।।।।ভোলাবাণী ডেস্ক।।।।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল শনিবার উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ট্রেন যাত্রার মধ্য দিয়ে এ প্রচারণা শুরু হয়। ট্রেন যাত্রায় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। জানা গেছে, আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর লঞ্চযোগে নির্বাচনী সফর করবে আওয়ামী লীগ। এরপর সড়ক পথে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ যাবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। এভাবে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দেশব্যাপী প্রচারণা অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সারাদেশ সফর করার নির্দেশ দেন। বিনা নোটিসে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সংগঠনের প্রকৃত চিত্র ও জনগণের মাঝে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার নির্দেশনা দেন তিনি। তার এই নির্দেশনা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশই এখন বিভিন্ন জেলা সফর করছেন। আর ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি টিম নির্বাচনী ট্রেনে উঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সকাল ৮টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন যাত্রার উদ্বোধনকালে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এই যাত্রা আমাদের নির্বাচনী যাত্রা। এই যাত্রা আমাদের অব্যাহত থাকবে। দেশব্যাপী দলকে শক্তিশালী করতে ভবিষ্যতে নৌ ও সড়ক পথেও সফর করা হবে। তৃণমূলের মানুষ যাতে বিএনপি ও জামায়াতের গুজবের রাজনীতির বিষয়ে সচেতন হয় সেজন্য দলের এই সাংগঠনিক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ওবায়দুল কাদের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জানা গেছে, নির্বাচনী ট্রেন কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে যাত্রাপথে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার অন্তর্ভুক্ত রেল স্টেশনসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্টেশনে ১১টিরও বেশি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সফরের মাধ্যমে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলে কিছু বার্তা দিচ্ছেন। সামনের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। প্রস্তুতি সেভাবেই নিতে চায় দলটি। অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা থাকলে তা নিরসন করতে হবে। দলের বৃহত্তর স্বার্থে নিজেদের মধ্যে কোনো কোন্দল রাখা যাবে না। একই সঙ্গে এই যাত্রা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করবে বলেও কেন্দ্রীয় নেতারা আশাবাদী। সভাগুলোতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভোট চাওয়ার নৈতিক অধিকার আওয়ামী লীগের আছে। কারণ দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছে আাাওয়ামী লীগ। আর বিএনপি এমন কোনো কাজ দেখাতে পারবে না যার জন্য জনগণ দলটিকে ভোট দেবে।
সফর উপলক্ষে ঢাকা থেকে নীলফামারীগামী ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’ ট্রেনের একটি বগি রিজার্ভ করা হয়। এ যাত্রা শেষ হয় নীলফামারী গিয়ে। নির্বাচনী ট্রেন সফরে অন্যান্য নেতাদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি. এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ও উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
বিভিন্ন সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে দলে বিশৃঙ্খলা বরদাশত করা হবে না। বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে ঘর বানানোর চেষ্টা করবেন না। মশারির মধ্যে মশারি টানানোর চেষ্টা করবেন না। শেখ হাসিনার অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন। ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনে ব্যর্থ। তারা নয় বছরে নয় মিনিটও আন্দোলন করতে পারেনি। তাই তারা ২০১৪ সালের মতো আবারও সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে তত্পরতা শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের এই সন্ত্রাস প্রতিরোধ করবে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আগামী ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে পরাজিত শক্তিকে আবারও পরাজিত করে বিজয়ী হবো ইনশাল্লাহ।’
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘরের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। তাই সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্বাচনী ট্রেন সফর। সরকারের নয় বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনসমক্ষে তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে এই সাংগঠনিক সফর। সেই সঙ্গে সারা দেশে অন্তর্কোন্দল কমিয়ে আনা হবে। ৩০ জানুয়ারি সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন জেলার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:২৬:২৬ ৩৪০ বার পঠিত |