মোঃ আমজাদ হোসেন ।।ভোলাবাণী।। লালমোহন প্রতিনিধি:
ভোলার লালমোহন ধলীগৌরনগর করিমুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসার সুপার পদে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লোকমান হোসেন ১৫ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্য মাধ্যমে সুপার পদে নিয়োগ দিয়েছেন একই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ইউনিয়ন জামায়তের সক্রিয় নেতা মাওঃ জসিম উদ্দিন কে। এ ঘটনায় অভিভাবক মহল, শিক্ষক সমাজ সহ এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, ধলীগৌরনগর করিমুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওঃ রুহুল আমিন করীমগঞ্জ ইলালিমা সিনিয়র অলিম মাদ্রসার অধ্যক্ষ পদে যোগদান করায় সুপার পদটি ১৯ মে পদটি শূন্য হয়। তার পর থেকে সুপারের শূন্য পদে নিয়োগ বাণিজ্য মেতে উঠেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লোকমান হোসেন। গত ২১ মে ফরমালিটি রক্ষার নামে ঢাকার একটি পত্রিকা ও আঞ্চলিক একটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ওই উপজেলার পত্রিকা বিলি বন্ধ রাখনে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। তার পর প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মেতে উঠেন নিয়োগ বাণিজ্যে। ১৫ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্য মাধ্যমে সুপার পদে একই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক সক্রিয় জামায়ত নেতা মাওঃ জসিম উদ্দিনকে নির্ধারিত করেন সভাপতি লোকমান। তরিগড়ি করে লোকমান হোসেন ২৫ জুলাই জেলা মাধ্যমিক অফিসে নিয়োগ পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলে তিনি তৎকালিন জেলা ম্যাধমিক অফিসার মো.রুহুল আমিন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলামকে মোটা অংকের টাকার বিনিময় ম্যানেজ করে তার ধলীগৌরনগর ৩ নং ওয়ার্ডস্থ যুবলীগ অফিসে নিয়োগ পরিক্ষা নেন। সেখানে কোন কোন প্রশ্ন ছাড়াই নিজস্ব লোক দিয়ে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ দেখিয়ে কাগজ পত্র তৈরি করেন। ২৭ জুলাই তরিগড়ি করে ওই জামায়াত নেতাকে সুপারের পদে নিয়োগ প্রধান করেন সভাপতি।
এলকাবাসী অভিযোগ করেন, শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন, মেধার ভিত্তিতে নয়, বরং মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে তার আজ্ঞাবহ প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়েছেন। গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীর জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের ম্যানেজ করে নিয়োগ বাণিজ্য করেন।
সুপার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী ধলীগৌরনগর মাহমুদা খানুম দাখিল মাদ্রাসার সহ সুপার মাওঃ লোকমান হোসেন বলেন, পরীক্ষার আগের দিন রাতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লোকমান হোসেন ২৫ জুলাই সকাল ১০ টায় তার ইউনিয়ন যুবলীগ কার্যালয়ে মৌখিক প্রশ্নের মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষা নেন। এসময় ডিজির প্রতিনিধি কে ছিলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লোকমান হোসেন, পাশ্ববর্তী করীমগঞ্জ ইসলামিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রসার অধ্যক্ষ মাওঃ রুহুল আমিন ও তিন জন নিয়োগ পরিক্ষার্থী ছাড়া কেউ ছিলেন না।
সুপার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় আরেক অংশ গ্রহণকারী পূর্ব ধলিগৌরনগর দাখিল মাদ্রাসার সহ সুপার মাওঃ ইমরান হোসেন বলেন, আমারা সভাপতির কথামত তার দলীয় কার্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সুপার পদে নিয়োগের সহযোগীতা করেছি মাত্র।
লর্ডহার্ঞ্জি নুরজাহান মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সহ সুপার মাওঃ সিহাব উদ্দিন বলেন, ওই মাদ্রসায় সুপার পদে নিয়োগ দানের খবরশুনে নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষার জন্য আবেদনও করেছিলাম। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আমাকে ডাকা হয়নী। কিছু দিন আগে শুনলাম মোটা অংকের বাণিজ্যর মাধ্যমে একই মাদ্রসার সহকারী শিক্ষক মাওঃ জসিম উদ্দিনকে নিয়োগ দেয়া হয়।
মাদ্রসার শিক্ষক গিয়াস, আবদুল মান্নান সহ উপস্থিত শিক্ষকদের সুপার পদে নিয়োগের পূর্বে মাদ্রাসায় কোন সাধারণ সভা ও নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে কিনা এ সর্ম্পকে প্রশ্ন করা হলে তারা কিছু জানেন না বলে জানান। এবং বলেন কয়েক সাপ্তাহ আগে মাদ্রসার ম্যানিজিং বোর্ডের সভাপতি লোকামন হোসেন মাদ্রাসায় এসে মাওঃ জসিম উদ্দিনকে আমাদের নতুন সুপার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওঃ ফারুক হোসেন বলেন, এই পতিষ্ঠানে প্রায় ১২ বছর ধরে সহ সুপার হিসেবে দায়িত্বপালন করছি। প্রায় ৩ মাস আগে আমাকে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব দেয়া হয়। সভাপতি যখন যে কাগজে সাইন করতে বলেছে আমি সেটাই করেছি। নিয়োগ পরীক্ষা কখন কোথায় ও কারা অংশ গ্রহণ করেছেন তিনি কিছু জানেন না বলেন জানান।
এব্যাপারে সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত সুপার মাওঃ জসিম উদ্দিনকে নিয়োগ পরীক্ষা কোথায় হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন মাদ্রাসার হল রুমে। আপনার প্রতিযোগী প্রার্থী হিসেবে নিয়োগ পরীক্ষায় কারা অংশগ্রহণ করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ধলীগৌরনগর মাহমুদা খানুম দাখিল মাদ্রাসার সহ সুপার মাওঃ লোকমান হোসেন ও লর্ডহার্ঞ্জি নুরজাহান মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সহ সুপার মাওঃ সিহাব উদ্দিন। নিয়োগ পরিক্ষার রেজুলেশন বই ডিজি প্রতিনিধি কে ছিলেন এমন প্রশ্নে তিনি সভাপতিরা জানেন বলে এড়িয়ে যান।
এব্যাপারে ধলীগৌরনগর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লোকমান হোসেন মেম্বার বলেন, এই যুগে টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। নিয়োগ পরীক্ষায় জেলা শিক্ষা অফিসেই হয়েছে। ডিজি প্রতিনিধি কে ছিলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার রুহল আমিন ছিলেন, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই আমাদের নিয়োগ বৈধ করা হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার জানা মতে নিয়োগ পরিক্ষা জেলা শিক্ষা অফিসে হয়েছে। আমি ওই কমিটির সদস্য ছিলাম। জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস ম্যানেজ করেই নিয়োগ বৈধ করা হয়েছে কথাটি সত্য নয় বলে তিনি জানান।
এবিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামসুল আরিফ বলেন, আমি বিষয়টি দতন্ত করে দেখব, কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিয়োগ বোডের্র ডিজির প্রতিনিধি ও জেলা মাধ্যমিক তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার মো. রুহল আমিন বলেন, পটুয়াখালী জেলায় আমার বদলীর আদেশ এসেছে। সোমবার ২৫ সেপ্টেম্বর সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। নিয়োগ কমিটি যদি কোন অনিয়ম করে থাকেন তা কমিটির ব্যাপার। প্রথমে নিয়োগ পরীক্ষা জেলা শিক্ষা অফিসে হয়েছে বলে দাবি করলেও পরে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৯:৫৪ ৫০১ বার পঠিত |