অচিন্ত্য মজুমদার, ভোলাবাণী:॥
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত চারদিকে নদী বেষ্টিত একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা। পূর্বে মেঘনা, উত্তরে ইলিশা, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া নদী আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এর মাঝে ৩ হাজার ৪শ ৩ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ব-দ্বীপ জেলা ভোলা। রূপালী ইলিশ, ধান আর সুপারির জন্য বিখ্যাত এ জেলা। এই জেলায় রয়েছে চর মানিক, চর জব্বার, চর নিউটন, চর নিজাম, চর জংলী, চর মনপুরা, চর ফয়েজ উদ্দিন, চর জহিরউদ্দিন, চর কচুয়া, চর সৈয়দ, ভাসান চর, চর পাতিলা, চর কুকরী মুকরী ও ঢালচর সহ ছোট বড় অসংখ্য চর। জেলার চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব চরে লুকিয়ে আছে অপরূপ সৌন্দর্য। দ্বীপের অপূর্ব সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য আর অপরূপ সূর্যাস্তের দৃশ্য না গেলে অনুধাবন করা অসম্ভব।জেলা সদর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে চরফ্যাশন উপজেলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রায় দেড় শত বছর আগে জেগে উঠা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর। এই চরের তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকতটি অপরূপ সৌর্ন্দয্যমন্ডিত। বিচ্ছিন্ন এই ঢালচর থেকে প্রায় দেড় ঘন্টার নদী পথ ট্রলারে পারি দিয়ে বঙ্গোপ সাগরের সর্বদক্ষিণের মোহনায় মনোরম ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে। চারপাশে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে সারি সারি কেওড়া গাছ। তাড়ুয়ার সৈকতে দেখা মিলবে চকচকে সাদাবালি আর লাল কাঁকড়ার মিছিল। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কোলাহল, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য তো আছেই। কর্মব্যস্ত যান্ত্রিক জীবনের মাঝে অবকাশ যাপনের জন্য প্রকৃতিপ্রেমীদের আকর্ষণের কেন্দ্র হতে পারে এই ঢালচর।
তাড়ুয়া ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল:
ঢালচরের মোট আয়তন হচ্ছে ৩১.৩১ বর্গ কিলোমিটার এর মধ্যে প্রায় ২৮.২০ বর্গ কিলোমিটার জুড়েই রয়েছে সুবিশাল ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এর মধ্যে তাড়ুয়ার বন অন্যতম। এই বনে রয়েছে গেওয়া, গড়ান, কেওড়া, বাইন, রেইনট্রিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ। শীত এলেই এখানে দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির। এখানে পরিকল্পিত ভাবে বনাঞ্চল শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। উল্লেখযোগ্য কোন হিংস্র প্রাণী বাস না করলেও এখানে রয়েছে শিয়াল,বন বিড়াল, হরিণ, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। বনের মধ্যেদিয়ে বয়ে যাওয়া সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা ভেতরের দিকে গেলেই দেখা মিলবে শান্ত-সুনিবিড় বিশালাকৃতির প্রাকৃতিক শীতল মাঠ। স্থানীয়ভাবে এটি বরই তলা নামে পরিচিত।
তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকত:
বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা তাড়ুয়ার দ্বীপের সাদা বালির বিশাল সমুদ্র সৈকতে দেখা মিলবে অপরূপ নোনা পানির ঢেউ। ছোট আর দেশের বিখ্যাত সমুদ্র সৈকতগুলোর তুলনায় অপরিচিত হলেও এই সৈকতের সৌন্দর্য অতুলনীয়।
এই সৈকতের বালিতে অবিরাম ছুটে বেড়ায় লাল কাঁকড়ার দল। মানুষ বা অন্য কোনকিছুর উপস্থিতি টের পেলে চোখের নিমিষেই এরা লুকিয়ে পরে বালির গর্তে। লাল কাঁকড়াদের এই অপূর্ব লুকোচুরি দেখতে হলেও তাড়ুয়ার সৈকতে ঘুরে আসা উচিৎ।
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত:
দিনের প্রথম প্রহরে তাড়ুয়া সৈকতে দাড়ালে দেখা যাবে সমুদ্র থেকে ভেসে ওঠা লাল টকটকে সূর্য সিঁড়ি বেয়ে একপা দু’পা করে ঊর্ধ্বগগনের পথে এগোচ্ছে। আর সন্ধ্যায় দেখা মিলবে সমুদ্রের ঢেউয়ে সেই সূর্যের বিলীন হওয়ার অপূর্ব দৃশ্য।
এই সমুদ্র সৈকত, তাড়ুয়ার বন আর বনের ভেতরে প্রাকৃতিক মাঠের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে চিত্রায়িত হয়েছে বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য বাংলা সিনেমার দৃশ্য।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ ভোলায় পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা প্রচুর। জেলার ছোট ছোট দ্বীপগুলোকে কাজে লাগিয়ে এখানকার ইকোটুরিজমকে উন্নত করা সম্ভব। এজন্য ভোলার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে এখানকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে বলে এলাকাবাসী মনে করেন। ফলে আরও বেশি পর্যটকের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে এই দ্বীপ জেলাটি।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০২:২৮ ১৩৬৪ বার পঠিত |