আমার সাংবাদিকতা ও নানা প্রসঙ্গ - মুহাম্মদ শওকাত হোসেন (পর্ব-৬)

প্রথম পাতা » ভোলার মিডিয়া » আমার সাংবাদিকতা ও নানা প্রসঙ্গ - মুহাম্মদ শওকাত হোসেন (পর্ব-৬)
সোমবার, ৫ জুন ২০১৭



--- খলিল উদ্দিন ফরিদ,।।ভোলাবাণী।। আমরা ছিলাম ডেকের যাত্রী। তখন ডিসেম্বর মাস। বেশ শীত পড়ছে। সবাই প্রয়োজনীয় শীতের কাপর সাথে নিয়ে নিয়েছি। ডেকের যাত্রীদের শীত প্রটেকশনের জন্য নদী সংলগ্ন দু’পাশেই প্রটেকশন পর্দা দেয়া রয়েছে। ছেড়া পর্দা আর মাঝে মাঝে ফাঁকা থাকায় আমাদের অবস্থা জরোসরো। হিমেল বাতাস ঢুকে সিক্ত করেদিচ্ছে সবাইকে। তখনকার লঞ্চের পরিবেশ আজকের দিনের যাত্রীরা কল্পনাও করতে পারবেনা। এক দংগল মানুষ লঞ্চের ডেকে স্তুপাকার হয়ে ভেসে ভেসে ঢাকায় চলে আসতো। তবে অনেক মানুষের শাসনিশ্বাস এর গরমে শীত বেচারা কিছুটা হলেও পরাভূত হতো। জগন্য ধরনের নিন্মমানের খাওয়া যা তিন গুন মূল্যে ক্রয় করে খেতে হতো। তবে মাত্রাতিরিক্ত উচ্চ মূল্যের কারনে ওদের রান্না করা খাবার সাধারনত কেবিনের যাত্রীগনই খেতেন। ডেকের যাত্রীরা অনেকেই টিফিন ক্যারিয়ারে রাতের খাবার বহন করে নিয়ে আসতো। বাকীরা খেয়াঘাটের দোকান থেকে অথবা ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে পাউরুটি কলা ক্রয় করে রাখতো রাতে খাওয়ার জন্য। বাথরুমের সামনে সর্বদাই ৮/১০জনের লাইন লেগে থাকতো। এনিয়ে অনেক সময়ই ঝগড়া বিবাদ লেগে যেতো।
আমার কাছে এ সফরটি খুবই উপভোগ্য ছিল যা স্মরণের পাতায় সমহিমায় লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। মানুষের গমগম শব্দে ঘুম হওয়ার কোন জো ছিল না। তাই আমরা চারজন জমিয়ে আড্ডাবাজী করে রাতটা কাটিয়ে দিলাম। ফজরের নামাজের পর সবাই দু’তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে নিলাম। কারন তখন পরিবেশটা বেশ শান্ত ও স্নিগ্ধতায় পরিপূর্ণ ছিল। অবশেষে আটটার দিকে লঞ্চ ঢাকা সদরঘাট পৌঁছলো।
প্রথম থেকেই আমাদের অঘোষিত কো-অর্ডিনেটর মি: মোস্তফা কামালই মূলত আমাদের গাইড হিসেবেও কাজ করেছে। সে আমাদেরকে বলেছিল, আমরা সোজা এমপি হোস্টেলে যাবো। সেখানেই আমাদের থাকা খাওয়ার সব ব্যবস্থা করা আছে। শুধু যাওয়ার অপেক্ষা। আরো জানিয়েছিল এমপি হোস্টেলে শাজাহান ভাই এর পাশের ফ্লাটটি আওয়ামী লীগ (মিজান) এর চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) এর। উনি ঐ বাসায় থাকে না। বাসাটি খালি। আমাদের থাকার ব্যবস্থা ওখানেই হবে। লঞ্চ থেকে নেমে আমরা ঠিক করলাম আমার বন্ধু এবিএম সালেহ উদ্দিন (বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী) এর সঙ্গেঁ বকশীবাজার আলীয়া মাদ্রাসার হোস্টেলে দেখা করে এমপি হোস্টেলে যাবো। সবাই সম্মতি দিলে সদর ঘাট থেকে আমরা দুটি রিকশা করে বকশী বাজার আলীয়া মাদ্রাসার হোস্টেলে ৫৩ (বর্তমান ২৫৩) নম্বর কক্ষে সালেহ ভাইর রূমে গিয়ে তাকে পেলাম।
এবিএম সালেহ উদ্দিন তখন মাদ্রাসা ছাত্রদের ঐতিহ্যবাহী অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক। এবং ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসার একজন সনামধন্য নেতা। তিনি আমাদের পেয়ে তো আনন্দে আত্মহারা। হোস্টেলের পাশেই ‘পপুলার’ এবং ‘আশা’ নামের দুটা রেস্টুরেন্ট ছিল। আমরা ‘আশায় গেলাম। ওখানে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী গরুর পায়া থাকে ওরা বলে ‘নেহারী’ সাথে তন্দুল রুটি দিয়ে নাস্তা পর্ব সারা হলো। রূমে এসে সালেহ ভাই আমাদেরকে আলীয়া হোস্টেলে থাকার অনুরোধ জানায়। আরো জানালো, হোস্টেলে নতুন কিছু রূম তৈরী হয়েছে, এখনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। তাছাড়া প্রয়োজনীয় বিছানা বেডিং সবই আছে। আমি স্বেচ্ছায় আসা এ আমন্ত্রনটি একেবারে নাকচ করতে পারলাম না। হালকা করে বললাম হা, প্রস্তাবটি উত্তম। তাছাড়া প্রেস ট্রেস যেহেতু এদিকটায় তাই এখানে থাকতে পারলেই ভালো হতো। আবার এমপি সাহেবের আমন্ত্রন বলে কথা। আগে সেখানে যাই, তারপরে সিদ্ধান্ত নেবো- কোথায় থাকবো।
যথারীতি আমরা ১১টায় এমপি হোস্টেলে গেলাম। সেখানে সাংবাদিক আমির খসরু ভাই (মরহুম) আগেই এসে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সাজাহান ভাই আমাদের পেয়ে খুবই খুশি হলেন। আমাদের আসার মধ্যে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের আলো খুজে পেলেন। অনেক সময় ধরে নানা বিষয়ে আলোচনা হলো। সাজাহান ভাই আমাদের স্ক্রীপট সমূহ দেখে খুবই সন্তুষ্ট হলেন। ওখানেই আমরা লাঞ্চে আপ্যায়িত হলাম। এক পর্যায়ে সাজাহান ভাই জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের ব্যাগেজ-লাগেজ দেখতেছি না, কোথায় উঠেছো। আমি সঙ্গে সঙ্গে সালেহ ভাইকে দেখিয়ে বললাম আলীয়া হোস্টেলে এই নেতার তত্ত্বাবধানে। সাজাহান ভাই খুবই খুশি হয়ে বললো, খুব সুন্দর যায়গা। ওখানে পপুলার রেস্টুরেন্টে খুব কম দামে ভাল খাদ্য পাওয়া যায়। শেরে বাংলা নগর সংবাদ ভবন সংলগ্ন এমপি হোস্টেলের সাইজ ও অবস্থা দেখে আমার মনে হলো আমরা বকশী বাজার উঠেছি শুনে উনি বেশ স্বস্থি পেয়েছেন। নইলে এখানে অতিরিক্ত ৪জন মানুষ সপ্তাহ খানেক থাকতে হলে আমাদেরকেও কষ্ট করতে হতো আর উনাকেও বারংবার বিব্রত হতে হতো। যাক উভয়ই কস্টও বিব্রত হওয়া থেকে মুক্তি পেলাম। অগত্যা আমরা বকশী বাজার আলীয়া হোস্টেলে সালেহ ভাইয়ের আতিথ্য গ্রহণ করে ঘাটি গেড়ে বসলাম।
পরের দিন আমরা আমির খসরু ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বিশিষ্ট অনুবাদক সাহিত্যিক মোস্তফা হারুন ভাই এর বাসায় গেলাম। ভোলার এই সুযোগ্য সন্তান বাংলা সাহিত্য বিশেষ ভাবে অনুবাদ সাহিত্যে বিশাল অবদান রেখে গেছেন। যদিও তাঁর যোগ্য স্বীকৃতি কিংবা মূল্যায়ন থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। তিনি সেই প্রতিভাবান ব্যক্তি যিনি উর্দু ও হিন্দী সাহিত্যকে বাঙালী পাঠকদের কাছে শুধু পরিচিত নয় জনপ্রিয় করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। সাদাত হাসান মান্টো, কৃষান চন্দর সহ প্রখ্যাত সব উর্দু হিন্দি সাহিত্যেকদের শ্রেষ্ঠ সব গল্প উপন্যাস অনুবাদ করে বাংলাভাষিদের কাছে পরিবেশন করেছেন। তাঁর অনুবাদ খুবই সহজ সরল যেখানে ভিন্ন ভাষায় অবোধগম্যতা মোটেই নেই। ফলে সে সময় তার বইগুলো পাঠকদের মধ্যে হটকেকের মতো চালু ছিল। তাঁর ইংরেজী থেকে অনুদিত ‘ব্রেইন ফ্যান্টাসি’ নাটকটি বিটিভিতে প্রচারের পর মামলা হয়ে তা হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। প্রতিদিন পত্রিকায় এর খবর বের হতো, তাতে বইয়ের কাটতি বহুগন বেড়ে যায়।—চলবে (মুহাম্মদ শওকাত হোসেনের ফেসবুক থেকে নেয়া।)

বাংলাদেশ সময়: ১৫:০৩:০৮   ২৪৫ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ভোলার মিডিয়া’র আরও খবর


ভোলার সংবাদিক ও শুভানুধায়ীদের পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিওজেএ নেতৃবৃন্দ
ভোলায় পিআইবির আয়োজনে সাংবাদিকদের ৩ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে সার্টিফিকেট বিতরণ
ভোলায় তিনদিন ব্যাপী সাংবাদিকদের বেসিক জার্নালিজম ট্রেনিং এর উদ্বোধন
ভোলায় আনন্দ টিভি’র ৬ষ্ঠ বর্ষপূর্তি উদযাপন
ভোলায় জমকালো আয়োজনে তরঙ্গ নিউজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত
তজুমদ্দিনে কেক কাটা, র‍্যালি ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে এশিয়ান টিভির ১১ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত ।
লিটন সভাপতি,দুলাল সম্পাদক বাংলাদেশ অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন লালমোহন উপজেলা কমিটি গঠন
সভাপতি নোমান সিকদার , সাধারণ সম্পাদক মিজান নয়নবাংলাদেশ অনলাইন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন চরফ্যাশন উপজেলা কমিটি গঠন
ভোলা জেলা অনলাইন প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন
ভোলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনওর মতবিনিময়

আর্কাইভ