হরিণের বিচরণ আর পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত সাগরকন্যা মনপুরা

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » হরিণের বিচরণ আর পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত সাগরকন্যা মনপুরা
রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০১৭



---মো. ছালাউদ্দিন ,ভোলাবাণী : ভোলা জেলার মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলা ভূমি রূপালী দ্বীপ মনপুরা। মেঘনার কোলে লালিত চর্তুদিকে মেঘনা নদীবেষ্টিত সবুজ শ্যামল ঘেরা। সু বিশাল নদী-নালা, চতুর্দিকে বেড়ীবাঁধ,বিভিন্ন ধরণের ধানের ক্ষেত, বিশাল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের বাগান ও মূল ভখন্ডে রয়েছে শত শত হরিণের বিচরণ।
মনপুরা উপজেলা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের কাছে যেমন আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় জায়গা তেমনি বিদেশীদের কাছেও। যেসব জেলার বা বিভাগের লোকজন মনপুরা ভ্রমনে বা কাজের জন্য এসেছেন বা অবস্থান করেছেন এখানকার মানুষকে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন এবং ভালবেসেছেন। এখানে না আসলে বোঝাই যাবেনা সবুজের দ্বীপ মনপুরায় কি সৌন্দর্য লুকায়িত আছে। পর্যটনের কি অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে পুরানো এ দ্বীপে। পর্যটক আর ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে মুগ্ধতার বন্ধনে আটকে দেওয়ার বহু উপকরণ রয়েছে এ দ্বীপে । এখানে সকাল বেলার সূর্য যেমন হাঁসতে হাঁসতে পূর্বদিকে ডিমের লাল কুসুমের মত উদিত হতে দেখা যায়, তেমনি বিকেল বেলাতেও আকাশের সিঁড়ি বেয়ে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে পশ্চিম আকাশে মুখ লুকায়। মনপুরাতে এসেই কেবল সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত প্রত্যক্ষ করা যায়। প্রতিদিন শত শত হরিণ মুল ভুখন্ডে ও বিভিন্ন চরে অবাদে বিচরণ করে। এখানে আসলেই কেবল হরিণের অবাদে বিচরণ দেখা যায়। ভোলা জেলা সদর থেকে ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে মেঘনার মোহনায় ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মনপুরা উপজেলা। এখানে প্রায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। মিয়া জমিরশাহ’র স্মৃতি বিজড়িত মনপুরা দ্বীপ অতি প্রাচীন। একসময় এ দ্বীপে পুর্তগীজদের আস্তানা ছিল। তারই নিদর্শন হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় কেশওয়ালা কুকুর। মনপুরার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচেছ ম্যনগ্রোভ প্রজাতির সারিসারি বাগান।
মনপুরায় ছোট বড় ১০-১৫ টি চর ও বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজ বিপলব। মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষরাজির বিশাল ক্যাম্পাস মনপুরাকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহে। শীত মৌসুমে শতশত পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে এসব চরাঞ্চল। এই চরগুলো হলো চর নজরুল, চর পাতালিয়া, চরপিয়াল, চরনিজাম, চর সামসুউদ্দিন, লালচর, ডাল চর, বদনার চর, কলাতলীর চর ইত্যাদি। মনপুরা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তর পূর্ব পাশে গড়ে উঠেছে মনপুরা ফিশারিজ লিমিটেড। খামার বাড়িতে সারি সারি নারিকেল গাছ ও বিশাল-৪-৫ টি দীঘি পুকুর রয়েছে। দৃষ্টিনন্দন খামার বাড়িটি হতে পারে পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণ। খামার বাড়িটির পূর্ব পাশেই বিশাল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বাগান। এখানে শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই দেখা যায়না এখানে খাবারের রীতিমত আইটেম ছাড়াও বিশেষ বিশেষ কিছু খাবার লক্ষ করা যায়। শীতের হাঁস, মহিষের কাচা দধি, টাটকা ইলিশ, বড় কই, জাগুর, কোরাল, বোয়াল ও গলদা চিংড়ি। মেঘনা নদী থেকে ধরে আনা টাটকা ইলিশ ও চর থেকে আনা মহিষের কাঁচা দুধের স্বাদই আলাদা।
মনপুরার মূল ভুখন্ডে কোরেজডেম ম্যানগ্রোব বনে দেখতে পাওয়া যায় হরিণের পাল। প্রতিদিন বিকাল বেলা এসব হরিণ দেখতে পর্যকটরা ভীড় করেন। মূল ভুখন্ডে চরফৈজুদ্দিন টু সাকুচিয়া মধ্যবর্তী রয়েছে সংযোগ বিশাল ব্রিজ। প্রতিদিন বিকাল বেলা ভ্রমন পিপাষু মানুষেরা সৌন্দর্যতম ব্রিজ দেখার জন্য ভীড় করেন। এখানে না গেলে বুঝাই যাবেনা কি সৌন্দর্য লুকায়িত আছে এই দ্বীপে।
ঐতিহাসিক বেভারিজ মনপুরার নামকরণ নিয়ে লিখেছেন, জনৈক মনগাজি নামের ব্যক্তি সে সময়ের জমিদার থেকে মনপুরা জমি লিজ নেন অষ্ঠাদশ শতাব্দীর মধ্য যুগে। তখন তার নামানুষারে এ দ্বীপের নাম করণ হয মনপুরা। জনৈক ব্যক্তিদের মতে মনগাজি নামের লোকটি বাঘের থাবায় প্রাণ হারালে তখন তার নামানুষারে নাম করণ করা হয় মনপুরা। স্থানীয়দের মতে এখানকার খাটি দুধ খেয়ে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলা দেখে মানুষের মন ভরে যেত। এজন্য এর নামকরণ করা হয় মনপুরা। তবে মনপুরার নামকরণ নিয়ে এখনও মতবিরোধ রয়েছে।
জাতির জনক বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে মনপুরা এসেছিলেন। তিনি মনপুরার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মনপুরায় বঙ্গ বন্ধুর চিন্তানিবাস করতে চেয়েছিলেন। কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গ বন্ধুর মৃত্যুর পর আর সেটি বাস্তবায়িত হয়নি।
মন চাইলে যে কেউ মনপুরা আসতে বা যেতে পরবেনা। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে রুটিন মাফিক। প্রতিদিন ঢাকা থেকে ১টি লঞ্চ বিকাল সাড়ে ৫টার সময় মনপুরা ও হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে পরদিন মনপুরা সকাল ৬টা পৌছে। অন্য একটি লঞ্চ ঢাকা থেকে ১ দিন পর পর ছাড়ে । মনপুরার রামনেওয়াজ লঞ্চ ঘাট থেকে প্রতিদিন দুপর ২টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে একটি লঞ্চ ছাড়ে। মনপুরার মানুষ যে লঞ্চে করে ঢাকার থেকে মনপুরা আসেন আবার ঐ একই লঞ্চে করে ঢাকায় চলে যান। এছাড়া ঢাকা কিংবা বরিশাল থেকে ভোলা হয়ে তজুমুদ্দিন সি-ট্রাক ঘাট থেকে মনপুরা আসা যায়। এছাড়া ১টি লঞ্চ প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০ টায় মনপুরা হাজীর হাট ঘাট থেকে ছেড়ে দুপুর ১২টায় তজুমদ্দিন ঘাটে পৌছে। আবার ঐ দিন বিকেল ৪ টায় তজুমদ্দিন ঘাট থেকে ছেড়ে বিকেল ৫ টায় মনপুরা হাজীর হাট ঘাটে পৌছে।
অপরদিকে চরফ্যাশনের বেতুয়া ঘাট থেকে মনপুরার সাকুচিয়া জনতা বাজার রুটে দৈনিক ২ টি লঞ্চ চলাচল করে। এছাড়া প্রতিদিন সাকুচিয়া থেকে রামনেওয়াজ হয়ে আলেকজান্ডারের উদ্দেশ্যে একটি লঞ্চ চলাচল করে। বর্তমানে ব্যাক্তি মালিকানায় স্পীড বোট চলাচল করছে।
বেসরকারীভাবে তজুমদ্দিন রুটে এবং চরফ্যাশন মনপুরা রুটে স্পীড বোট সার্ভিস চালু হওয়ায় সহযে মানুষ যাতায়াত করতে পারে। মনপুরায় ভাল মানের হোটেল গড়ে উঠলে পর্যটকদের অগমন বাড়বে, প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার ব্যাবস্থা করলে মনপুরা হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
মনপুরার মানুষ সহজ সরল প্রকৃতির। জাতি, ধর্ম, বর্ন, গোত্র সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে বসবাস করে। এখানকার মানুষ অতিথি পরায়ন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে যে কাউকে আপন করে নেয়। এখানকার মানুষ কৃষি ও মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল। মনপুরার শতকরা ৮০% লোক কৃষক ও মৎস্যজীবি।

রূপালী সৌন্দর্যের দ্বীপ মনপুরার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যাক্তি ও প্রশাসনের সাথে আলাপ হয় মনপুরার পর্যটন সমস্যা ও স¤ভাবনা নিয়ে। আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক এ কে এম শাহজাহান মিয়া জানান, এখানকার পর্যটনের অপার সম্ভাবনা নিয়ে পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি কাজ করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা নিবাস করার জন্য তিনি চেষ্ঠা করে যাচ্ছেন। উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব।
মনপুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি মিসেস শেলিনা আকতার চৌধুরী বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার একটি স্বপ্ন মনপুরাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। মনপুরা বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস স্থাপনের জন্য চরপ্যাশন ও মনপুরার উন্নয়নের রোল মডেল পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি কাজ করছেন। বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস স্থাপন হলেই পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সহজ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৩০:৩৪   ৮৬০ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন মুফতি মাও: মুজির উদ্দিন
চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি থাকলেও ভোলায় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
লালমোহনে জাগোনারী’র অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর ভোলায় মধ্যরাত থেকে মাছ শিকারে নামবেন জেলেরা
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে আরও ইউরোপীয় দেশ
তজুমদ্দিনে ৮৫৬টি গাছ কেটে রাস্তা চওড়া করার প্রস্তুতি সম্পন্ন ,স্থানীয়দের ক্ষোভ
ভোলায় ডিবির অভিযানে অস্ত্রসহ ৩ দস্যু আটক, অপহৃতরা উদ্ধার
গুজবে কেউ কান দেবেন নাঅটো চেয়ারম্যান হওয়ার দিন শেষ জনগনের ভোট লাগবে: মোহাম্মদ ইউনুছ
৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৪মনপুরায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ৫ জন ॥ মোট প্রার্থী ১১ জন
তজুমদ্দিনে আগুনে পুড়ে ১৩ দোকান ছাই পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতি ॥

আর্কাইভ