ছোটন সাহা।।ভোলাবাণী।। ভোলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নে পাঙ্গাশিয়া গ্রামের নিখোঁজ চার জেলে পরিবারের স্বজনদের মধ্যে চলছে শোকের মাতম।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে সাগরে ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ২১ জেলের সন্ধান মেলেনি ১৫ দিনেও। নিখোঁজদের মধ্যে লালমোহনের চার জেলে এবং চরফ্যাশনের ২১ জেলে রয়েছে। সেই ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ জেলেরা বেঁচে আছেন নাকি সলিল সমাধি ঘটেছে, তাও জানে না পরিবারের কেউ। অশ্রু ভেজা নয়নে স্বজনদের এমন অপেক্ষার প্রহর যেন কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।
কারো অপেক্ষা স্বামীর জন্য, কারো সন্তানের, আবার কারো বা বাবার জন্য। প্রিয়জনের ফেরার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারা।
কিন্তু ১৫ দিনেও ফিরে না আসায় অজানা শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
স্বজনদের হারিয়ে শোকে স্তব্দ পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিতে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। তবে নিখোঁজদের উদ্ধারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
নিখোঁজ জেলের স্বজনরা জানান, গত ২০ অক্টোবর চরফ্যাশনের নুরাবাদ গ্রামের সৈয়দ মাঝির ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যান তারা। ওই ট্রলারে ছিলেন ২২ জেলে। ২৪ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের মাছ ধরার ট্রলারটি ডুবে যায়। এ ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন তারা।
অভাবের সংসারে পরিবারের মুখে একটু হাসি ফোটাতে দুর্যোগ উপেক্ষা করেই মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন তারা। এরপর থেকে ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও তাদের আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিখোঁজদের না পেয়ে তাদের পরিবারে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা। তারা বেঁচে আছেন নাকি সলিল সমাধি হয়েছে তা বলছে পারছেন না স্বজনরা। দুর্ঘটনার পর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই তাদের। তবে তারা যেন জীবিত ফিরে আসে এমনই প্রত্যাশা তাদের।
লালমোহনের পাঙ্গাশিয়া গ্রামের নিখোঁজ জেলে বাবুলের মা শাহিনুর বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ছেলে আর ফিরে এলো না, তার কোনো খোঁজ পাইনি, শুনেছি ট্রলার ডুবে গেছে। সে কোথায় আছে। তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে কে দেখবে।
একই গ্রামের নিখোঁজ ইব্রাহিমের স্ত্রী ইয়াসমিন বেগম স্বামীর চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতেন তিনি (ইব্রাহিম)। কাজ না থাকায় প্রথমবারের মত সাগরে মাছ ধরতে যান, কিন্তু ঝড়ের দিন তাদের ট্রলার ডুবে যায়। ট্রলারডুবির পর থেকে তাকে ফোনে পাচ্ছি না। মাছ ধরতে যাওয়ার আগে বলেছিলেন, কিছু টাকা দেনা আছি, ফিরে এসে সেই দেনা শোধ করবো, তোমরা চিন্তা করো না। স্বামী সেই যে গেল আর ফিরে এলো না, এখন এই দুই ছেলে ও এক মেয়েকে কে দেখবে। কে সংসার চালাবে।
একই অবস্থা নিখোঁজ জেলে আবু কালামের পরিবারেও। কালামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, তিন মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার। তিনি বলেছিলেন (কালাম) মেয়ে বড় হয়েছে, তাকে বিয়ে দিতে হবে। এখন কে সন্তানদের কথা ভাববে, আমাদের আর কেউ নেই।
তিন ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন নিখোঁজ জেলে সালাউদ্দিনের স্ত্রী পিয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ধার-দেনা করে নতুন ঘর তুলেছি, এখন কে দেখবে আমাদের। পরিবারে তিনি উপার্জন করতেন। এখন আমাদের দেখার কেউ নেই। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই নিখোঁজ জেলেদের দ্রুত উদ্ধার করা হোক বা নিখোঁজদের খোঁজ-খবর নেওয়া হোক। আমরা সবাই অসহায় হয়ে পড়েছি।
ট্রলারডুবির ঘটনার পর থেকে তাদের খবর কেউ নিচ্ছে না। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে জেলে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নিখোঁজদের উদ্ধারের দাবি তাদের।
এ ব্যাপারে চরফ্যাশন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান বলেন, ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ জেলেদের তথ্য পেয়ে আমরা তাদের সন্ধান পেতে মৎস্যবিভাগসহ বিভিন্ন স্পটে যোগাযোগ রাখছি। জেলেদের উদ্ধারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের সন্ধান পাওয়া গেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ট্রলার ডুবির ঘটনায় লালমোহনের পাঙ্গাশিয়া গ্রামের চার জেলে ও চরফ্যাশনের নুরাবাদ গ্রামের ১৭ জেলে রয়েছে। এরমধ্যে একজন জীবিত উদ্ধার হলেও বাকিদের সন্ধান নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৭:৩৭ ৮৬ বার পঠিত |