বন্যা ভয়াবহ আকার নিচ্ছে

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বন্যা ভয়াবহ আকার নিচ্ছে
সোমবার, ১৪ আগস্ট ২০১৭



দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে যাচ্ছে।।।ভোলাবাণী সারাবাংলা।।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে দেশের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। প্রায় প্রতিটি নদীতে পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নদীভাঙনও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্লাবিত হয়েছে কয়েকশ গ্রাম। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সঙ্কট। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু-পাখিরও তীব্র খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাস মতে দেশের প্রধান নদ নদীতে পানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। রবিবার দেয়া পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, উত্তরাঞ্চলে বহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় আগামী ৭২ ঘণ্টায় বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। পূর্বাঞ্চলে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানিও বাড়তে পারে।

জামালপুরে দ্বিতীয় দফা বন্যায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও অনেক ঘরবাড়ি। এখনো হু হু করে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া, চিনাডুলী, বেলগাছা, পাথর্শী, কুলকান্দি এবং দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ, চুকাইবাড়ি ও চিকাজানী ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামের কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

পানিতে ইসলামপুর উপজেলার বলিয়াদহ-আমতলী সড়কসহ বেশ কয়টি সড়ক তলিয়ে গেছে। বিস্তৃর্ণ নিম্নাঞ্চলে সদ্য রোপন করা আমন ধান তলিয়ে গেছে। প্রতি মুহূর্তে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার কারণে ইসলামপুরের চরাঞ্চলের ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

টানা বৃষ্টিতে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, ক্ষেতলাল, আক্কেলপুর ও সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে এক হাজার ২শ’হেক্টর জমির রোপা আমন ও শাক-সবজি। ভেসে গেছে কমপক্ষে ৫০০টি পুকুরের প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মাছ।

পানি বৃদ্ধির ফলে ক্ষেতলাল উপজেলার বড়তারা, মামুদপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ মাঠ এবং জয়পুরহাট সদর উপজেলা ধলাহার ও চকবরকত ইউনিয়নের সব মাঠের ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসক মো. মোকাম্মেল হক জানান- টানা বর্ষণে জেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রোপা আমন ধানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক সুধেন্দ্রনাথ রায় জানিয়েছেন- জেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় এক হাজার ২শ’হেক্টর জমির রোপা আমন ধান ও শাক-সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মারজান হোসেন জানান- জেলার ছোট যমুনা, তুলশীগঙ্গা হারাবতি নদীর পানি এখন বিপদসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যায় এ পর্যন্ত দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের কাঁঠালবাড়ি থেকে চওড়াহাট পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কুড়িগ্রামের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়ক তলিয়ে যাওয়ার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলাসহ সোনাহাট স্থল বন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা।

কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বরকত মো. খুরশিদ আলম জানান, কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কে সাড়ে চার কিলোমিটার ও কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়কের সাড়ে নয় কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে আছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম ভুরুঙ্গামারী সড়কের পাটেশ্বরী এলাকায় দুটি পয়েন্ট ধসে গেছে।

কুড়িগ্রাম পৌরসভা এলাকার ভেলাকোপায় দুলু মিয়ার দেড় বছরের শিশু বাবু বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। এছাড়া হলোখানা ইউনিয়নের খামার হলোখানায় খালেকের স্ত্রী জোসনা সাপের কামড়ে মারা গেছেন। বন্যার পানিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সাড়ে পাঁচশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমারের পানি বিপদসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে রৌমারী, রাজিবপুর, চিলমারী, উলিপুর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী ও সদর উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ।

সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের বাংটুর ঘাট এলাকার আছিয়া খাতুন জানান, রবিবার সকালে বাঁধ ভেঙে ঘর-বাড়ি তলিয়ে গেছে। শুধুমাত্র গরু ছাগল নিয়ে কাঁঠালবাড়ি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। স্কুলের মাঠও পানিতে তলিয়ে গেছে।

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী জানান, আমার ইউনিয়নের ২৭টি ঘরবাড়ি পানির প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, বন্যা মোকাবেলায় সব রকমের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য সাড়ে ১১ লাখ টাকা ও পাঁচশ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

রবিবার দুপুরে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর দোয়ানী পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ও কুলাঘাট পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিস্তা ও ধরলা নদীর ৬৩টি চর এখন পানিতে থৈ থৈ করছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার পাঁচ উপজেলার পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ১৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পানিতে ডুবে মারা গেছে দুই শিশু। তাদের একজনের নাম মোস্তফা বাবু বলে জানা গেলেও অন্যজনের নাম জানা যায়নি। পানিতে চারিদিকে থৈ থৈ করায় মরদেহ দাফন করার মতোও জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।

মোস্তফা লাইনের উপরে পানি উঠে যাওয়ায় সকাল থেকে সাময়িক বন্ধ রয়েছে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে রেল চলাচল। তিস্তা ব্যারাজের সবকটি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ব্যারাজ রক্ষার্থে রবিবার রাত দুইটার দিকে কেটে দেয়া হয়েছে ফ্লাট বাইপাশ সড়ক। এতে রাতেই পানি ঢুকে পড়ে হাতিবান্ধা উপজেলার লোকালয়ে। পানিতে তলিয়ে যায় উপজেলার মেডিকেল মোড় রাস্তাসহ পাশপাশের রাস্তা।

ব্যারাজ এলাকায় জারি করা হয়েছে রেড এলার্ট। লোকজনকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে করা হচ্ছে মাইকিং।

হাতিবান্ধা উপজেলার তিস্তা পাড়ে কোনোরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই বানিয়ে নিচ্ছে বানভাসী মানুষ। চরম সংকট দেখা দিয়েছে শুকনা খাবারের। ঘোলা পানি পান করায় ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর। পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা জমির সদ্য রোপনকৃত আমন ধান, সবজিসহ নানা ফসল। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিধু সুধন ভুষন জানান, বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা জানালেও এর পরিমাণ জানাতে পারেননি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় দুই হাজার, হাতিবান্ধায় দুই হাজার, কালিগঞ্জে এক হাজার, আদিতমারীতে তিনশ ও সদর উপজেলায় ১১টি পুকুর ডুবে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে এসব পুকুরের মাছ।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার সুজা উদ-দৌলা জানান, বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোতে আগাম ত্রাণ মজুদ রয়েছে। সেখান থেকে বিতরন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

জেলা প্রশাসক সফিউল আরিফ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বন্যা কবলিত এলাকায় সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।

সুনামগঞ্জে বন্যার পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। অবিরাম বর্ষণে জেলার নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার লক্ষাধিক মানুষ। তলিয়ে গেছে পথ ঘাট ও ফসলি জমি। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার অনেক সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, রবিবার সকাল ১০টায় সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া পানিতে রোপা আমনের ৬৬৫ হেক্টর বীজতলা তলিয়ে গেছে। তাহিরপুর উপজেলার সাত ইউনিয়নের লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। উপজেলার রক্তিনদীর পার্শ্ববর্তী আনোয়ারপুর বাজার ব্রিজ ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। খাবার না পেয়ে অনেক মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, বন্যায় পানিবন্দী মানুষের জন্য জেলার ১১টি উপজেলায় তিন মেট্রিকটন করে জিআর চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ১০ হাজার করে জিআর ক্যাশ দেয়া হয়েছে। তবে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৩:৫৬   ৩১৪ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


ভোলা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ভোলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ২৫
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৪৬২২ ফিলিস্তিনি নিহত
মুজিব শতবর্ষে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পুরনে একধাপ এগিয়ে মনপুরায় বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস পর্যটন কেন্দ্রস্থান সচিবের পরিদর্শন ॥
শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন মুফতি মাও: মুজির উদ্দিন
চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি থাকলেও ভোলায় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
লালমোহনে জাগোনারী’র অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর ভোলায় মধ্যরাত থেকে মাছ শিকারে নামবেন জেলেরা
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে আরও ইউরোপীয় দেশ
তজুমদ্দিনে ৮৫৬টি গাছ কেটে রাস্তা চওড়া করার প্রস্তুতি সম্পন্ন ,স্থানীয়দের ক্ষোভ
ভোলায় ডিবির অভিযানে অস্ত্রসহ ৩ দস্যু আটক, অপহৃতরা উদ্ধার

আর্কাইভ