নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রথম পাতা » জাতীয় » নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে : প্রধানমন্ত্রী
শুক্রবার, ৭ জুলাই ২০২৩



ভোলাবাণী ডেক্স।। বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার আগে নিজের দেশকে সামলানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আজ যারা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলছেন, তারা ২০০১ সাল দেখেননি। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট দেখেননি। আমেরিকাতেও প্রতিদিন গুলি করে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।পরিবারসহ খুন করা হচ্ছে। নিজের দেশের মানুষকে বাঁচাবে কি করে তাদেরকে সেই চিন্তা আগে করা উচিত।

নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠের মধ্য দিয়ে সংসদের ২৩তম অধিবেশন সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি দেওয়া একটি রেকর্ড করা ভাষণ বাজানো হয়।২২ কার্যদিবসের এই অধিবেশনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাস ছাড়াও ১৪টি বিল পাস হয়েছে। বাজেটের ওপর ১৮৭ জন সদস্য ৩২ ঘণ্টা তিন মিনিট বক্তব্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্য ৯৭টি প্রশ্ন জমা পড়লেও তিনি উত্তর দিয়েছেন ৫৬টির এবং মন্ত্রীদের জন্য এক হাজার ৮৮৯টি প্রশ্ন জমা পড়লেও উত্তর দিয়েছেন এক হাজার ৩৩৮টির।

সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে অত্যাচার নির্যাতনের চিত্র এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হত্যা, অগ্নি সন্ত্রাসসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে মানবাধিকারের খোঁজে আসে অনেকে। আমার প্রশ্ন ২০০১ এর নির্বাচনে যখন এইভাবে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে, মেয়েদের ধর্ষণ করছে শিশুরা রেহাই পাচ্ছে না তখন সেই মানবাধিকার ফেরিওয়ালারা কোথায় ছিল? সেই ফেরিওয়ালারা কোথায় ছিল, তারা কেন চুপ ছিল? তাদের মুখে কোনো কথা ছিল না কেন? সেটা দেশি-বিদেশি, আমি সকলের বেলাতেই বলব। আর অনেকেই আসে আমাদের ছবক দেয়, মানবাধিকার শেখায়।’

মানবাধিকার বঞ্চিত তো আমরা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘১৫ আগস্ট আমাদের জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে।
আমাদের বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। কারণ ইনডেমিনিটি দেওয়া হয়েছে। অপারেশন ক্লিনহাটে যাদের হত্যা করা হয়েছে সেই তারা বিচার চাইতে পারবে না। সেই অপরারেশন ক্লিনহার্টেও ইনডেমিনিটি দেওয়া হয়। যারা খুনিদের ইনডেমিনিটি দিয়ে রক্ষা করে, তাদের কথা শুনে অন্য দেশের সরকার, অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা, আমাদের দেশের কিছু সংস্থা তারা মানবাধিকারের কথা বলে। আমরাই তো মানবাধিকার বঞ্চিত ছিলাম। হত্যার বিচার করতে ৩৫ বছর লেগেছে, তাও নিজেরা ক্ষমতায় এসে ইনডেমিনিটি বাতিল করে হত্যার বিচার করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি, বিচারের রায় কার্যকর করেছি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই বলে যারা, তারা ২০০১ দেখেনি? তারা ১৫ আগস্ট দেখেনি? ১৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত কি চলেছে? সেটা তারা দেখেনি, তখন তাদের চোখেও পড়েনি, কানেও শোনেনি?’

মানবাধিকারের কথা বলে আজকে রোহিঙ্গা তাদের দেশে যখন অত্যাচার, নির্যাতিত হচ্ছিল, গণহত্যার শিকার হচ্ছিল, আমরা তাদেরকে আশ্রয় দেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম যখন আশ্রয় দেই তখন কে ছিল? আমরা শুধু আশ্রয় না, প্রথম কয়েক মাস তো আমরাই খাওয়াই। এই যে তাদের যে ৫টা বছর, পরবর্তীতে তাদেরকে অনেক দেশ অনেক সহযোগিতা করেছে, কিন্তু যখন তারা আমাদের দেশে আসে তখন তো কোনো সাহায্যই আমরা পাইনি। আমরা মানবিক কারণে যখন এতোগুলো লোকের দায়িত্ব নিতে পারি এর থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ আর কি হতে পারে, সেটাই আমার প্রশ্ন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা অন্য দেশের নির্যাতিত মানুষকে আশ্রয় দেয়, আওয়ামী লীগ সরকার সেই আশ্রয় দিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগ সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে কেন? কিভাবে করবে? সারা বিশ্বে তো বহু জায়গায় বহু মানুষ খুন হচ্ছে। আমেরিকায় তো প্রতিদিন গুলি করে করে শিশুদের হত্যা করছে স্কুলে যেয়ে, শপিং মলে হত্যা হচ্ছে, রাস্তায় হত্যা হচ্ছে। এমনকি আমাদের বাঙালি মেয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, ছিনতাই করতে গিয়ে তাকে হত্যা করেছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা ছেলের বাড়ি বেড়াতে গেছে মসজিদে নামাজ পড়ে ফিরে আসছে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আর প্রতিদিন তো তাদের প্রতিটি স্টেট, এক এক একটা স্টেটে দেখা যাচ্ছে গুলি করে করে মানুষ হত্যা করছে। ঘরের মধ্যে গিয়ে পরিবারসহ হত্যা করে আসছে। তাদের নিজের দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা আগে করা উচিত। তারা নিজের দেশের মানুষের বাঁচাবে কি করে সেই চিন্তা আগে করুক, সেটাই তাদের করা উচিত।’

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোকে অতীতের যেকোনো সময়ের থেকে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। সেখানে কেউ ভোট কেন্দ্র দখলে যায়নি। উপ-নির্বাচনগুলোও স্বচ্ছ হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনও অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। কারণ আওয়ামী লীগের আমলে জনগণ ভোট দিতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে নির্বাচনই ছিল, একেকটা গ্রুপ ঢুকবে, সিল মারবে, বাক্স ভরবে। তারপর রেজাল্ট পাল্টাবে। ১০টা হুন্ডা, ২০টা গুণ্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা। আওয়ামী লীগ সবসময় সংগ্রাম করে গেছে জনগণের ভোটাধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে। যারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাদের বলব, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচন স্বচ্ছ হয়, নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা যে আমরা করতে পারি, সেটা কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি।’

দ্রব্যমূল্য নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে মানুষ এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শান্তিতে আছে। ইউক্রেন যুদ্ধ যার কারণে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। আমরা তা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। একটা মানুষও না খেয়ে মরেনি। বাজারে পর্যাপ্ত খাবার আছে। উৎপাদন বাড়াতে কৃষিতে ভর্তুর্কি দেওয়া হচ্ছে। গরিব-অসহায় মানুষকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। গৃহহীনদের ঘর দিচ্ছি। মানুষ নিরাপদ আশ্রয় পাচ্ছে। জনগণের সকল ধরনের সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।’

বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত অগ্নি সন্ত্রাস, মানুষ হত্যাসহ নানা ধরনের অপকর্ম করেও তারা কিন্তু এই গণতন্ত্র ধ্বংস করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ আছে বলেই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগ আছে বলেই মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দেওয়ায় মঙ্গা ও দুর্ভিক্ষ দূর হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।’ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ উন্নত স্মার্ট দেশে পরিণত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোর রাতে আমাকে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। এই সংসদ ভবনের একটা ভাঙা বাড়িতে থাকতে হতো। যদিও আমি ছিলাম তখন বিরোধী দলের নেতা। তারপরে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার না করলে প্রেস্টিজ থাকে না, তাই তাকে ১-২ মাস পরে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়। তার থাকার জন্য এখনকার স্পিকারের নতুন বাড়ি বরাদ্দ করা হয়। তার জন্য তিন চার বার গদি ফার্নিচার পাল্টাতে হয়। আর আমাকে শুতে হতো ইঁদুরে কাটা নোংরা গদিতে আর গায়ে দিতাম পুরনো কম্বল, ভাঙা খাট। পরে আন্দোলনের মুখে আমাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। জনগণের দাবি মেনে ছবিসহ ভোটার তালিকা ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে নির্বাচন হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং দেশের উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়।’

বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৬:৩৬   ১০২ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জাতীয়’র আরও খবর


তৃণমূল থেকে উন্নয়নই আ.লীগের মূল লক্ষ্য : প্রধানমন্ত্রী
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করা হচ্ছে
কাউকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করতে দেব না : প্রধানমন্ত্রী
বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট ব্যবসায়ীসহ গ্রাহকবিদ্যুত বিহীন মনপুরা ॥ তীব্রতাপদাহে ভোগান্তিতে সাধারন মানুষ
আজ পহেলা বৈশাখ
সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন: প্রধানমন্ত্রী
জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে , ভোটের চিন্তা থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এডিবির আরও সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনেছে : প্রধানমন্ত্রী

আর্কাইভ