পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর

প্রথম পাতা » ভোলার পর্যটন » পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর
বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮



---

আদিল হোসেন তপু ॥ভোলা প্রতিনিধি ।।ভোলাবাণী
ভাষা অন্দোলন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত সঠিক ইতিহাস আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা ও তা সংরক্ষণ করতে ভোলার বাংলাবাজারে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্বাধীনতা জাদুঘর। শুধু স্বাধীনতা আন্দোলন নয় স্বাধীনতা অর্জনের পেছনের ৮০ বছরের ইতিহাসের ধারাবাহিক দুর্লভ সংরক্ষণ রয়েছে এই জাদুঘরটিতে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেণ। প্রতিদিন বহু পর্যটক আসে এই জাদুঘরটি দেখে মুগ্ধ হন।
বাণিজ্যমন্ত্রীর মায়ের নামে বাংলাবাজারে প্রতিষ্ঠিত ফাতেমা খানম কমপ্লেকসে ৩ বছর আগে ২০১৫ সালে স্বাধীনতা জাদুঘরটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরপর গত ২৫ জানুয়ারী (২০১৮) রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আনুষ্ঠানিকভাবে জাদুঘরটি উদ্বোধন করেণ। এর পর থেকে জাদুঘরটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়।
জাদুঘরটিতে তিনটি গ্যালারি রয়েছে। প্রথম তলার গ্যালারিতে এক পাশে ইতিহাস ঐতিহ্য, প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ৪৭-এ দেশভাগ ও ভাষা আন্দোলনের দুর্লভ ছবি ও তথ্য রয়েছে। অপর পাশে রয়েছে লাইব্রেরি ও গবেষণাগার। এছাড়া একই তলায় রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ডিসপ্লে হলরুম। যেখানে প্রদর্শীত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র ও চলচ্চিত্র। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত ইতিহাসের মুহূর্তগুলোর চিত্রকল্প। তৃতীয় তলায় রয়েছে ৫৮ ও ৬৬-এর আন্দোলন। এছাড়া ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৭ মার্চের ভাষণসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের আত্মত্যাগের দুর্লভ সব আলোকচিত্র। এছাড়া জাদুঘরটির একটি অংশে বাঙালির লোকজ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে। জাদুঘরটিতে দর্শনার্থীরা ডিজিটাল টাচস্কিন ব্যবহার করে যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ও তথ্য জানতে পারছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনের ৮০ বছরের ইতিহাসের ধারাবাহিক দুর্লভ সংরক্ষণ রয়েছে এই স্বাধীনতা জাদুঘরটিতে। দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার পাশাপাশি জাদুঘরটিতে আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির বিন্যাস ঘটানো হয়েছে। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুনসহ বেশ কয়েকজন গবেষকের নিরলস পরিশ্রমে জাদুঘরটি অন্যতম সংগ্রহশালায় পরিণত হয়েছে।
প্রতিদিন বহু পর্যটক জাদুঘরটি দেখতে ছুটে আসেন এখানে। বাংলাদেশের তরুন প্রজন্ম যাদের কাছে মুক্তি যুদ্ধের কোন স্মৃতি নেই, এখান থেকে বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাসের শিক্ষা নিতে পারবে তারাও। পাশাপাশি ভাষা অন্দোলন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিকতা দেখতে ও জানতে পারছে নতুন প্রজন্ম, এমনটাই মনে করছেন সাধারণ পর্যটকরা।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবিদুল আলম বলেন, বর্তমান সমাজে আমাদের যুব সমাজ মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেইসবুক ব্যবহারে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে। যার ফলে তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সহ অনেক কিছুই জানে না এবং সে বিষয়গুলো নিয়ে পড়ালেখা করে না। জননেতা বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ভোলার বাংলাবাজারে স্বাধীনতা জাদুঘর নির্মান করে যুব সমাজকে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার সুযোগ করে দিয়েছেন। নতুন প্রজন্ম এই জাদুঘরে আসলে তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারবে।
উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, আমাদের প্রিয় নেতা ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থানের মহানয়ক বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এর একান্ত প্রচেষ্টা বাংলাবাজারে দৃষ্টিনন্দন স্বাধীনতা জাদুঘর নির্মিত হয়েছে। এখানে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও বাঙালী জাতির ইতিহাস জানা যাবে। ইতিমধ্যে এই জাদুঘরে দর্শনার্থীদের পদচারনা শুরু হয়ে গেছে। দর্শনার্থীরা কৌতুহল ভড়ে স্বাধীনতার দুর্লভ ইতিহাস জানছেন। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেন্ত এলাকার একটি দ্বীপজেলা ভোলা। এই জেলার কৃতি সন্তান ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থানের মহানয়ক বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষন করার জন্য বাংলাবাজারে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই স্বাধীনতা জাদুঘর নির্মান করে প্রসংশনীয় কাজ করেছেন। আমরা দেখেছি বেশির ভাগ জাদুঘরই ঢাকা কেন্দ্রীক। এখানে এসে আমি দৃষ্টিনন্দন এই জাদুঘরটি দেখে মুগ্ধ হয়েছি। ভোলায় এই জাদুঘর নির্মানের ফলে এই অঞ্চলের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।
বিনিয়োগ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও সফল সচিব এম মোকাম্মেল হক বলেন, বাংলাবাজারে নির্মিত এই স্বাধীনতা জাদুঘরটি নির্মান করে তোফায়েল আহমেদ একটি সময় উপযোগী কাজ করেছেন। এই জাদুঘর নির্মানের ফেলে তোফায়েল আহমেদ আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি দৃষ্টিনন্দন এই জাদুঘর নির্মান করে দ্বীপজেলা ভোলার তরুণ প্রজন্মকে বাঙালী জাতির ইতিহাস, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানে না। তার ইতিহাস নিয়ে তেমন পড়ালেখাও করে না। তাই এই জাদুঘরটি নির্মানের ফেলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এখানে আসলে জানতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’ নির্মিত হয়েছে দ্বীপজেলা ভোলায়। আমার স্বপ্ন ছিলো ভোলায় একটি স্বাধীনতা জাদুঘর নির্মান করবো। সে লক্ষ্যেই আমি এই জাদুঘরটি নির্মান করেছি। যেখানে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, আর ঐহিত্যের সবকিছুই। তাই জাদুঘরটিতে প্রবেশ করলে জানা যাবে গোটা বাংলাদেশকেই।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানের জন্ম, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সব সংগ্রামের যে ঐতিহ্য, যে চিত্র সেটি এখান থেকে দেখতে পারবেন। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, এখানে গাইড থাকবে। বাংলাদেশ কীভাবে স্বাধীন হয়েছে, কী ত্যাগ করতে হয়েছে কীভাবে ৩০ লাখ মানুষ মাবোন লাঞ্ছিত হয়েছেন, শহীদের মৃতদেহ রাজপথে পড়ে আছে, সব কিছু দেখতে পারবে। জাদুঘরটির প্রথম তলার গ্যালারির একপাশে প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের দুর্লভ তথ্য ও ছবি। অপর পাশে রয়েছে একটি লাইব্রেরি ও গবেষণাগার। এ ছাড়া একটি মাল্টিমিডিয়া হলরুম। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ আর বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন অডিও-ভিজ্যুয়াল দেখা যাবে সেখানে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় স্থান পেয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সব গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের আলোকচিত্র।

বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৭:৪২   ৪২৪ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ভোলার পর্যটন’র আরও খবর


চর কুকরি মুকরি দ্বীপঈদের পর বেড়াতে যাবেন যেখানে
ভোলায় বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
নতুন সাজে সেজেছে ইলিশার মেঘনা রিসোর্ট
বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে প্রকৃতির এক বিশ্বয় ঈদে ‘ঘুরে আসুন সুন্দরবন খ্যাত “চর কুকরি মুকরি দ্বীপ”
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কিভাবে বাংলাদেশের অংশ হলো
প্রকৃতির এক বিশ্বয় কুকরী-মুকরীবঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে বাঁকে বাঁকে সুন্দরবন।
বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অপরুপ সাজে তারুয়া সমুদ্র সৈকত মন কেড়েছে পর্যটকদের
তজুমদ্দিনে টেকশই বেড়িবাঁধ নির্মাণ,অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি।
ঈদে ‘ঘুরে আসুন বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে প্রকৃতির এক বিশ্বয় “চর কুকরি মুকরি দ্বীপ”
মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রুপালী দ্বীপ মনপুরা

আর্কাইভ