জেলা সংবাদদাতা, ভোলাবাণী: ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের কন্দকপুর গ্রামে মোতাহার হোসেন বয়াতির(৬৫) বসত ঘরে গতকাল শনিবার পর্যন্ত দুই শতাধিক সাপ ও সাপের ডিম পাওয়া গেছে । ওই সাপ গুলো মেরে ডিমসহ মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে।
ভোলার উপকূলীয় বন বিভাগে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. ফরিদ মিয়া বলেন, সাপ বন্যপ্রাণি। এটা শিকার, মারা অপরাধ, কারণ সাপকে কেউ না মারলে, সাপ কামড়ায় না। তারপরে ও তার দল ঘটনাস্থলে গিয়ে জনগনকে সচেতন সভা করবেন ।
মোতাহার হোসেন বয়াতির ছেলে মো. ইব্রাহীম বযাতি বলেন, মঙ্গলবার রাতে ১১টার সময় কুপির আলোয় দ্যাখেন, ঘরের মধ্যে একটি গর্ত দিয়ে এক দেড় হাত লম্বা একটি সাপ বের হয়ে আসছে। ধাওয়া করলে ফনা তুলে দাঁড়িয়ে যায়, আবার ওই গর্তে ঢুকে যায়। রাতে গর্তের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। এব অবস্থায় রাতে তাদের ঘুম হয় না। বুধবার রামদাশপুর থেকে আসে আবু ওঝা।
সে এসে গর্তের মুখ খুলে দেয়, বেরিয়ে আসে ১৫টি বাচ্চা সাপ। সেগুলো মেরে বাড়িতে ধুল পড়া ছিটিয়ে দেয়। টাকা নেন দুই হাজার। সে অপারগতা নিয়ে চলে যায়। পরের দিন আবার আসেন ওঝা আমেনা বেগম। তিনিসহ গ্রামবাসী আরও আরও ৫০টির মতো সাপ মারতে সক্ষম হয়। এভাবে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ১৮০টি সাপ ও ৬০টি ডিম উদ্ধার করা হয়। সেগুলো মাটিতে চাপা দেওয়া হয়।
ইব্রাহীম ভোলাবাণীকে বলেন, সাপুরিয়া ও ওঝার ভাষ্যমতে এখনও অনেক সাপ আছে। এগুলো বিষধর সাপ। সাপ নিয়ন্ত্রণে ঘরের চারপাশে তারা জাল টেনে দিয়েছে। ধুপ-ধুলা পড়াসহ তাবিজ-তুমার দিয়েছেন।কিন্তু সাপ সব মরেনি।
ইব্রাহীম আরও বলেন, তারা সাপের ঘরে নিদ্রাহীন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। বৃহষ্পতিবার রাতের বেলা ৫-৬ হাত বিষধর সাপ ঘরের মধ্যে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। পরে ধাওয়া করলে পাশের বাঁশ বাগানের একটি ঢিপির গর্তে লুকিয়ে যায়।
গত শুক্রবার বিকালে সরেজমিন দেখা যায়, আশপাশের গ্রাম ও ইউনিয়ন থেকে শত শত মানুষ কন্দ্রপুর গ্রামের খাল-বিল হেঁটে ইলিশা নদীর তীরে মোতাহার হোসেন বয়াতির বাড়ি যাচ্ছে। সেখানের ফসলের খেত পারিয়ে মাঠ করে ফেরেছেন। সকলেই বলছেন, ‘সাপ দেখতে যাচ্ছি’। সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙন কবলিত মোতাহারের বাড়িতে দুটি ঘর। একটি রান্না ঘর অন্যটি বসত। বসত ঘরেই চার ছেলে, ছেলেদের বউ, নাতি-নাতনিসহ ১৫ জন বাসিন্দা।
এ পর্যন্ত শিকার হওয়া সকল সাপ মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। আর যে গর্ত থেকে সাপ বের হচ্ছে তার মুখ মাটি দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। তার ওপর বসানো হয়েছে একটি পিতলের কলস। সেখানে সিঁদুর মাখানো মোমবাতি জ্বলছে। লোকেরা সাপ শিকারের খরচ হিসাবে বাটিতে ৫-১০০ টাকা সাহায্য করে যাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার রাত থেকে ওই পরিবার ও আশপাশের মানুষের ঘুম নেই’-জানালেন প্রতিবেশী আবদুল কাদের ফকির।
গ্রামের আবুল বয়াতি, জামালউদ্দিন ফকির, আনিসুর রহমানসহ সকলের মুখে একটাই কথা, এ বাড়িতে ভয়ানক বিষাক্ত একাধিক সাপ আছে। সেটা টের পেয়ে ২২ হাজার টাকা খরচ করার পরেও সাপুরিয়া আসছে না।
ভোলা সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. কামাল বলেন, সাপ সাধারনত নিরাপদ স্থানে ডিম পেরে চলে যায়। ডিম পাহাড়া দেবার দায়িত্ববোধ তাদের নেই। পরে নিজে নিজে বাচ্চা ফোটে। পরে অন্যত্র চলে যায়।
অধ্যাপক আরও বলেন, একটি সাপ ৮-১৫টি ডিম দিতে পারে। সে হিসাবে বোঝা যাচ্ছে, ঘরের মধ্যে একাধিক সাপ ডিম দিয়েছে। এ সময় সাধারনত দাড়াশ সাপ ডিম দেয়।
অধ্যাপক আশঙ্কা করে বলেন, সর্বত্র মানুষের পদচারণায় সাপই এখন শঙ্কিত।এখানে মানুষের শঙ্কার কিছু নেই। তারা প্রতিনিয়ত মারা পরছে, হারাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
ভোলার সিভিল-সার্জন রথীন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, কার্বোলিক এসিড ব্যবহার করলে ওই বাড়িতে থাকা সাপ অন্যত্র চলে যাবে। তবে সেটা গ্রামবাসির জন্য বিপদজনক। সেক্ষেত্রে সাপুরিয়া বা যারা সাপ ধরে তাদেরকে খবর দিলে ভালো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫০:০৬ ২০৪৭ বার পঠিত |