বাংলাদেশের দ্বীপের রানী ’ভোলা’

প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » বাংলাদেশের দ্বীপের রানী ’ভোলা’
মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৬



---ভোলা বাণী ডেক্স: কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ’ নামে ডাকা হবে দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা জেলাকে। ভোলা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পর্যটন শিল্পের প্রচার ও বিপণনের লক্ষ্যে ভোলা জেলার নিজস্ব ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য শ্লোগানসহ লোগো তৈরি’ সংক্রান্ত সভায় জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতি ও মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ভোলার আয়তন ৩৭৩৭.২১ বর্গ কিলোমিটার। সাতটি উপজেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে ছোট উপজেলা বোরহানউদ্দিন (২৮৪.৬৭ বর্গ কিঃমিঃ) এবং মর্ব বৃহৎ চর ফ্যাশন উপজেলা (১৪৪০.০৪ বর্গ কিঃমিঃ)।

সভায় উপস্থিত বিশিষ্টজনরা এক একটি নামের প্রস্তাব ও প্রস্তাবের সমর্থনে যুক্তি তুলে ধরেন। প্রস্তাব গুলোর মধ্যে ছিল টক দধির ভূমি, ইলিশ রাজ্য, ইলিশ ভূমি, সুপারি ভূমি, নারকেল ভূমি, পাখির দ্বীপ, তরমুজ ভূমি, স্বর্গের দ্বীপ, প্রকৃতি দ্বীপ, সুপেয় জলের দ্বীপ ও নির্মল বায়ুর দ্বীপসহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা। শেষে ‘কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ’ যা বাংলায় ‘বাংলাদেশের দ্বীপের রাণী’ নামটি চূড়ান্ত হয়।
সভায় সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন ভোলা জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) মো. সেলিম রেজা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র ব-দ্বীপ হচ্ছে ভোলা। এই দ্বীপ হলো বাংলাদেশের কপালে টিপের মতো। ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম হাবিবুর রহমান বলেন, ‘যে নামেই ডাকি না কেনো ভোলা সমৃদ্ধ নগরী ও পর্যটনকেন্দ্র তখনই হবে, যখন এ জেলাটি ভাঙন মুক্ত হবে।’ এ জেলায় বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যা কাজে লাগিয়ে জেলাকে পর্যটক নগরী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। প্রাকৃতিক শোভায় সুশোভিত ভোলা জেলায় রয়েছে বহু দৃষ্টিনন্দন স্থান। এসব স্থান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু বর্ণনা উপস্থাপন করা হল-

বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তাফা কামাল স্মৃতি জাদুঘরঃ
১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলার দৌলতখান থানার পশ্চিম হাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হাবিবুর রহমান, মা মালেকা বেগম। ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন ১৬ ডিসেম্বর ১৯৬৭ সালে। বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালকে ১৯৭১-এর মার্চের মাঝামাঝি সময়ে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে তাকে চতুর্থ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সদর দফতর ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে বদলি করা হয় এবং সেখান থেকেই তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সাহস, বুদ্ধি ও কর্মতৎপরতা দেখে মেজর শাফায়াত জামিল তাকে যুদ্ধকালীন সময়েই মৌখিকভাবে ল্যান্সনায়েকের দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। সে অনুসারে মোস্তফা কামাল ১০ জন সৈনিকের সেকশন কমান্ডার হন। ১৭ এপ্রিল সকাল থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দরুইন গ্রামে অবস্থানরত চতুর্থ রেজিমেন্টের ২নং প্লাটুনের ওপর মর্টার ও আর্টিলারি দিয়ে আক্রমণ চালায়। চারদিন ধরে ক্ষুধার্ত সেকশন কমান্ডার মোস্তফা কামাল এলএমজি হাতে অতন্দ্র, অনড় আর অবিচলভাবে শত্রুদের মোকাবেলা করে যায়। তাকে দেখে সহযোদ্ধারা আরও আত্মবিশ্বাস পেয়ে লড়ে যায়।

১৮ এপ্রিল দুপুর থেকে শত্রু সেনারা আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তর দিক দিয়ে দরুইন প্রতিরক্ষা ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এরকম অবস্থায় কৌশলগত কারণে পশ্চাৎপসরণ করা ছাড়া কোন গন্তব্য নাই। দরুইন প্রতিরক্ষা ঘাঁটির শুধু পূর্ব দিকটি ছিল শত্রুমুক্ত। সেদিক দিয়ে সৈনিকদের নিরাপদে যেতে হলে কাউকে এলএমজি দিয়ে কভারিং ফায়ার করতে হবে। মোস্তফা কামাল সহযোদ্ধাদের নিরাপদে যাওয়ার জন্য নিজেই কভারিং ফায়ার শুরু করেন। একে একে যুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরক্ষা ঘাঁটি থেকে নিরাপদে পৌঁছে তাকে চলে আসতে বলে।

কিন্তু তার অবস্থান থেকে সরে যাননি কারণ, তিনি কভারিং ফায়ার বন্ধ করে পেছনে সরলেই শত্রুরা বুঝে নিবে তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছে। তিনি ট্রেঞ্চের ভেতরেই দাঁড়িয়ে থেকে ক্রমগত গুলি চালাতে চালাতে এক সময় শত্রুর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে ঢলে পড়েন। গঙ্গাসাগর ও দরুইন অধিকার করে পাকবাহিনী সে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। স্থানীয়রা ট্রেঞ্চের কাছে গিয়ে দেখতে পায় বুলেটে ঝাঁঝরা এবং বেয়নেট বিদ্ধ মোস্তফা কামালের মৃতদেহ। বোঝা যায় শত্রুরা যখন ট্রেঞ্চে প্রবেশ করে, তখনও মোস্তফা কামালের দেহে প্রাণ ছিল।

বর্বর হায়নারা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাকে হত্যা করে। গ্রামবাসী ওই গ্রামেই তাকে সমাহিত করেন। ভোলার দৌলতখান উপজেলার হাজীপুর গ্রামে ছিল মোস্তফা কামালের বাড়ি। ১৯৮২ সালে মেঘনার ভাঙন বাড়িটি কেড়ে নেয়। তখন তার পরিবার ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামে চলে আসে। সেখানেই সরকার শহীদ পরিবারকে ৯২ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত দেয়। নির্মিত পাকা ভবনটির নাম রাখা হয়েছে শহীদ স্মরণিকা। ভবনটির সামনেই আছে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার।
---

চর কুকরী-মুকরীঃ
ভোলার বুকে জেগে উঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চর কুকরী-মুকরী। এটিকে দ্বীপকন্যাও বলা হয়ে থাকে। ম্যান-গ্রোভ বনাঞ্চল, বন্যপ্রানী আর সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে সৌন্দর্যের এক বর্ণিল উপস্থিতি যা প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে।

বঙ্গোপসাগরের কুলে মেঘনা-তেতুলিয়ার মোহনায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা বিশাল বনাঞ্চল বেষ্টিত এ দ্বীপে বিচরণ করছে অসংখ্য হরিণ, গরু, মহিষ, বানর এবং নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। চর কুকরীতে যাওয়ার পথে বিস্তৃত বনায়নে মাঝে মধ্যে চিতাবাঘেরও উপস্থিতি টের পাওয়া যায় এ দ্বীপকন্যার বুকে।

এখানে নিরাপদ নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা, হোটেল- মোটেলসহ আধুনিক পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে তা কুয়াকাটার চেয়েও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিনত হতে পারে। এর পাশাপাশি চর পাতিলা ও ঢালচরের তাড়–য়াও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পৃথক দু’টি দ্বীপ। এখানেও শীতের সময় বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ হরিণ, বালিহাঁস মানুষের মনজুড়ানো পরিবেশের সূচনা করে। সম্প্রতি আই ইউসিএন চরকুকরী মুকরীকে বিশ্ব জীব বৈচিত্রের স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
---তাড়ুয়ার চরঃ
ঢালচরের প্রাণ কেন্দ্র থেকে প্রায় এক ঘন্টা ট্রলার যোগে দক্ষিণ দিকে গেলে দেখা মিলবে মনোরম ম্যনগ্রোভ তাড়ুয়া বাগন।

এর চারপাশে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে বিভিন্ন রকমের বনজ গাছ। এখানে আসলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলরব, বিশাল সমুদ্র সৈকত, সূর্যদ্বয় ও সূর্যাস্ত সহ নানান সৌন্দর্যের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। প্রকৃতি প্রেমীরা ইচ্ছা করলে এ চরে এসে ঘুরে যেতে পারেন।

ওয়ান্ডার কিংডমঃ
ভোলা জেলা অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হলেও এখানে বানিজ্যিকভাবে তেমন কোন পার্ক বা চিত্তবিনোদনের তমন কোন ব্যবস্থা নেই। তবে সম্প্রতি ওয়ান্ডার কিংডম নামক নামে একটি পার্ক স্থাপিত হয়েছে ভোলা সদরের চরনোয়াবাদ এলাকায়।
---

সু উচ্চ মসজিদ মিনারঃ
বঙ্গোপসাগর উপকূল ঘেঁষা চরফ্যাশন উপজেলায় পর্যটনে অপার সম্ভাবনাময়। উপজেলার নান্দনিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিতে নির্মিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সুউচ্চ মসজিদ মিনার। উপমহাদেশের মধ্যে অদ্বিতীয় এই মিনারটির উচ্চতা ২১৫ ফুট। চরফ্যাশন শহরের খাসমহল মসজিদের পাশে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ তলাবিশিষ্ট ওই দৃষ্টিনন্দন মিনারটি তৈরি হচ্ছে।

জমিদার বোরহানউদ্দিন চৌধুরী বাড়িঃ
বোরহানউদ্দিন উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদ দেউলা-সাচরা ইউনিয়ন। এলাকার প্রবেশ পথে পাঁকা রাস্তার পাশে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে দৃষ্টি নন্দন বেশ কিছু স্থাপনা। ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম এসব স্থাপনাগুলো তৈরী করেছিলেন তৎকালীন জমিদার বোরহানউদ্দিন চৌধুরী। এখনও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে বোরহানউদ্দিন চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত বসত বাড়ি এবং দৃষ্টি নন্দন মসজিদ সহ বিভিন্ন স্থাপনা।

প্রায় দেড়শ বছর আগে নির্মিত এসব স্থাপনা আজো স্বমহিমায় টিকে আছে। বাড়িটির ভেতরে প্রবেশ করলেই প্রতিটি পরতে পরতে দেখতে পাওয়া যায় জমিদারী আর ঐতিহ্যের ছোয়া। বোরহানউদ্দিন চৌধুরী বাড়ির দরজায় স্থাপিত মসজিদটিও বেশ দৃষ্টি নন্দন। দিল্লী থেকে আনা স্বেতপাথর আর বেলজিয়ামের লোহা দিয়ে নিখুঁতভাবে তৈরী এই জমিদার বাড়ির স্থাপনাগুলো এখনো দৃষ্টিকাড়ে নতুন প্রজম্মের। এছাড়াও জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে মনপুরা দ্বীপ, মনপুরা ফিশারিজ লিমিটেড, মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশন, তুলাতলী ব্লক, মঙ্গল সিকদার ব্লক, মায়া ব্রীজ, খেয়াঘাট ব্রীজ, জেলা পরিষদ লেক ইত্যাদি।

বাংলাদেশ সময়: ২১:২৫:২৪   ১৩০৭ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

বিশেষ প্রতিবেদন’র আরও খবর


দক্ষিণ আইচায় স্কুল ছাত্র নয়নের রিমোট কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত লঞ্চ ভাসছে পানিতে
দেশে অর্ধেকের বেশি নারীর বাল্যবিয়ে হয়’
টাঙ্গাইল শাড়ি চিনবেন কীভাবে
ভোলায় চলছে জাটকা নিধন ॥ ইলিশের উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা
ভোলায় শৈত্যপ্রবাহে হাঁড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপন্ন
ভোলার বন্ধন হেলথ কেয়ার চালু করল অনলাইন নার্সিং হোম সার্ভিস
দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে স্কুল উধাওচরফ্যাশনে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান
পরিবারিক ভ্রমণের জন্য ৪ টিপস
তজুমদ্দিনে সরকারি নলকূপ অকেজো, গরমে তীব্রতায় পানি সংকট।
ভোলায় আরো ৫ কূপ খননের পরিকল্পনাদেশর ২৯তম গ্যাস ক্ষেত্রর মর্যাদা পেয়েছে ইলিশা-১ কূপ।

আর্কাইভ