আমার সাংবাদিকতা ও নানা প্রসঙ্গ - মুহাম্মদ শওকাত হোসেন (পর্ব-৫)

প্রথম পাতা » ভোলার মিডিয়া » আমার সাংবাদিকতা ও নানা প্রসঙ্গ - মুহাম্মদ শওকাত হোসেন (পর্ব-৫)
শুক্রবার, ২ জুন ২০১৭



---খলিল উদ্দিন ফরিদ,।।ভোলাবাণী।। বরিশালের জেলা প্রশাসক ছিলেন মরহুম আবদুল আউয়াল।সি এস পি অফিসার। উনি পরবর্তীতে ধর্ম সচিব হিসেবে অবসরে যান। তখন ভোলার প্রবীণ রাজনীতিবিদ মরহুম ওয়ালিউল্লাহ মিঞা প্রায়ই ভোলা আসতেন।ততকালিন প্রধান মন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ছিলেন তার বন্ধু। শুনলাম ওয়ালি ভাই এর সঙ্গে পরানগঞ্জ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মরহুম তোফাজ্জল হক স্যার যাবেন বরিশালের জেলা প্রশাসকের কাছে। আমিও তাদের সঙ্গী হলাম। সন্ধ্যায় ওয়ালি ভাই আর আমি গাজিপুরে তোফাজ্জল স্যারদের বাড়িতে যাই। আমরা দরাজদিলের মানুষ ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা মোফাজ্জল হকের (মরহুম) অতিথ্য গ্রহণ করি। তিনি রাতে খাসি জবাই দিয়ে সঙ্গে হাঁসের গোশত এবং মহিষের দধি দিয়ে আপ্যায় আমাদেরকে করান। ভোর রাতে আমরা গাজিপুর ঘাট থেকে স্টিমারে করে বরিশাল যাই।
ডিসি সাহেবের কাছে আমি একটি আবেদন পত্র নিয়ে গিয়েছিলাম ভোলা থেকে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের অনুমতি চেয়ে।
এর আগেই পত্রিকার নাম নির্বাচনের পরই আমরা বসে পত্রিকার সম্পাদক নির্ধারন করেছি। শাজাহান ভাই এর প্রস্তাব ছিল আমাকে সম্পাদক করার। কিন্তু আমি সেই বছরই ভোলা কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেছি। আমার ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের থেকে এম এ করবো। তাই আমি বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করলাম, তবে সার্বিক বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগীতার আশ্বাস দিলাম। তখন সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতাহীন সুন্দর মনের একজন শিক্ষিত স্বজ্জন ব্যাক্তি আবু সুফিয়ান বাহার ভাইয়ের প্রস্তাব দেন বন্ধু মোস্তফা কামাল। বাহার ভাই এক সময়ে খরকী স্কুলে মোস্তফা কামালের শিক্ষক ছিলেন। সে সুত্রে মোস্তফা সাহেব সব সময় তাকে বাহার স্যার বলে সম্বোধন করতেন এবং মানতেন। তাই আমার আবেদন পত্রে সম্পাদক হিসেবে আবু সুফিয়ান বাহার এর নাম উল্লেখিত ছিল।
ডিসি সাহেব উনাদের প্রসঙ্গঁ শেষ করে আমার দরখাস্তটি হাতে নিলেন। বললেন, এটা হবে না নির্ধারিত ফরমে দরখাস্ত করতে হবে। তিনি বিচার শাখা থেকে একটি ফরম আনিয়ে আমাকে দিলেন, ফিলাপ করার জন্য। আমি আটকে গেলাম প্রকাশকের ঘরে এসে। আমরা সম্পাদক ঠিক করেছি কিন্তু প্রকাশক ঠিক করিনি। আজকের দিনের পাঠক বিশেষ করে সাংবাদিকরা অবাক হবেন যে, আমি নিজেও জানতাম না পত্রিকার মালিকই হন প্রকাশক বা প্রকাশকই পত্রিকার মালিক। আমাদের ৩জনের কেউই জানে না। ডিসি সাহেবও কিছু বলেন নি, উনাদের জিজ্ঞেস করলে তারা আমার নাম লিখে দেয়ার কথা বললেন। তাও না জেনে। যেহেতু বাহার ভাইর নাম আছে আরেকজন বলতে আমিই একটিভ তাই হয়তো বলেছেন। আমি চিন্তা করলাম যেহেতু সম্পাদক ঠিক করা আছে প্রকাশক হিসেবেও তার নামই দেই। ডিসি সাহেবকে প্রকাশক সম্পাদক একজন হলে সমস্যা আছে কিনা জিজ্ঞেস করলাম। উনি বললেন নেই। তাই ঐ মুহুর্তে আমি সাপ্তাহিক ভোলাবানীর প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে আবু সুফিয়ান বাহার এর নাম লিখে দিলাম। এভাবেই আমাদের যৌথ উদ্যোগ যার নেতৃত্বে ছিলেন শাজাহান ভাই।, সেই পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক হলেন আবু সুফিয়ান বাহার ভাই।
জেলা প্রশাসক মহোদয় আমার দেয়া আবেদন পত্রটি গ্রহণ করেন। তিনি বললেন এখন থেকে প্রক্রিয়া শুরু হলো। নামের ক্লিয়ারেন্স এর জন্য যাবে তথ্য মন্ত্রণালয়ে, পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য যাবে স্বরাস্ত্র মন্ত্রণালয়ে। সবকিছু আসতে কয়েক মাস সময় লাগবে। তিনি বললেন, এর ফাকে আপনারা একটি নমুনা সংখ্যা বের করে ফেলুন। আমি ফাইলের সঙ্গে গেথে দেবো। তাতে বোঝা যাবে আপনাদের পত্রিকাটি কেমন হবে, কোন ধাঁচের হবে। আমি রাজী হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোলার প্রথম পত্রিকার আবেদনপত্র বরিশালের জেলা প্রশাসকের কাছে সাবমিট করলাম। বরিশাল থেকে ভোলায় এসে বিষয়টি প্রথমেই শাজাহান ভাইকে অবহিত করলাম। দু’দিন পরে ওনার বাসায় সবাইকে নিয়ে বসলেন। সিদ্ধান্ত হলো একটি সংখ্যা প্রকাশের প্রস্তুতি এখন থেকেই নেয়া হবে। ১ মাসের মধ্যে প্রকাশ করে ডিসি সাহেবকে পৌঁছানো হবে। সদর রোডে কবির গোলদারের পরিচালনাধীন রহমানিয়া প্রেসকে অস্থায়ী অফিস করে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বসার সিদ্ধান্ত হলো। আমি, বাহার ভাই মোস্তফা কামাল, মাসুম, ম স আলম প্রতিদিন ওখানে বসতাম। এর সঙ্গে যুক্ত হলেন দৈনিক সংবাদের পরবর্তীতে প্রথম আলোর সাংবাদিক মরহুম ফরিদ হোসেন বাবুল। ১ সপ্তাহের মধ্যে ১টি পত্রিকার জন্য প্রয়োজনীয় স্ক্রীপট রেডি করে ফেললাম। আমার উপর দায়িত্ব পরে উপ-সম্পাদকীয় লেখার। ভোলার প্রথম সংবাদপত্র শিরোনামের লেখাটির শেষে শুধু ‘শওকাত’ নামটুকু দেয়া হয়েছিল।
শাজাহান ভাইকে জানিয়ে দেয়া হলো যে আমরা প্রস্তুত। ওনার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন বন্ধু মরহুম মোস্থফা কামাল। ইতিমধ্যেই পত্রিকার জন্য সংবাদ ও লেখা আহ্বান করে একটি লিফলেট ছাড়া হলো। রহমানিয়া প্রেসের সামনে ‘সাপ্তাহিক ভোলাবানী’ অস্থায়ী কার্যালয় লিখে একটি সাইনবোর্ড ও দেয়া হলো। আমাদের সঙ্গে সঙ্গে প্রেসের মালিক কবিরও বেশ উৎসাহী ছিলো। এ পর্যায়ে একদিন মোস্তফা সাহেবের মাধ্যমে ঢাকায় যাওয়ার জন্য শাজাহান ভাই এর আমন্ত্রন পেলাম। গুছগাছ করে অবশেষে একদিন আবু সুফিয়ান বাহার, মোস্তফা কামাল, আশরাফুল হক মাসুম ও আমি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। এটা সম্ভবত আমার জীবনে ৩য় বারের মতো ঢাকা সফর।
বরিশালের সাত্তার কোম্পানীর ‘রাহাত খান’ নামের একটি দোতালা লঞ্চে আমরা ঢাকা যাচ্ছি। মোস্তফা সাহেব আগেই আমাদের জন্য লঞ্চের ডেকে চাদর বিছিয়ে সীট রাখার ব্যবস্থা করেছেন। দুপুর ১২টায় ভোলা খেয়াঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ে। সারাদিন সারারাত চালিয়ে পরদিন সকাল ৮টা ৯টায় ঢাকা পৌঁছে। এসব লঞ্চে ৫/৬টি কেবিন থাকতো। সিঙ্গেঁল কেবিনে একটির উপরে আরেকটি মোট দুটি সীট থাকতো। আর ডাবল কেবিনে একই ধরনের মোট ২টি করে মোট ৪টি সীট থাকতো। কেবিনের ভেতরে কোন এটাস্ট টয়লেট ছিলো না। কেবিনের সবার জন্য একটি মাত্র টয়লেট এবং ডেকের যাত্রীদের নীচতলায় ও দোতলায় মোট দুটি টয়লেট থাকতো। টয়লেটে গেলে বিশ্রী গন্ধে প্রাণ ওন্ঠাগত হয়ে যেতো। অনেকে ওখানে বমিও করে দিতো।—চলবে….(মুহাম্মদ শওকাত হোসেনের ফেসবুক থেকে নেয়া।)

বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৯:০২   ২৬২ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ভোলার মিডিয়া’র আরও খবর


ভোলার সংবাদিক ও শুভানুধায়ীদের পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিওজেএ নেতৃবৃন্দ
ভোলায় পিআইবির আয়োজনে সাংবাদিকদের ৩ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে সার্টিফিকেট বিতরণ
ভোলায় তিনদিন ব্যাপী সাংবাদিকদের বেসিক জার্নালিজম ট্রেনিং এর উদ্বোধন
ভোলায় আনন্দ টিভি’র ৬ষ্ঠ বর্ষপূর্তি উদযাপন
ভোলায় জমকালো আয়োজনে তরঙ্গ নিউজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত
তজুমদ্দিনে কেক কাটা, র‍্যালি ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে এশিয়ান টিভির ১১ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত ।
লিটন সভাপতি,দুলাল সম্পাদক বাংলাদেশ অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন লালমোহন উপজেলা কমিটি গঠন
সভাপতি নোমান সিকদার , সাধারণ সম্পাদক মিজান নয়নবাংলাদেশ অনলাইন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন চরফ্যাশন উপজেলা কমিটি গঠন
ভোলা জেলা অনলাইন প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন
ভোলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনওর মতবিনিময়

আর্কাইভ