সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: ঢাকা, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। জাতীয় সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে হলে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা অভিমত প্রকাশ করেন যে, দেশীয় সম্পদ দিয়েই উপকূলীয় এলাকার ভূমি ও মানুষকে দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। তবে এর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংস্কার প্রয়োজন এবং এই সংস্থাটিকে সরকারের অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতির কার্যালয় ও কোস্ট ট্রাস্ট আয়োজিত জলবায়ু অভিঘাত হতে বাংলাদেশের উপকূলকে সুরক্ষা: র্বষাকালে সামূদ্রিক জোয়ারের প্লাবন থেকে রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কোস্ট ট্রাস্টের রেজাউল করিম চৌধুরী এবং এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম এমপি। এতে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত, সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস, সংসদ সদস্য জেবুন নেসা আফরোজ, সংসদ সদস্য পংকজ নাথ, সংসদ সদস্য শেখ নুরুল হক এবং সংসদ সদস্য দিদারুল ইসলাম। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ট্রাস্টের মো. মজিবুল হক মনির।
মুল প্রবন্ধে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক বিভিন্ন প্রভাবের উহারণ উল্লেখ করে মো.মজিবুল হক মনির দেশে রোয়ানু ঘূর্ণিঝড় পরবর্তীকালে জরুরি বাধ নির্মাণ কর্মসূচির করুণ কিছু চিত্র তুলে ধরেন। তিনি কুতুবদিয়া দ্বীপে বাধ নির্মাণ পরিস্থিতির উদাহরণ দিয়ে উল্লেখ করেন যে, প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ৯ মাস চলে গেলেও কাজ হয়েছে মাত্র অর্ধেক, যেটুকু কাজ হয়েছে তারও গুণমত মান নিয়ে আছে প্রশ্ন। তিনি আশংকা করেন যে, আগামী বর্ষার আগে পুরো কাজ মান সম্মতভাবে সম্পন্ন করা না গেলে কুতুবদিয়াবাসীকে দুর্যোগে ভুগতে হবে। উপকূলকে দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচাতে তিনি কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন, যেমন: ১) পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তার কাজের জন্য স্থানীয় মানুষ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, ২) স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় রক্ষা করে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে, ৩) দুর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনকে জরুরি আপদকালীন তহবিল বরাদ্দ দিতে হবে।
সীতাকু- এলাকার সংসদ সদস্য দিদারুল ইসলাম, বরিশালের সংসদ সদস্য জেবুন্নেসা, মেহেদিগঞ্জের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ, কয়রার সংসদ সদস্য নুরুল হক এবং খুলনার সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস নিজ নিজ এলাকার মানুষের সংকট আর দুর্গতির কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, তাদের এলাকায় নদী ভাঙ্গন ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে আগামী বর্ষা নিয়ে মানুষ আতংকের মধ্যে আছে। এসব সমস্যা সমাধানে তাঁরা স্লুইজ গেট সংস্কার, খাল ও নদী পুনর্খনন, নদী শাসনের উপর গুরত্বারোপ করেন। তারা তাদের এলাকার পানীয় জলের তীব্র সংকটের কথাও উল্লেখ করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন যে, মাঠ পর্যায়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের খুব কমই পাওয়া যায়।
ড. আইনুন নিশাত বলেন, উপকূলের বাধগুলোর উচ্চতা আরও ৭ মিটার পর্যন্ত বাড়াতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রমে স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি দাতা সংস্থার প্রস্তাবিত ডেল্টা পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেন।
আবদুল্লাহ আল ইসলাম এমপি বলেন, মেঘনা অববাহিকার মনপুরা, ঢালচর ও কুকরি মুকরির মতো দ্বীপগুলোকে জোয়ারের পানি থেকে বাঁচাতে বাধ নির্মাণের বিকল্প নেই।
ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেন, স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার করে সরকার কিভাবে উপকূলের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে পারে সে ব্যাপরে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে পরামর্শ দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের কাছে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ প্রস্তাব নিয়ে আসা উচিত নয় বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংস্কার প্রয়োজন এবং উপকূল রক্ষায় ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:০৫:২০ ৩৯৩ বার পঠিত |