বিশেষ সংবাদদাতা।। ভোলাবাণীঃ
‘আমার স্বামী প্রতিদিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। একা বাসায় আমার কাঁদতে কাঁদতে চোখের জলও শুকিয়ে গেছে। প্রতিদিন বলে তুই মর। তুই মরলে আমি তোর চেয়ে সুন্দর মেয়ে পাব। তোর বাবা-মা আমার বাবার সম্পদ দেখে বিয়ে দিয়েছে। আমি অন্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করলে তোর কি?’
নিহত বর্ণালী মজুমদার বন্যার বক্তব্য এভাবেই সংবাদকর্মীদের জানান শিখা রানী সেন। নিজ মেয়ের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বার বার শিউরে উঠেন তিনি।
জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের বাবুল মজুমদারের মেয়ে বর্ণালী মজুমদারের সঙ্গে পৌর ৬নং ওয়ার্ডের চুনি লাল দের ছেলে মিথুন দে ওরফে রাহুলের বিয়ে হয়। পারিবারিকভাবে বিয়ে হলেও প্রতিদিনই মিথুন ও তার পরিবার বর্ণালীকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করত। নির্যাতন করে কয়েকবার বাসা থেকেও বের করে দেয় বর্ণালীকে।
শেষবার বর্ণালী নির্যাতন সইতে না পেরে ঢাকায় বনশ্রী স্বামীর বাসা থেকে বোরহানউদ্দিন চলে আসে। পরে বর্ণালীর স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি তার মা-বাবাকে অনুরোধ করলে অনেকটা জোর করেই বর্ণালীকে ঢাকায় স্বামীর বাসায় পাঠানো হয়।
বর্ণালী বোরহানউদ্দিন ছেড়ে যাওয়ার সময় তার মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনকে বলেছিলেন, আমি আর ঢাকায় যাবো না। আমার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে লাশ বানিয়ে তোমাদের কাছে পাঠাবে। বর্ণালীর কথাই অবশেষে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। বাবার ভিটায় লাশ হয়েই ফিরলেন বর্ণালী মজুমদার বন্যা।
গেল ২ জুলাই রাতে বনশ্রী এ ব্লকের ২ নম্বর সংলগ্ন বাসা থেকে রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় বর্ণালীর স্বামী তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসক বর্ণালীকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে বর্ণালীর মৃত্যুর খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তার স্বামী মিথুন মরদেহ হাসপাতালে ফেলে আগেই রামপুরা থানায় গিয়ে আটকের অভিনয় করেন। বর্ণালীর পরিবারের পক্ষ থেকে এমনই অভিযোগ করা হয়েছে।
বিষয়টি প্রসঙ্গে রামপুরা থানার ওসি আ. কুদ্দুস ফকির জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বর্ণালীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এরপরই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:০০:৫৮ ২৪১ বার পঠিত |
