প্রাকৃতিক দুর্যোগে নাকাল ২০১৬

প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » প্রাকৃতিক দুর্যোগে নাকাল ২০১৬
শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬



---ভোলা বাণী : জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের জেরে ২০১৬ সালে বিশ্বের বেশ কিছু দেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের স্বাদ নিতে হয়েছে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিপরীত অবস্থানে যে সব শক্তিধর দেশ ছিল, এ বছর তাদেরও হাড়ে হাড়ে টের পেতে হয়েছে এর ভয়াবহতা। যুক্তরাষ্ট্রকে মৌসুমি ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব যেমন মোকাবেলা করতে হয়েছে, তেমনই আঘাত সইতে হয়েছে ভূমিকম্পেরও। শুধু কি তাই? বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জেরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় দাবানলও দেখা দেয়।

উন্নয়নের জোয়ারে চীন আর ভারত জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিস্মৃত হলেও প্রকৃতিই জানিয়ে দিয়েছে ভুলে থাকার সময় নেই। বড় শহরগুলো যেমন কালো কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল, তেমনই উপকূলীয় এলাকাগুলোয় বছরের উল্লেখযোগ্য সময় কর্তৃপক্ষকে যুঝতে হয়েছে প্রকৃতির ভয়াবহতা মোকাবেলায়। ২০১৬ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে এবারের প্রতিবেদন

এল নিনো’র অস্বাভাবিক আচরণের কারণে বিশ্বের বায়ুমণ্ডলীয় এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোয় এ বছর দুর্যোগের মাত্রা ছিল আগের সময়গুলোর তুলনায় বেশি। এল নিনো’র প্রভাবে এ বছর ভারত মহাসাগর, ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার উপরিভাগের পানির চাপের পরিবর্তন ঘটতে দেখা গেছে। বিষুব রেখার বায়ু প্রভাবেও এ বছর বিজ্ঞানীরা পরিবর্তন লক্ষ করেছেন। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ঝড়, বন্যা আর জলোচ্ছ্বাসের পরিমাণও ছিল অন্য সময়ের চাইতে বেশি। মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা রেকর্ড ভাঙায় বরফ গলছে। আর তার ফলে সাগরের উচ্চতা ক্রমেই বাড়ছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও এর ভয়াবহতা শক্তিমান দেশটিকে ঠিকই টের পেতে হয়েছে। বছরের শুরুতেই অর্থাৎ জানুয়ারি মাসেই প্রচণ্ড তুষারপাতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল। তুষারপাতের ফলে দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব রাজ্যগুলো প্রায় ২ ফুট বরফের তলে চাপা পড়ে নতুন রেকর্ড গড়ে। এছাড়া বন্যার ভয়াবহতা কী তা প্রত্যক্ষ করে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া আর লুইসিয়ানার মানুষ! এছাড়া হারিকেন ‘ম্যাথিউ’ রুদ্রমুর্তি দেখতে হয়েছে ফ্লোরিডা, জর্জিয়া এবং ক্যারোলাইনার অধিবাসীর। দাবানল তো ছিলই, খরার ফলে বেশ কিছু শস্য উৎপাদনশীল রাজ্যগুলোয় এবার ফলনেও বিরূপ প্রভাব পড়ে।

ভূমিকম্প : ইকুয়েডর এবং ইতালির জন্য ২০১৬ সাল ছিল ভয়াবহ বছর। এপ্রিলে ইকুয়েডরে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানলে অন্তত ৬৭৬ জন প্রাণ হারান। আবার আগস্টে ইতালির ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণ হারান প্রায় ৩শ’ মানুষ। এছাড়া বছরের নানা সময়ে তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, তানজানিয়া এবং ভারতে ৬ থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানলে নিহতের সংখ্যায় কেবল বাড়তেই থাকে।

সুনামি : ২০১৬ সালে একাধিক ভূমিকম্প আঘাত হানলেও সুনামির ঘটনা ঘটেছে কমই। নিউজিল্যান্ডের কাইকুরা এবং জাপানের ফুকুশিমা বাদে বড় ধরনের সুনামি এ বছর আঘাত হানেনি।

খরা : বৈশ্বিক জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে নানা স্থানে অতিবৃষ্টির পাশাপাশি অনাবৃষ্টির ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বছরের শুরুতে প্রচণ্ড তুষারপাত জনজীবন যেমন অচল করে ফেলে, তেমনই আগস্ট মাসের দিকে অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপমাত্রায় ভুগতে হয় সেখানকার মানুষকে। এছাড়া দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অনাবৃষ্টি এবং তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে সাওপাওলোতে এ বছর পানির মারাত্মক সঙ্কট দেখা দেয়।

বন্যা : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ বছর বন্যা দেখা দেয়। চীনের ২৬টি প্রদেশে বন্যা ভয়াবহ আকার নিলে প্রায় ৩শ’ জনের প্রাণহানি ঘটে। গৃহহীন হয় অন্তত ৩ কোটিরও বেশি মানুষ। প্রায় ৩ লাখ একর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। জুলাই মাসে ভারতের আসামে বন্যা দেখা দিলে গৃহহীন হয় অন্তত ১৮ লাখ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফসলি জমি ও গবাদিপশু। প্রাণ হারায় অন্তত ২৮ জন মানুষ। উত্তর কোরিয়াতেও ঝড় ও বন্যার কারণে ৫ শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া বন্যার ভয়াবহতা দেখতে হয়েছে মিসর, ফিলিপাইন, যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, ইথিওপিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ব্রাজিল, নাইজার, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের।দাবানল : বরাবরের মতো এবারও অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বেশ কিছু দেশের বনাঞ্চলে ভয়াবহ দাবানল দেখা দেয়। পর্তুগাল, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর পরিস্থিতি বিশ্ব গণমাধ্যমের নজর কাড়ে। বছরের শেষ দিকে দাবানলের ঘটনা ঘটে ইসরায়েলেও! ভারতের উত্তরাখণ্ডের বনাঞ্চলেও বছরের মাঝামাঝি সময়ে ভয়াবহ দাবানল দেখা দেয়। অবশ্য বর্ষার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

বাংলাদেশ সময়: ১০:০১:৩৬   ১১২ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

বিশেষ প্রতিবেদন’র আরও খবর


দক্ষিণ আইচায় স্কুল ছাত্র নয়নের রিমোট কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত লঞ্চ ভাসছে পানিতে
দেশে অর্ধেকের বেশি নারীর বাল্যবিয়ে হয়’
টাঙ্গাইল শাড়ি চিনবেন কীভাবে
ভোলায় চলছে জাটকা নিধন ॥ ইলিশের উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা
ভোলায় শৈত্যপ্রবাহে হাঁড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপন্ন
ভোলার বন্ধন হেলথ কেয়ার চালু করল অনলাইন নার্সিং হোম সার্ভিস
দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে স্কুল উধাওচরফ্যাশনে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান
পরিবারিক ভ্রমণের জন্য ৪ টিপস
তজুমদ্দিনে সরকারি নলকূপ অকেজো, গরমে তীব্রতায় পানি সংকট।
ভোলায় আরো ৫ কূপ খননের পরিকল্পনাদেশর ২৯তম গ্যাস ক্ষেত্রর মর্যাদা পেয়েছে ইলিশা-১ কূপ।

আর্কাইভ