বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো’

প্রথম পাতা » জাতীয় » বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো’
বুধবার, ১ মার্চ ২০১৭



---ভোলাবাণী : মার্চ মাস আমাদের জাতীয় জীবন এবং মুক্তির সংগ্রামের একটি গৌরবোজ্জ্বল মাস। এ মাসের ১,৭,১৭,২৫ ও ২৬— এই তারিখগুলো আমাদের সংগ্রামকে দেশ মুক্তির লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

পাকিস্তানের সামরিক জান্তার দেওয়া সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর দল ৬ দফাকে সামনে রেখে বিপুল ভোটে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলেন। কেবলমাত্র পূর্ব-পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদেই নয়, জাতীয় পরিষদেরও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দাবি ছিল, বিজয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রদেশের রাজধানী ঢাকায় জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করতে হবে। যদিও সামরিক জান্তা প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খান প্রাথমিকভাবে দাবিটি মেনে নিয়ে ঢাকায় অধিবেশনের তারিখও নির্দিষ্ট করে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু অকস্মাত্ পাঞ্জাবি ক্লিকের চাপে ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণের মাধ্যমে ঢাকা অধিবেশন বাতিল করেন।

ঢাকা তখন অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। এ সময় বঙ্গবন্ধু তাঁর নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে হোটেল পূর্বাণীতে ভবিষ্যত্ কর্মপন্থা নির্ধারণে ব্যস্ত ছিলেন। বিক্ষুব্ধ জনতা সেখানেই এসে বাংলার অবিসংবাদিত নেতার মুখ থেকে এ প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন নিন্দা, ঘৃণা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে দেশবাসীর প্রতি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেন এবং ৭ই মার্চের জনসভায় পরবর্তী ঘোষণা দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন।

৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সভা আহ্বান করা হলো। এ সভায় বঙ্গবন্ধু তার পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। অধীর আগ্রহে বিক্ষুব্ধ মানুষ রেসকোর্সের চতুর্দিক থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ময়দানে সমবেত হতে থাকলেন, দুপুরের মধ্যে ময়দান এক জনসমুদ্রে পরিণত হলো। মিছিলের স্লোগান ছিল, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’, ‘তোমার নেতা আমার নেতা, শেখ মুজিব শেখ মুজিব’।

এরই মধ্যে এক সময় বঙ্গবন্ধু সভা মঞ্চে উপস্থিত হলেন। সঙ্গে সঙ্গে জনসমুদ্রে উত্তাল ঢেউ উঠলো, মুহুর্মুহু স্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হলো। বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তৃতায় প্রতিটি বাক্যে সেনাবাহিনী, সরকারি কর্মচারী, ব্যাংক-অফিস কর্মকর্তাসহ সবার প্রতি নির্দেশ এবং দেশবাসীর প্রতি উপদেশ দিলেন— কী করে শক্রকে মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বললেন, ‘তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শক্রর মোকাবেলা করতে হবে’। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বললেন, ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি… প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল’। দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে তিনি বললেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, আরো রক্ত দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা’।

জনসমুদ্রে বজ নির্মোঘ আওয়াজ উঠলো। সেই স্লোগান, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। বাংলার প্রতিটি মানুষ, কামার, কুমার, কৃষক, মাঝি-মাল্লার, ছাত্র-জনতা, নারী-পুরুষ সকলেই নির্দেশ পেলেন মুক্তির লক্ষ্যে যাত্রার।

লেখক: শব্দসৈনিক ও সিনিয়র সাংবাদিক

সুত্র-দৈনিক ইত্তেফাক

বাংলাদেশ সময়: ১০:৩০:২২   ৩১১ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জাতীয়’র আরও খবর


তৃণমূল থেকে উন্নয়নই আ.লীগের মূল লক্ষ্য : প্রধানমন্ত্রী
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করা হচ্ছে
কাউকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করতে দেব না : প্রধানমন্ত্রী
বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট ব্যবসায়ীসহ গ্রাহকবিদ্যুত বিহীন মনপুরা ॥ তীব্রতাপদাহে ভোগান্তিতে সাধারন মানুষ
আজ পহেলা বৈশাখ
সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন: প্রধানমন্ত্রী
জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে , ভোটের চিন্তা থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এডিবির আরও সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনেছে : প্রধানমন্ত্রী

আর্কাইভ