জেল-জরিমানা উপেক্ষা করে ইলিশ ধরছেন জেলেরা

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » জেল-জরিমানা উপেক্ষা করে ইলিশ ধরছেন জেলেরা
সোমবার, ৯ অক্টোবর ২০১৭



---বিশেষ প্রতিনিধি ॥ভোলাবাণী ।।
জেল-জরিমানা উপেক্ষা করে ইলিশ ধরছেন জেলেরা। প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে ১ অক্টোবর থেকে। মা ইলিশ রক্ষায় কোস্টগার্ড ও প্রশাসনের অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক দিনে দুই শতাধিক জেলেকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু মাছ ধরা থেমে নেই। জেলেরা জরিমানা দিয়ে আবারো নেমে পড়ছেন ইলিশ শিকারে। তবে সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় নিরূপায় হয়েই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করছেন বলে জানিয়েছেন জেলেরা। ফলে ইলিশের প্রজনন নির্বিঘœ করতে সরকারের এ উদ্যোগ পুরোপুরি সফল না হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধি ও মা ইলিশ রক্ষায় ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুদ ও বাজারজাত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে এক মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদ-সহ বিভিন্ন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
ভোলার মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, তাদের পাশাপাশি পুলিশ, কোস্টগার্ড ও প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা একযোগে মাঠে কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ শিকারের দায়ে ১৫৭ জেলেকে আটক করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১০১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এছাড়া জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার টাকা, ২ লাখ ৮১ হাজার মিটার জাল, ১ হাজার ১৩৩ কেজি ইলিশ ও ১৩টি নৌকা জব্দ করা হয়েছে।
অন্যদিকে রাজবাড়ী মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহে ৮৬ জেলেকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৫৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- এবং ২২ জনকে ৫৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর জব্দ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ৩৮৩ কেজি ইলিশ মাছ।
তবে অভিযান কঠোর হলেও জেলেদের ইলিশ শিকার থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না। জেলেরা বলছেন, সরকার অভিযান ঘোষণা করার পাশাপাশি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিলে তাদের নদীতে নামার প্রয়োজন হতো না। ভোলার ইলিশা ইউনিয়নের বিশ্বরোডের মাথার মোশারফ, মাইনুদ্দিন, হানিফসহ আরো অনেক জেলে বলেন, আগে পাঁচদিনের অভিযান দেয়া হতো। এরপর ১০ দিন, এখন দেয়া হচ্ছে ২২ দিন। এত দীর্ঘ সময় বহু জেলে পরিবারই অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটায়। এমন অনেক পরিবার আছে, যাদের নদীতে না গেলে ঘরে চুলা জ্বলে না। তাই পেটের দায়ে জেল-জরিমানা উপেক্ষা করে ইলিশ ধরতে যান তারা।
আটকের পর ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে মুক্তি পাওয়া জলিল মাল জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এ জরিমানায় তিনি খুশি! কারণ এক রাত মাছ ধরতে পারলেই জরিমানার টাকা উঠে আসবে। আরেক জেলে নাদের শেখ জানান, জেলেদের বেশির ভাগই সুদে টাকা নিয়েছেন। এখন মাছ ধরা ছাড়া তাদের উপায় নেই। প্রশাসনের চোখ এড়াতে কৌশল হিসেবে অনেকে অপ্রাপ্তবয়স্কদের মাছ শিকারে পাঠাচ্ছে বলেও জানান এক জেলে। প্রাসন তাদের ধরলেও শুধু সতর্ক করে ছেড়ে দিচ্ছে।
ভোলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৫২ হাজার, আর রাজবাড়ীতে ৪ হাজার ৬৪০ জন। যদিও মোট জেলের সংখ্যা নিবন্ধিত সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি। এ বিপুলসংখ্যক জেলে পরিবার সম্পূর্ণরুপেই মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। এরই মধ্যে অভিযানের সাতদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে, কিন্তু জেলেদের কাছে পুনর্বাসনের সহায়তা পৌঁছায়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, অভিযানের আগে বা শুরু হওয়ার মধ্যে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা গেলে কোনো জেলেই মাছ ধরতে যেতেন না। প্রতি বছর অভিযানের কয়েক মাস আগেই আমরা তালিকা পাঠাই। কিন্তু পুনর্বাসনের চাল আসতে কেন এত সময় লাগে, তা বোধগম্য নয়। তবে বরাবরের মতো এবারো অভিযানের শেষ মুহূর্তে চাল বিতরণ করতে পারার আশা করছেন জেলা প্রশাসক মো. সেলিম উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ৯:২৮:০৯   ৩৬৩ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত
ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় চলছে বাগদার রেণু শিকারের মহোৎসব
ড্রেজারে সরকারি জলাশয়ের মাটি খনন ঝুঁকিতে মুজিব কিল্লা
চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্য নিহত
এসএসসিতে বরিশাল বোর্ডে শীর্ষে পিরোজপুর জেলা
ভোলা শহরে নেই কোন গণশৌচাগার ॥ জনগনের ভোগান্তি চরমে
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাচনমটরসাইকেল ও উড়োজাহাজ প্রার্থীর গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ
বিভাগীয় পর্যায়ে লোক ও উচ্চাঙ্গ নৃত্যে ভোলার মেয়ে অহনার ১ম স্থান অর্জন
মনপুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৮ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা ॥ ১ জনের মনোনয়ন বাতিল ॥
এসএসসির ফলাফল জানা যাবে যেভাবে

আর্কাইভ