আমার সাংবাদিকতা ও নানা প্রসঙ্গ - মুহাম্মদ শওকাত হোসেন (পর্ব-৪)

প্রথম পাতা » ভোলার মিডিয়া » আমার সাংবাদিকতা ও নানা প্রসঙ্গ - মুহাম্মদ শওকাত হোসেন (পর্ব-৪)
রবিবার, ২৮ মে ২০১৭



---খলিল উদ্দিন ফরিদ,।।ভোলাবাণী।। এ প্রসঙ্গে মরহুম আবু সুফিয়ান বাহার সম্পর্কে কিছু না বললে আমার লেখাটি অসম্পূর্ণ থাকবে। ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া মিঞা বাড়িতে তাঁর জন্ম। যদিও পূর্ব পুরুষদের আসল বাড়ি বোরহানউদ্দিন মানিকা মিঞা বাড়ি। তার পিতা মোতাহার মিঞা বহুদিন কাচিয়া ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট পরে চেয়ারম্যান ছিলেন। আমার একান্ত বন্ধু কাচিয়া মিঞা বাড়ির সন্তান সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াবদুর রহমান সেলিম মিঞার পুত্র শামসুর রহমান সাবের এর মামা তিনি। সে সূত্রে তার সঙ্গে খুবই সু-সম্পর্ক। যদিও তখনো মামা সম্বোধন করতাম। যদিও পরে এ সম্বোধন পাল্টে যায় তিনি আমাদের সকলের ‘বাহার ভাই’ এ পরিনত হন। ভোলার সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার জগতের এক অন্যন্য নক্ষত্র ‘বাহার ভাই’ এর প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা ভবিষ্যতে করার আশা রাখি।
পর পর কয়েকদিন আমরা মোশারেফ হোসেন শাজাহান ভাইর বাসায় ভোলা থেকে পত্রিকা প্রকাশের বিষয়ে সভায় মিলিত হই। প্রধানত বাহার ভাই, মাসুম ভাই, শামছু ভাই, মোস্তফা ভাই এবং আমি এসব সভাগুলোতে নিয়মিত অংশ নেই। সিদ্ধান্ত হয়, ভোলা থেকে একটি পত্রিকা প্রকাশনার। অনেক আলোচনা তর্কবিতর্ক করে শাজাহান ভাই এর প্রস্তাবিত নাম ‘সাপ্তাহিক ভোলাবানী’ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। সদর রোডস্থ রহমানিয়া প্রেস থেকে পত্রিকা ছাপা হবে। আমরা রহমানিয়া প্রেসে প্রতিদিন বসার সিদ্ধান্ত নিলাম। সেখান থেকে একটি পত্রিকা প্রকাশের প্রস্তুতি শুরু হলো।
প্রসঙ্গত; এক সময়েরর ভোলা মহকুমা বর্তমান ভোলা জেলার পত্র-পত্রিকা সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা প্রয়োজন। বৃটিশ রাজত্বের অনেকটা সময় জুড়ে বাংলা অন্যান্য স্থানের ন্যায় ভোলায়ও জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা সংস্কৃতি সবই হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকারে ছিলো। এসময়কে ধরে রেখে একজন হিন্দু লেখক যার বাড়ি ছিলো ভোলা, তিনি ‘দ্বীপচরের পদাবলী’ নামে ভোলার একটি ইতিহাসও লিখেছেন যা এখন দুস্প্রাপ্য। বৃটিশ যূগের শেষলগ্নে ভোলার সন্তান বিশিষ্ট কমুনিষ্ঠ নেতা, অগ্নিযূগের বিপ্লবী ‘নলিনী দাস ‘আন্দামানের বন্দী’ লিখে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বৃটিশ রাজত্বে শেষদিনগুলোতে ভোলার কবি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা’ প্রতিষ্ঠা ও সম্পাদনা করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। তারও আগে ভোলার আরেক কৃতি পুরুষ লুৎফর রহমান বিএ কোলকাতা থেকে প্রকাশিত মাওলানা মোহাম্মদ আলী জওহর ও মাওলানা আবুল কালাম আযাদের পত্রিকা ‘দি কমরেড’ এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ পত্রিকায় প্রকাশিত বৃটিশ বিরোধী সম্পাদকীয়র কারনে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হলে তিনি দেশত্যাগ করে স্বাধীন রাজ্য হায়দ্রাবাদের শাসক ‘নিজাম’ এর দরবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
কবিপুত্র এম মোকাম্মেল হক, সাবেক মন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাজাহান, ড: আবুল হাসান শামসুদ্দিন এরা যখন সরকারী স্কুলে পড়তেন তখন এদের উদ্যোগে একাধিক সাহিত্য ম্যাগজিন, সাময়িকী প্রকাশ পেয়েছিল। মাওলানা শামসুল হক কুফীর সুযোগ্য পুত্র মোস্তফা হারুন সাহেবও কৈশরে একাধিক সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। ১৯৬৭/৬৮ সালের দিকে ভোলার এসডিও ছিলেন চিটাগাং এর সন্তান এ জেড এম নাসিরুদ্দিন(সি এস পি)। তিনি খুবই পাবলিক রিলেটেড ছিলেন, তাঁর জনপ্রিয়তাও ছিল প্রচুর। ওনার পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুপ্রেরনায় ভোলা থেকে সর্ব প্রথম একটি পাক্ষিক পত্রিকা ‘মেঘনা’ প্রকাশিত হয়। এর সম্পাদক ছিলেন ‘তালুকদার শাজাহান’ (মোশারেফ হোসেন শাজাহান)। মরহুম মাওলানা মজিবুল হক, মরহুম মজিবল মিঞা, সাবেক লাইব্রেরীয়ান মুসলিম ইনষ্টিটিউট, সাংবাদিক এম এ তাহের প্রমুখ। এ পত্রিকার বেশ ক’টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান ৭০ এর নির্বাচনের জোয়ারে পত্রিকাটির অপমৃত্যু ঘটে। অবশ্য পত্রিকা বন্ধ হওয়ার মূল কারণ ছিল এসডিও সাহেবের ভোলা থেকে বদলী হয়ে চলে যাওয়া। অন্যদিকে তালুকদার শাজাহান সাহেব রাজনীতিতে যোগ দিলে পত্রিকার বিষয়টি গৌন হয়ে যায়।
স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে সাময়িকী, সাহিত্য পত্রিকা ইত্যাদি বের হলেও ভোলা থেকে নিয়মিত কোন পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। তাই শাজাহান ভাই এর এ উদ্যোগটি ছিলো খুবই সময়োপযোগী এবং ঐতিহাসিক। আমি জীবনে যখন যে কাজে হাত দিয়েছি তা আন্তরিকভাবে সম্পাদনের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। অন্তরের বিশ্বাসকে পুজি করেই সাধ্যানুযায়ী প্রচেষ্টা চালিয়েছি। কখনো নিজের বিশ্বাসের সংগে প্রতারনা করিনি। ফলে এ উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে আমাকেই এর নির্বাহকের দায়িত্বটি পালন করতে হয়েছে।
বৈঠকের পর বৈঠক করে আমরা পত্রিকার নাম সিলেক্ট করলাম ‘সাপ্তাহিক ভোলাবানী’। আমার উপরই দায়িত্ব পরলো ভোলাবাসীকে জানান দেয়ার উদ্দেশ্যে একটি লিফলেট তৈরীর। যথারীতি লিফলেট তৈরী হলো এবং সম্পাদনা পরিষদের পক্ষে আমার নামেই লিফলেটটি প্রচার করা হলো। ইতিমধ্যেই বরিশালের জেলা প্রশাসককে শাজাহান ভাই বিষয়টি অবহিত করেছেন এবং তার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করবো বলে জানিয়েছেন। সে ক্ষেত্রেও আমার উপর দায়িত্ব অর্পিত হলো জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগের।—চলবে …..(মুহাম্মদ শওকাত হোসেনের ফেসবুক থেকে নেয়া।)

বাংলাদেশ সময়: ১২:০০:২২   ২৪২ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ভোলার মিডিয়া’র আরও খবর


ভোলার সংবাদিক ও শুভানুধায়ীদের পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিওজেএ নেতৃবৃন্দ
ভোলায় পিআইবির আয়োজনে সাংবাদিকদের ৩ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে সার্টিফিকেট বিতরণ
ভোলায় তিনদিন ব্যাপী সাংবাদিকদের বেসিক জার্নালিজম ট্রেনিং এর উদ্বোধন
ভোলায় আনন্দ টিভি’র ৬ষ্ঠ বর্ষপূর্তি উদযাপন
ভোলায় জমকালো আয়োজনে তরঙ্গ নিউজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত
তজুমদ্দিনে কেক কাটা, র‍্যালি ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে এশিয়ান টিভির ১১ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত ।
লিটন সভাপতি,দুলাল সম্পাদক বাংলাদেশ অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন লালমোহন উপজেলা কমিটি গঠন
সভাপতি নোমান সিকদার , সাধারণ সম্পাদক মিজান নয়নবাংলাদেশ অনলাইন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন চরফ্যাশন উপজেলা কমিটি গঠন
ভোলা জেলা অনলাইন প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন
ভোলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনওর মতবিনিময়

আর্কাইভ