।।ভোলাবাণী।। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, মিয়ানমার একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে। আগামী ৩০ নভেম্বরে আগেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে জয়েন ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে। তারা টার্ম অব রেফারেন্স (টিআর) তৈরি করবে এবং সেই টিআর এর ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
তিনি জানান, আগামী ২০ নভেম্বর মিয়ানমারে নেপিডোতে এশিয়া-ইউরোপ ফোরামের মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে যোগদান করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। এর আগেই বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে জয়েন ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে। তারা টার্ম অব রেফারেন্স তৈরি করবে। সেই টার্ম অব রেফারেন্সের ওপর ভিত্তি করেই দুই দেশের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল মিয়ানমার থেকে ফেরার একদিন পর বৃহস্পতিবার বিকালে সচিবালয় নিজ কার্যালয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা হাঁটা শুরু করেছি, গন্তব্যে পৌঁছাবই। আমরা দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধানের কথা বলেছি। এভাবে সমাধান না হলে এরপর আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে যাবো।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী এবং সর্বশেষে সে দেশের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা কেউই অস্বীকার করেননি যে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবেন না। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। তারা বলেছেন, এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, আমি মিয়ানমারের নেতাদের বলেছি, রোহিঙ্গারা যদি বেশি দিন বাংলাদেশে থাকে, তাহলে বিশ্ব জঙ্গিবাদের সঙ্গে ওরা একত্রিত হতে পারে। এটি যদি হয় তাহলে তোমরা এবং আমরা সবাই সমস্যায় পড়বো। তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে। তবে তারা একটি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন চায়। সেজন্য কিছুটা সময় লাগবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, সুচিকেও আমি একই কথা বলেছি। ওনাকে বাড়তি যা বলেছি তা হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। একইভাবে আপনিও মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে আপনি সেখানে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করেন।
তবে সূচি আমাকে বলেছেন, রোহিঙ্গারা আসতে চায় না। আমি তাকে বলেছি, রোহিঙ্গারা কেন নিজ দেশে আসতে চায় না সেটা আপনারা ভালো জানেন। আসার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, রাখাইনে সেনা অভিযানের আগে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার কথা মিয়ানমারের কর্মকর্তারা আমাকে জানায়। তবে এ ব্যাপারে আমি স্পষ্ট করে তাদের বলেছি, এই দেশে (মিয়ানমার) কোনো দুষ্কৃতকারীকে আমরা স্থান দিই না। এক ইঞ্চি জায়গাও ব্যবহার করতে দেই না।
তাদের বলেছি, কোনো জঙ্গির তালিকা বা আস্তানা থাকলে আমাদের দাও, আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার কী বলে অভিহিত করেছে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, তারা কেউই রোহিঙ্গা বলে অভিহিত করেনি। যেহেতু তারা ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে, সেহেতু তারা মিয়ানমারের নাগরিক ধরেই নেওয়া যায়। তবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা বাংলাদেশি। তখন আমি বলেছি, বিশ্বব্যাপী ৩৫ কোটি মানুষ বাংলায় কথা বলে। তারা কি সবাই বাংলাদেশের নাগরিক? মিয়ানমার থেকে যারা বাংলাদেশে গেছে তারা কেউই বাংলা বলতেও পারে না, বোঝেও না।
মিয়ানমার সন্ত্রাসীদের কোনো তালিকা দিয়েছেন কী না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা একটি তালিকা দিয়েছে। তবে সংখ্যা কত আমি জানি না। তালিকায় অভিযুক্তদের ঠিকানা নেই, বাবা-মায়ের নাম নেই। এটি একটি অসম্পূর্ণ তালিকা।
মিয়ানমার আন্তর্জাতিক চাপে আছে বলে কি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ডেকে নিয়ে ‘আইওয়াশ’ করেছে কী না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, দেখুন, আমি কোনো কিছুই নেগেটিভলি দেখি না। আমি মনে করি-এটা তাদের সমস্যা তারা সমাধান করবে। এটা আমরা বিশ্বাস করি এবং মনে করি। আমরা মনে করি আমাদের এই সমস্যা ওভারকাম করতেই হবে। আমরা সেটাই মনে করি। এ সফরকে নেতিবাচক হিসেবে দেখেন কিনা -সাংবাদিকরা জানতে চাইলে
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, না দেখি না। এটি একটি সফল সফর।
বাংলাদেশ সময়: ২১:২৪:২৮ ৬৭১ বার পঠিত |