আমার সাংবাদিকতা ও নানা প্রসঙ্গ - মুহাম্মদ শওকাত হোসেন (পর্ব-৩)

প্রথম পাতা » ভোলার মিডিয়া » আমার সাংবাদিকতা ও নানা প্রসঙ্গ - মুহাম্মদ শওকাত হোসেন (পর্ব-৩)
শুক্রবার, ২৬ মে ২০১৭



---খলিল উদ্দিন ফরিদ,ভোলাবাণী: ৭৪, ৭৫ সালের দিকে ভোলা শহরের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সঙ্গেঁ আমার কিছুটা সংশ্লিষ্টতা সৃষ্টি হয়। এর সু্ত্র ছিল আমার বন্ধু আশরাফুল হক মাসুম, মাহমুদুল হক নসু প্রমুখ। এদের সূত্র ধরেই পরবর্তীতে আমি ভোলার তখনকার সাহিত্য সংগঠন ‘দিশারী’ নবীন আসর সহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গেঁ জড়িয়ে যাই। ১৯৭৫ সালে আমি ভোলা কলেজে ভর্তি হই। এর আগেই বিভিন্ন প্রতিযোগীতা, রচনা, বক্তৃতা, আবৃর্তি ও বিতর্কে অংশ নিয়ে ১ম কিংবা ২য় স্থান অর্জন করে নিজের ব্যাপারে আরো আস্থাশীল হয়ে উঠি। ১৯৭৬ সালে ভোলায় অনুষ্ঠিত ‘সিরাতুন্নবী সম্মেলনে’ সম্পৃক্ত থাকার ফলে মরহুম মোশারেফ হোসেন শাজাহান ভাই এর সংগে সরাসরি পরিচিত হই।
১৯৭৬ সালের ১ আগস্ট ভোলার কবি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক ইন্তেকাল করেন। কবির ইন্তেকালের পর তৎকালীন এসডিও আবদুল হালিম সাহেবের উদ্যোগে বেশ ক’টি শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। পরানগঞ্জ এবং ভোলা টাউন হলে’র শোক সভায় আমিও বক্তব্য রাখি। এসময় মোশারেফ হোসেন শাজাহানকে সভাপতি ও কবির এক সময়ের সামাজিক কার্যক্রমের সহকর্মী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ মিঞাকে সম্পাদক করে ‘কবি মোজাম্মেল হক স্মৃতি সংসদ’ গঠিত হয়। ১৯৭৭ সালে ‘কবি সাহেবের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী বেশ ভালোভাবে পালিত হয়। কবিপুত্র তৎকালীন সচিব এম মোকাম্মেল হক, এ উপলক্ষ্যে ভোলায় আসেন। মোজাম্মেল হক স্মৃতি সংসদ এর উদ্যোগে কবি প্রতিষ্ঠিত পরানগঞ্জ হাই স্কুল, খরকী ইসলামিয়া হাই স্কুল ও ভোলা শহরে টাউন হলে স্মরণসভার আয়োজন করে। এসব সভায় এম মোকাম্মেল হক, এসডিও আবদুল হালিম, মোশারেফ হোসেন শাজাহান, শফিউল্লাহ মিঞা, ডাঃ আবদুল মান্নান, আহাম্মদ হোসেন মিঞা, সিদ্দিক ডিলার সাহেব সহ একদল বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রতিটি সভায় কবি সাহেবের উপর বক্তব্য রাখেন।
পরানগঞ্জের স্মরণসভায় আমার বক্তব্য শুনে এম মোকাম্মেল সাহেব এতোটাই ‘ইমপ্রেসড’ হন যে, তিনি আমাকে সংগে করে ভোলা শহরে নিয়ে আসেন। দুপুরে হালিমা মঞ্জিলে তাঁর আতিথ্য গ্রহণ করে বিকেলে টাউন হলের স্মরণসভায় অংশ গ্রহণ করি। মোকাম্মেল হক সাহেব আমাকে পরানগঞ্জের অনুরূপ একটি বক্তব্য টাউন হলে রাখার অনুরোধ জানান। সেদিনের স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন, সাবেক এমপি স্মৃতি সংসদ এর সভাপতি মোশারেফ হোসেন শাজাহান। স্মরণসভায় এম মোকাম্মেল হক এসডিও আঃ হালিম সাহেব ছাড়াও ভোলা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী, ভোলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আমিনুল একরাম, ন্যাপ সভাপতি এডভোকেট একেএম শাজাহান, আওয়ামী লীগের নেতা এডভোকেট মাকসুদুর রহমান, ডাঃ আঃ মান্নান, আলহাজ্ব আহাম্মদ হোসেন মিঞা প্রমুখ শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন।
ওই সভার শুরুর দিকেই আমি বক্তব্য রেখেছিলাম, পরের আলোচকরা আমার উপস্থাপিত বিষয়ের উপরই বক্তব্য রেখেছিলেন। সভাপতির বক্তব্য রাখতে দাঁড়িয়ে মোশারেফ হোসেন শাজাহান আমাকে স্মৃতি সংসদের সদস্য হিসেবে ঘোষনা দিয়ে তার বক্তব্য পেশ করেন। এর ক’দিন পরই আমার ক্লাশমেট বন্ধু মোস্তফা কামাল (বিএনপির নেতা মরহুম) জানালো, আজ সন্ধ্যায় শাজাহান ভাই এর বাসায় স্মৃতি সংসদের সভায় আমার ডাক পড়েছে। সেই সভায় শফিউল্লাহ মিয়াকে (মরহুম) সহসভাপতি করে আমাকে সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই থেকে স্মৃতি সংসদের ব্যানারে আমরা অনেক সাহিত্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালিয়েছি। ১৯৮৫ সালে কবির জন্মশত বার্ষিকীতে ‘জাতীয় মঙ্গল সাহিত্য সম্মেলন’ করেছি। যেখানে তৎকালীন আইন বিচার ও ধর্ম মন্ত্রী জাস্টিস একেএম নূরুল ইসলাম (পরবর্তীতে ভাইস প্রেসিডেন্ট), কবি জাহানারা আরজু, মনির উদ্দিন ইউসুফ, রাহাত খান, ড. আবুল হাসান শামসুদ্দিন, মোস্তফা হারুন, নাসির আহমেদ, কবি মনিকা রহমান, মনিষ রায়,আলাউদ্দিন হোসেন সহ অনেক কবি সাহিত্যক অংশ নেন। প্রতি বছরই আমরা কবির জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকীতে একাধীক অনুষ্ঠান করতাম। এসব অনুষ্ঠান করতে গিয়ে অনেক অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা হয়েছে। একবার অনুষ্ঠানের কার্ড বিতরণ করতে গিয়ে ভোলা প্রেসক্লাবে এক সুশীলের অনেক বাক্যবানের শিকার হয়েছিলাম। কেন আমরা ‘খান বাহাদুর’ সাহেবকে বাদ দিয়ে কবি সাহেবের অনুষ্ঠান করছি- তা নিয়ে অনেক কথা শুনালেন। ভোলায় খান বাহাদুর সাহেবের গুরুত্ব কবি সাহেবের চেয়ে অনেক বেশী সেটা আমাদেরকে বুঝিয়ে দিলেন। সব শুনে আমি তাকে ‘খান বাহাদুর’ সাহেবের জন্য কিছু করার উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানালাম। সে ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগীতার আশ্বাসও দিলাম। সে অচিরেই প্রেসক্লাব থেকে এধরনের উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছিলেন। যদিও জীবনেও এধরনের কোন উদ্যোগ নেননি। কারন সে মনবৃত্তি কিংবা যোগ্যতা কোনটাই এসব সমালোচকদের নেই। এরা একটাই পারে অন্যের ভাল কাজ দেখলে হিংসায় জলে পুরে লম্বা গলায় সমালোচনা করতে। সমাজের জন্য এদের ত্যাগ বলতে ‘মল-মুত্র ত্যাগ’ ছাড়া কিছুই নেই। এধরনের সুশীল নামের ‘মানসিক প্রতিবন্দ্বীদের মুখোমুখী আমাকে বারবার হতে হয়েছে।
৭৬’ সালে ভোলা কলেজে আমার সহপাঠি ছিল ইফতেখার আলী। ওদের বাড়ি ছিল হিজলা মেহেন্দীগঞ্জে ওর বাবা বরিশালের প্রখ্যাত সাহিত্যিক মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী। তখন তিনি বরিশাল জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক ‘বাকেরগঞ্জ পরিক্রমা’র সম্পাদক। ইফতিখার আমাকে বললো ‘বাকেরগঞ্জ’ পরিক্রমা’য় সংবাদ পাঠাতে। সে আমাকে বহু পটিয়ে একদিন বরিশাল নিয়ে গেল। তার বাবা ইয়াকুব আলী সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দিল। আলাপ করে ভদ্রলোককে আমার খুব পছন্দ হলো। উনি আমাকে সেদিনই বাকেরগঞ্জ পরিক্রমার ভোলা মহকুমা প্রতিনিধি হিসেবে কার্ড ও নিয়োগপত্র দিয়ে ছিলেন। ৫০টি করে পত্রিকা পাঠাতেন যা হকার দিয়ে ভোলার সরকারী কর্মকর্তা ও বিশেষ ব্যক্তিদের মধ্যে ফ্রী পৌঁছানো হতো।সংবাদ পাঠানোর জন্য কিছু প্যাড খামও দিয়েছিলেন।
শুরুটা এভাবেই। তখনকার দিনে সাংবাদিকতার উপর কোন প্রশিক্ষন ছিল না, এ সংক্রান্ত কোন বইও বাজারে পাওয়া যেত না। মূলৎ ঢাকার পত্রিকার সংবাদ দেখে দেখে ‘স্বশিক্ষিত’ হয়েছি। তারপরও এ সম্পর্কে আরো বেশী ধারনা নেয়ার জন্য মরহুম আমির খসরু ভাই, ডাঃ মহিবুল্লাহ (মরহুম) সহ যারা তখন সাংবাদিকতা করতেন তাদের সংস্পর্শে গিয়ে সম্যক জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করি। এরই সুবাধে দিশারী সাহিত্য গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। কমল ভরদ্দাজ (বর্তমানে পুলিশ কর্মকর্তা) মিজানুর রহমান (ঢাকায় কর্মরত) ম.স আলম (সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট) মোসাদ্দেক হোসেন বাহার সহ অনেকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করার সুযোগ ঘটে। ফলে নিউজ লেখা থেকে শুরু করে ছড়া কবিতা লেখার হাত পাকিয়ে ফেলি। এসময় দৈনিক আজাদের বার্তা সম্পাদক ভোলার কৃতি সাংবাদিক অধ্যাপক সিরাজুল হকের কল্যানে দৈনিক আজাদের ভোলা প্রতিনিধি হয়েও শেষ মেষ আমির খসরু ভাইকে ছেড়ে দেই। ৮০ সাল পর্যন্ত এভাবে চলে।
৮০ সালে বন্ধু মোস্তফা কামালের (মরহুম) মাধ্যমে মোশারেফ হোসেন শাজাহান সাহেব তার বাসায় এক সন্ধ্যায় দাওয়াত দিলেন। সেখানে চায়ের টেবিলে উনি ভোলা থেকে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের ইচ্ছা ব্যাক্ত করেন। আমি তাকে এ ধরনের উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানাই। উনি বললেন ধন্যবাদে হবে না, আমি চাই তুমি দায়িত্ব নিয়ে এ পত্রিকায় থাকবে। আমি বললাম, সেটা কিভাবে? আপনি বিএনপি নেতা, আপনার পত্রিকাটি হবে দলীয়। সেখানে তো আমার পক্ষে থাকা সম্ভব নয়। তিনি বললেন, দেখো আমি চাই পত্রিকাটি নিরপেক্ষভাবে ভোলার মুখপত্র হিসেবে প্রকাশ পাবে। এখানে কোন রকম দলবাজী থাকবে না। তবে আমার ইচ্ছ পত্রিকাটির মধ্যে একটা ইসলামী তথা ধর্মীয় ফ্লেবার থাকবে। সে কারনেই আমি তোমাকে ডেকেছি। এখন তুমি যদি রাজী না হয় তাহলে আমাকে …… কে ডাকতে হবে তখন পত্রিকাটি হবে ঠিক তার উল্টো ধাঁচের। সব কথা শুনে রাজী হয়ে গেলাম। তবে আরো ক’জনকে নেয়ার অনুরোধ জানালাম। তারা হচ্ছেন মরহুম আমির খসরু, ম.স আলম (এডভোকেট সামছুল আলম, সুপ্রিম কোর্ট) কবি মোজাম্মেল হকে পৌত্র আমার বন্ধু কবি আশরাফুল হক মাসুম। সেই সঙ্গে মোস্তফা কামাল প্রস্তাব করলেন আবু সুফিয়ান বাহার (মরহুম) এর নাম। শাজাহান ভাই রাজী হয়ে পরের সপ্তাহে ওনার বাসায় বাসার জন্য সময় নির্ধারন করলেন।— চলবে,,,,(মুহাম্মদ শওকাত হোসেনের ফেসবুক থেকে নেয়া।)

বাংলাদেশ সময়: ১০:১০:৩৪   ৩৩০ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ভোলার মিডিয়া’র আরও খবর


ভোলার সংবাদিক ও শুভানুধায়ীদের পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিওজেএ নেতৃবৃন্দ
ভোলায় পিআইবির আয়োজনে সাংবাদিকদের ৩ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে সার্টিফিকেট বিতরণ
ভোলায় তিনদিন ব্যাপী সাংবাদিকদের বেসিক জার্নালিজম ট্রেনিং এর উদ্বোধন
ভোলায় আনন্দ টিভি’র ৬ষ্ঠ বর্ষপূর্তি উদযাপন
ভোলায় জমকালো আয়োজনে তরঙ্গ নিউজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত
তজুমদ্দিনে কেক কাটা, র‍্যালি ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে এশিয়ান টিভির ১১ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত ।
লিটন সভাপতি,দুলাল সম্পাদক বাংলাদেশ অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন লালমোহন উপজেলা কমিটি গঠন
সভাপতি নোমান সিকদার , সাধারণ সম্পাদক মিজান নয়নবাংলাদেশ অনলাইন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন চরফ্যাশন উপজেলা কমিটি গঠন
ভোলা জেলা অনলাইন প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন
ভোলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনওর মতবিনিময়

আর্কাইভ