নৌকার জয় হবে ইনশাল্লাহ- শেখ হাসিনা

প্রথম পাতা » জাতীয় » নৌকার জয় হবে ইনশাল্লাহ- শেখ হাসিনা
রবিবার, ৪ মার্চ ২০১৮



---ভোলাবাণী ডেক্স।। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে ইনশাল্লাহ নৌকার জয় হবে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে হলে নৌকায় ভোট দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই এটা এখন দেশবাসী বুঝতে সক্ষম হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকালে খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে খুলনা জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে। আমরা চাই বাংলাদেশকে উন্নত করতে। বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী করতে চাই আমরা। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছেন। আপনারা দেশের উন্নয়ন পেয়েছেন। গত নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন, উন্নয়ন হয়েছে। আগামীতে নির্বাচন। আমি আপনাদের কাছে জানতে চাই, এই উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে চান? যদি চান, তাহলে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। আপনারা বলেন, দুই হাত তুলে দেখান, কোনো মার্কায় ভোট দেবেন ওয়াদা করেন। এ সময় উপস্থিত লাখো জনতা হাত তুলে সমস্বরে স্লোগান দিয়ে নৌকায় ভোট প্রদানের অঙ্গীকার করেন।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের রায় প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া করাপশন করেছেন। কোর্টের রায়ে তিনি কারাগারে। এখানে সরকার বা আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই। করাপশন করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। অপরাধী যেই হোক তাকে শাস্তি পেতেই হবে। ২৪ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এই বাংলাদেশের মাটিতে রাজাকার, আলবদর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করেছি।

এর আগে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে সার্কিট হাউজ থেকে জনসভাস্থলে আসেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী জনসভার পূর্বে মঞ্চের পাশে তৈরি করা একটি বোর্ডে সুইচ টিপে ৬৭৫ দশমিক ৩৭ কোটি টাকার ৪৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১ হাজার ৩৩৬ কোটি ৪ লাখ টাকার ৫২টি নতুন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এর আগে বেলা ১১টায় খালিশপুরের ঈদগাহ ময়দানে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে খুলনা নগরীতে ছিল সাজ সাজ রব। দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটি খুলনায় প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় সফর। এর আগে ২০১৫ সালে তিনি খুলনা শিপইয়ার্ডে এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন।

বৃহত্তর খুলনাসহ বিভাগের ১০ জেলা ও গোপালগঞ্জ জেলা থেকেও জনসভায় লোক আসে। এতে ১০ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় উপস্থিত থাকার কথা ছিল বেলা ৩টায়। কিন্তু সকাল ১০ থেকে বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরাসহ খুলনার আশেপাশের জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন ও নৌকা প্রতীক নিয়ে জনসভাস্থলে আসতে থাকেন। দুপুর ২টার মধ্যে জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। জনসভাস্থলে জায়গা না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে ৫ কিলোমিটার জুড়ে লোক সমাগম ঘটে। এদিকে সকাল থেকেই খুলনা শহরের বেশিরভাগ মার্কেট ও দোকান বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া সকাল থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুলনার সার্বিক উন্নয়নের ওয়াদা করেছিলাম। আজ ১০০টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছি। এই অঞ্চলকে আরও উন্নত করতে চাই। জুট মিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন কলকারখানার উত্পাদন শুরু করেছি। রূপসা ব্রিজ জাপান সরকারের সহযোগিতায় শুরু করেছিলাম। আজ সেটা বাস্তবায়ন হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা করেছি। ৬৮ লাখ মা বোনেরা ভাতা পাচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের বই কেনার দায়িত্ব নিয়েছি। জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ বই উত্সব হয়। স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ভোলায় অনেক গ্যাস পাওয়া গেছে। সেই গ্যাস পাইপলাইনে করে বরিশাল ও খুলনায় যেন আসে সেই ব্যবস্থা করে দেবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, মংলা বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, মংলা বন্দর পর্যন্ত যেন রেললাইন যায়, পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে যশোর-বাগেরহাট হয়ে মংলা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন যাবে সে প্রকল্প বাস্তবায়নে তাঁর সরকার কাজ শুরু করেছে। কেউ কুঁড়েঘরে থাকবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা মানুষও গৃহহারা থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষের ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় দেড় লাখ মানুষকে ঘর করে দিয়েছি।

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, মাহবুব উল আলম হানিফ, শেখ হেলালউদ্দিন এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সালাম মুর্শেদী প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে জনসভায় উপস্থিত ছিলেন এইচ টি ইমাম, সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান প্রমুখ।

৪৮টি নতুন প্রকল্প কাজের উদ্বোধন

খুলনা প্রতিনিধি এনামুল হক জানান, প্রধানমন্ত্রী গতকাল খুলনায় যে ৪৮টি নতুন প্রকল্প কাজের উদ্বোধন করেন এরমধ্যে রয়েছে গল্লামারী-বটিয়াঘাটা-দাকোপ-নলিয়ান ফরেস্ট সড়ক, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাডেমিক ভবন, চালনা মোবারক মেমোরিয়াল কলেজের একাডেমিক ভবন, খুলনা আইডিয়াল কলেজের একাডেমিক ভবন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের একাডেমিক ভবন, খুলনা ইসলামিয়া কলেজের একাডেমিক ভবন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, মহেশ্বরপাশা সরকারি শিশু পরিবার হোস্টেল ভবন, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ভবন, মেডিক্যাল কলেজের অডিটোরিয়াম ভবন, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল ভবন, তেরখাদা থানা ভবন, রূপসা ফায়ার স্টেশন ভবন, রূপসা-সেনহাটি নদী ফায়ার স্টেশন, সিটি করপোরেশনের সিআরএইচসিসি ভবন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হোস্টেল ভবন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল (বর্ধিতাংশ) এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল (ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ), শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ ভবন (ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ), মাইকেল মধুসূদন দত্ত অতিথি ভবন (বর্ধিতাংশ), আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগার (বর্ধিতাংশ) ও খুলনা ওয়াসা ভবন।

৫২টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

প্রধানমন্ত্রী ৫২টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরমধ্যে রয়েছে খুলনা অংশের খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা সড়ক, পাইকগাছা কৃষি কলেজ, বটিয়াঘাটা কৃষি কলেজের একাডেমিক ভবন, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমেজিং ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালের এ ব্লকের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্সেস ও স্টাফদের পৃথক ডরমেটরি, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বাংকার, সদর হাসপাতালকে ১৫০ বেড থেকে ২৫০ বেডে উন্নীতকরণ, সিভিল সার্জনের অফিস ভবন, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের আবাসিক ভবন।

দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ

করতে প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব আপনাদের ওপরই বর্তায়। কাজেই উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আপনারা পেশাগত দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করুন। গতকাল দুপুরে আইইবি খুলনা সেন্টারে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (ইআইবি)-র ৫৮তম কনভেনশন অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন। দেশের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্প খরচে টেকসই যন্ত্রপাতি নির্মাণ, স্থাপনা নির্মাণ ও মেরামত বিষয়ে প্রচুর গবেষণা করতে হবে। তিনি বলেন, বিকল্প জ্বালানি ও জ্বালানি-সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন, স্বল্প-ব্যয়ে বাড়িঘর নির্মাণের কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে টেকসই করার জন্য পরিবেশ বান্ধন অবকাঠামো, ভূমিকম্প ও দুর্যোগ প্রবণ প্রযুক্তির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

ইআইবি’র প্রেসিডেন্ট কবির আহমেদ ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর, ইআইবি খুলনা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাদিক এবং কনভেনশন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান পলাশ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৭:৩৭   ৪১৬ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জাতীয়’র আরও খবর


কাউকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করতে দেব না : প্রধানমন্ত্রী
বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট ব্যবসায়ীসহ গ্রাহকবিদ্যুত বিহীন মনপুরা ॥ তীব্রতাপদাহে ভোগান্তিতে সাধারন মানুষ
আজ পহেলা বৈশাখ
সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন: প্রধানমন্ত্রী
জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে , ভোটের চিন্তা থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এডিবির আরও সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনেছে : প্রধানমন্ত্রী
১০ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিলেন প্রধানমন্ত্রী
ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে ৫ কেজি গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ

আর্কাইভ