কোন উদ্যোগ নিতে দেখছিনা।

আরেক শিক্ষার্থী ত্রপা হালদার জানায়, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমানে মেয়েরা ছেলেদের পাশাপাশি ফেইসবুক,টুইটার,ইমু, ইনেস্টাগ্রাম সহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যাবহার করছে। এর ফলে আমরাই এর ভিকটিম হচ্ছি। তাই আমি সবাইকে বলবো এই ধরনের সাইবার ক্রাইম এর বিরুদ্ধে সবাইকে মেয়েদের পাশে ধারানো উচিত।

এব্যাপারে ভোলার লেডিস ক্লাবের সাধারন সম্পাদিকা ও নারী নেত্রী খাদিজা আক্তার স্বপ্না জানায়, সাইবার ক্রাইম নারী ও শিশু নির্যাতনের নতুন একটি মাধ্যম। এর মাধ্যমে নারীরা নতুন করে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাই প্রতি জেলায় সাইবার সাইবার ক্রাইম ট্রাইবুনাল গঠন করার দাবী জানাই। এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও অপরাধ কমে আসবে।
সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করা বে-সরকারি সংগঠন জাগো নারীর ডিরেক্টর কমিউনিকেশন ডিউক ইবনে আমিন বলেন, প্রযুুক্তির আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষিত-দক্ষ অসচেতন ব্যবহারকারীর অভাবেই সাইবার ক্রাইমের প্রবনতা বাড়ছে। এছাড়া আইনের সঠিক প্রয়োগ ও বিচার না হওয়া, আইনের সীমাবদ্ধতা, আইন ও অপরাধ সম্পর্কে অজ্ঞতা সাইবার ক্রাইমের মূল কারণ ।
ভোলা বাড়ের আইনজীবী মো: মনিরুল ইসলাম বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৭ নং ধারা অনুযায়ী, ইন্টারনেটে কারও কোন ইচ্ছাকৃত কর্মকান্ডের দ্বারা কোন কম্পিউটার রিসোর্সের তথ্য বাতিল বিনাশ বা পরিবর্তন ঘটানো সাইবার ক্রাইম। এছাড়াও অন্যের মালিকানাধীন সার্ভার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কিংবা কোন ইন্টারনেট সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করাও এ ধরনের অপরাধ।
অনেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক কুরুচিপূর্ণ ও মান হানিকর বক্তব্য, ছবি, ভিডিও সম্প্রচার করে থাকে। এটা একটি বড় ধরনের অপরাধ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৭নং ধারায় এ ধরনের অশ্লীলতাকেও সাইবার ক্রাইমের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের আইনে এসব অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদন্ড ও অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস্ ডিফেন্ডার ফোরাম, ভোলা শাখার সভাপতি মোবাশ্বেল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার আমাদেরকে অনেক সফলতা ও সুফল দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির অপব্যবহার বেড়ে গেছে। যার কারনে আমরা প্রযুক্তির দ্বারা অনেক সময় মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে এই প্রযুক্তির ব্যবহারে নারী সমাজে তাদের অধিকার ভিশনভাবে লংঘিত হচ্ছে। অনেক সময় প্রযুক্তির দ্বারা মানুষের জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এ ব্যাপারে স্কুল-কলেজ সহ বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্পেইন করে মানুষকে সচেতনতা করা প্রয়োজন। এছাড়াও তিনি প্রযুক্তির কুফলের হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করার জন্য আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধকে দমন করা খবুই জরুরী বলে মনে করেন।
ভোলা সরকারি ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজ অধ্যক্ষ মো: শামসুল আলম, অল্প বয়সে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও প্রশাসনের নজরদারির অভাবে দেশের কিছু কিশোর ও তরুনকে করে তুলছে সাইবার অপরাধী। ইন্টারনেট ব্যাবহারে জন্য সরকারের মাননিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। তা নাহলে অপরাধ বাড়তেই থাকবে।

ভোলা পুলিশ সুপার মো: মোকতার হোসেন বলেন, সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে ভোলাতে টিম গঠন করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত কোন অভিযোগ আসলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

মোবাইল প্রযুক্তির অপব্যবহার ও সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর ঘটনায় আইসিটি এ্যাক্টে (তথ্য প্রযুক্তি আইন) বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১ হাজার ২শ’৯০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ভোলায় ৯৫টি মামলা হয়েছে।

উল্লেখ্য,বিদ্যমান সাইবার আইনের সঠিক বাস্তবায়ন ও অভিভাবকদের সচেতনতা ইন্টারনেটের অপব্যবহার রোধের পাশাপাশি এর কল্যাণমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সবার।

বাংলাদেশ সময়: ২০:১১:০০   ৪৮৮ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন মুফতি মাও: মুজির উদ্দিন
চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি থাকলেও ভোলায় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
লালমোহনে জাগোনারী’র অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর ভোলায় মধ্যরাত থেকে মাছ শিকারে নামবেন জেলেরা
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে আরও ইউরোপীয় দেশ
তজুমদ্দিনে ৮৫৬টি গাছ কেটে রাস্তা চওড়া করার প্রস্তুতি সম্পন্ন ,স্থানীয়দের ক্ষোভ
ভোলায় ডিবির অভিযানে অস্ত্রসহ ৩ দস্যু আটক, অপহৃতরা উদ্ধার
গুজবে কেউ কান দেবেন নাঅটো চেয়ারম্যান হওয়ার দিন শেষ জনগনের ভোট লাগবে: মোহাম্মদ ইউনুছ
৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৪মনপুরায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ৫ জন ॥ মোট প্রার্থী ১১ জন
তজুমদ্দিনে আগুনে পুড়ে ১৩ দোকান ছাই পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতি ॥

আর্কাইভ