প্রকৃতির এক বিশ্বয় কুকরী-মুকরীবঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে বাঁকে বাঁকে সুন্দরবন।

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » প্রকৃতির এক বিশ্বয় কুকরী-মুকরীবঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে বাঁকে বাঁকে সুন্দরবন।
বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩



খলিল উদ্দিন ফরিদ।।ভোলাবাণী।।

প্রকৃতির এক বিশ্বয় চর কুকরি মুকরি দ্বীপ,

চর কুকরি মুকরি (Char Kukri Mukri) এর অবস্থান ভোলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপাসাগরের কোল ঘেষা মেঘনা নদীর মোহনায়। যা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসাবে পরিচিত। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দ্বীপ জনপদ কুকরী-মুকরী। ভোলার দক্ষিণ উপকূল চরফ্যাশনের ম্যানগ্রোভ বাগানকে সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে।দেখলে মনে হয় এর বাঁকে বাঁকে সুন্দরবন। এক সময় এই চরে অধিক কুকুর ও ইঁদুর (এখানে মেকুর নামে পরিচিত) পাওয়া যেত, এ কারণেই এটি চর কুকরি মুকরি নামে স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে উঠে। ১৯৮৯ সালের ১৪ মে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার একর জমিতে সংরক্ষিত শ্বাসমূলীয় ম্যানগ্রোভ জাতীয় বৃক্ষের বনায়ন শুরু হয়। চর কুকরি মুকরির বনভূমিতে স্থান পেয়েছে সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, কেওড়া, নারিকেল, বাঁশ ও বেত। বর্তমানে কুকুরি মুকুরি চরে বনভূমির পরিমাণ ৮৫৬৫ হেক্টর, যার মধ্যে ২১৭ হেক্টর জমি বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম এবং বসতি ও কৃষি আবাদের জন্য প্রায় ৪ হাজার ৮১০ হেক্টর জমি রয়েছে। মাছ ধরা ও কৃষিকাজ চর কুকরি মুকরিতে বসবাসকারী মানুষের প্রধান পেশা।

“চর কুকরির বাঁকে বাঁকে সুন্দরবন

চর কুকরি মুকরির অভয়াশ্রমে প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ, বানর, শিয়াল, উদবিড়াল, বন্য মহিষ-গরু, বন মোরগ, বন-বিড়াল প্রভৃতি। এছাড়া বক, শঙ্খচিল, মথুরা, বন মোরগ, কাঠময়ূর, কোয়েল ইত্যাদি নানান প্রজাতির পাখি ও সরিসৃপ রয়েছে। শীতকালের এই চর কুকরি মুকরিতে বিপুল পরিমানে অথিতি পাখির আগমন ঘটে। এছাড়া কুকরি মুকরি চরের সমুদ্র সৈকত নিরিবিলি ও পরিছন্ন। এর বনভূমিতে প্রায় ৯ কোটিরও বেশি জীবন্ত গাছ রয়েছে। চর কুকরিমুকরি বুক চিঁড়ে বয়ে যাওয়া ভাড়ানি খাল মেঘনা নদী হয়ে আছড়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগরে। চরের বালিয়াড়ির ধরে ঢাল চর অতিক্রম করে সামনে এগোলেই বঙ্গোপসাগর। এখানেও কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের আবহ খুঁজে পাবেন। স্থানীরা এই জায়গাটিকে বালুর ধুম নামে চেনে। কুকরিমুকরির সাগরপাড় থেকেও সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্থের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
চর কুকরি মুকরি যাবার উপযুক্ত সময়

শীতকালে চর কুকরি মুকরির আসল সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আবার এখানে ক্যাম্পিং করার জন্য শীতকালেই উপযুক্ত সময়। বর্ষায় চরের সিংহভাগই ডুবন্ত থাকে তাই বর্ষাকালে চর কুকরি মুকরি ভ্রমণে না যাওয়াই ভালো। চর কুকরি মুকরি ভ্রমণের জন্য জানুয়ারী থেকে মার্চ মাস সবচেয়ে আদর্শ সময়।

শীতে ‘ঘুরে আসুন বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে প্রকৃতির এক বিশ্বয় “চর কুকরি মুকরি দ্বীপ”

কিভাবে যাবেনঃ

চর কুকরি মুকরিতে যেতে নদী পথ হচ্ছে সবচেয়ে সহজ উপায়। নদী পথে যাতায়াতে খরচ ও শারীরিক কষ্ট কম হয়। নদী পথে চর কুকরি মুকরিতে যাওয়ার দুইটি উপায় আছে। ঢাকার সদঘাট থেকে ভোলাগামী লঞ্চে চড়ে বেতুয়া লঞ্চ টার্মিনাল নেমে সরাসরি মটরসাইকেল,অটোরিক্সা,সিএনজি অথবা লেগুনা ভাড়া করে চর কচ্ছপিয়া ঘাট আসতে পারেন। তবে চরফ্যাশন থেকে সরাসরি বাসেও যেতে পারেন।

এক নজরে চর কুকরি মুকরি যাবার বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।

ঢাকার সদরঘাট থেকে কর্ণফুলী-১২,কর্ণফুলী-১৩ লঞ্চ থেকে সুবিধামত সময় লঞ্চে চড়ে ভোলার বেতুয়া লঞ্চ টার্মিনাল নামতে হবে। (মনে রাখা জরুরী ঢাকা থেকে সবগুলো লঞ্চ বিকাল ৬ টা থেকে ৮ টার মধ্যে ছেড়ে যায় এবং বেতুয়া থেকে ছাড়ে বিকাল ৪ টা থেকে ৫ টার মধ্যে। আর লঞ্চের রুট প্লান প্রায়শই পরিবর্তন করা হয় তাই যাত্রার আগেই কোন পথে লঞ্চ যাত্রা করবে ফোন করে নিশ্চিত হয়ে নিন।)এসব লঞ্চের ডেকের ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ভাড়া ১০০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন ভাড়া নিতে ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা লাগে। ঘাট থেকে ১৫০ টাকা মোটর সাইকেল ভাড়া করে কিংবা ৭০ থেকে ৮০ টাকা ভাড়ায় টেম্পোতে চরে চরফ্যাশন সদরে এসে সেখান থেকে ৩০ টাকা বাস ভাড়া অথবা ২০০ টাকা মোটর সাইকেল ভাড়ায় দক্ষিণ আইচা আসুন। দক্ষিন আইচা থেকে ১৫ থেকে ৩০ টাকায় টেম্পো বা মোটরসাইকেল ভাড়ায় চর কচ্ছপিয়া যেতে পারবেন। চর কচ্ছপিয়া থেকে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ভাড়ায় ট্রলারে চেপে পৌঁছে যাবেন চর কুকরি-মুকরি।

“চর কুকরির বাঁকে বাঁকে সুন্দরবন

ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে বেতুয়া লঞ্চ টার্মিনাল নেমে লেগুনায় চড়ে ৩৬ কিলোমিটার দূরের চর কচ্ছপিয়া ঘাট আসতে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট সময় লাগবে। লেগুনার ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, রিজার্ভ নিলে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। চর কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে লোকাল ট্রলারে ৫৫ টাকা ভাড়ায় তেতুলিয়া নদী পার হয়ে চর কুকরি মুকরি বাজার। প্রতিদিন সকাল দুপুর ১২:৩০ ও ৪:৩৯ টায় ১ টি লোকাল ট্রলার চর কুকরি মুকরির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।আবার প্রতিদিন সকাল ৯ টা ও দুপুর ২ টায় কুকরি থেকে ছেড়ে আসে। এছাড়া চর কচ্ছপিয়া থেকে সব সময়ই স্প্রিড বোর্ড পাওয়া যায়(স্প্রিড বোর্ডের ফোন নাম্বার-মোঃছলেমান হাওলাদারঃ০১৭৩৫-২৬৭৫৬৪,মোঃদুলাল মেম্বার-০১৭১২-৯৭১০৭৬ ও রুহুল আমিন হাওলাদার-০১৭৫৭-০২৯৫০১ ) । বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা(এফডিএ)নিজস্ব স্প্রিড বোর্ড আছে।কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে যেতে পারেন।যোগাযোগ - ০১৭৪৬-৭৬৫৯৫৯ ও ০১৭১১৫৮০৬৮০।এছাড়া ট্রলার রিজার্ভ করেও যেতে পারবেন এক্ষেত্রে আপনাকে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ করতে হবে।

শীতে ‘ঘুরে আসুন বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে প্রকৃতির এক বিশ্বয় “চর কুকরি মুকরি দ্বীপ”

কুকরিতে কোথায় থাকবেনঃ

আপনি ইচ্ছা করলে চর কুকরি মুকরিতে ক্যাম্পিং করতে পারবেন। এছাড়া বন বিভাগ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা(এফডিএ),কোস্ট ট্রাস্ট এবং ইউনিয়ন পরিষদের রেস্ট হাউসে অনুমতি নিয়ে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা(এফডিএ) এর রেস্ট হাউজ ভাড়া ৩০০ টাকা ,কোস্টাল ফরেস্ট ডেভলপমেন্ট কাম রেস্ট হাউজ(বনবিভাগের) ভাড়া-সিঙ্গেল রুম-২০০০ টাকা,ডবল রুম-৪০০০ টাকা।বনবিভাগের রেস্ট হাউজে থাকতে চাইলে আগেই জানিয়ে যাওয়া ভালো।বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা(এফডিএ)।যোগাযোগ - ০১৭৪৬-৭৬৫৯৫৯ । চর কুকরি মুকরি রেস্ট হাউজের যোগাযোগ নাম্বার ০১৭৩৯ ৯০৮০১৩।

ঈদে ‘ঘুরে আসুন বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে প্রকৃতির এক বিশ্বয় “চর কুকরি মুকরি দ্বীপ”

কুকরিতে কোথায় খাবেনঃ

বন বিভাগ, কোস্ট ট্রাস্ট এবং ইউনিয়ন পরিষদের রেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে এরা খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে।এছাড়া কুকরি বাজারে হোটেল হানিফ(হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট) রয়েছে।এখানে থাকা এবং খাওয়ার সু ব্যবস্থা রয়েছে।

“চর কুকরির বাঁকে বাঁকে সুন্দরবন

কুকরির দর্শনীয় স্থানঃ

পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে এখানে একের পর এক স্থাপনা গড়ে উঠছে। এরই মধ্যে পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন হয়েছে। নির্মিত হয়েছে ফাইভস্টার মানের বনবিভাগের কোস্টাল ফরেস্ট ডেভলপমেন্ট কাম রেস্ট হাউজ (একটি টুরিস্ট হোটেল)। দর্শনীয় স্থান হিসেবে রয়েছে নারিকেল বাগান, বালুর ধুম, লাল কাঁকড়া, সাগর পাড়ে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা সমুদ্রসৈকত ও সাগরের গর্জন। এ ছাড়া কুকরীর বিভিন্ন বাঁকে বাঁকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ৮:৪৭:৩৪   ১৭২ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি থাকলেও ভোলায় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
লালমোহনে জাগোনারী’র অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর ভোলায় মধ্যরাত থেকে মাছ শিকারে নামবেন জেলেরা
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে আরও ইউরোপীয় দেশ
তজুমদ্দিনে ৮৫৬টি গাছ কেটে রাস্তা চওড়া করার প্রস্তুতি সম্পন্ন ,স্থানীয়দের ক্ষোভ
ভোলায় ডিবির অভিযানে অস্ত্রসহ ৩ দস্যু আটক, অপহৃতরা উদ্ধার
গুজবে কেউ কান দেবেন নাঅটো চেয়ারম্যান হওয়ার দিন শেষ জনগনের ভোট লাগবে: মোহাম্মদ ইউনুছ
৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৪মনপুরায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ৫ জন ॥ মোট প্রার্থী ১১ জন
তজুমদ্দিনে আগুনে পুড়ে ১৩ দোকান ছাই পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতি ॥
এসএসসির ফল প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা

আর্কাইভ