ছোটন সাহা ॥বিশেষ প্রতিনিধি ।।ভোলাবাণী ।।
তারু বেগম (৩৫)। ছোট বেলা থেকেই নদীতে আছেন, বিয়ে হয়েছে নৌকায়, ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখনও নৌকাতে বাস করছেন। ক্ষোভের সাথে তিনি বলেন, আমাদের কোন জায়গা জমি নেই, নৌকা থাকি, ঈদ এলেও আমরা ছেলে-মেয়ের পোশাক কিনে দিতে পারিনা, সরকারের কোন সহযোগীতাও পাইনা। নদীতে মাছ পেলে খাবার জুটে না হলে না খেয়ে কাটে। আমাদের আবার কিসের ঈদ আনন্দ?
কালাম সর্দার বলেন, আমাদের এতোই দুর্ভাগ্য ঈদের দিনও ছেলে মেয়েদের কোন জাম-কাপর কিতে দিতে পারিনি, কোরবানির মাংস জুটবে না, তাই ডাল-আর ভাত খেয়েই কাটবে ঈদের দিন। নাগরিক স্বাভাবিক জীবন থেকে আলাদা বেদে সম্প্রদায়ের জীবনের চিত্র এমনই। ঈদ এলেও যেন ঈদের ছোয়া লাগেনি তাদের।
ঈদ আনন্দ নেই ভোলার মেঘনায় নৌকাভাসি বেদে সম্প্রদায়ের। সারাদিন জাল বেয়ে যে পরিমান মাছ পান তা দিয়ে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে পারেননা তারা, সেখানে ঈদ খুশির বার্তা বয়ে আনেনা তাদের।
ঠিকানাহারা এসব মানুষ কোরবান দেয়া তো দুরের কথা ছেলে মেয়েদের নতুন জামা কাপড় কিনে দেয়ার সামর্থ নেই তাদের। সরকারে পক্ষ থেকেও তারা কোন সহযোগীতা পাননি। নিরবে কেটে যায় মানতাদের ঈদ।
ভোলা সদরের কাচিয়ার কাঠির মাথা, ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতলী এবং রাজাপুর ইউনিয়নের জোড়া খাল নামক এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শত শত নৌকা বহর মানতাদের। ছেলে-মেয়ে আর পরিবার-পরিজন নিয়ে নৌকায় বসে আছেন। চোঁখ-মুখে চিন্তার ছাপ। ঈদ আনন্দ নেই, ম্লান হয়ে আছে মানতা সর্দার ও তাদের সদস্যদের। নৌকা মধ্যেই কয়েকজন নারীকে দেখা গেছে, রান্না-বান্না করতে, কেউ আবার জাল বুনছেন, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা নদীর তীরে খেলা করছে, তাদের শরীরে জড়ানো পুরাতন ছেড়া জামা-কাপড়।
মানতাদের সাথে কথা বলে জানা গেলে, নদীতেই জীবন আর সেই নদীতেই যেন মরন মানতাদের। এভাবেই বছরের পর পর বছর নদীতে বসবাস করে আসছেন ঠিকানাহারা নৌকাভাসি মানতা সম্প্রদায়। ঝড়-জলোচ্ছাস আর প্রকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করে পানিতে ভাসমান জীবন পাড়ি দিচ্ছেন।
চারদিকে ঈদের আনন্দ বয়ে এলেও যেন ব্যাতিক্রম তাদের জীবনে। কোরবান দেয়া বা সন্তানদের নতুন পোশাক কিনে দেয়ার সামর্থ নেই তাদের। তাই ঈদের দিনের পুরাতন পোশাক আর ডাল-ভাত খেয়ে কাটতে হয় তাদের ঈদ।
মানতা বহরের সর্দার সহর আলী সর্দার বলেন, ঈদের নতুন জামা কাপড় না পেয়ে কান্না করছে ছেলে-মেয়েরা, আমাদের কোন সামথ্য নেই।
ইউনুস বলেন, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে কিন্তু কাউকে কিছু কিনে দিতে পারিনি’। মানতা শিশু মানতা বলেন, নতুন জামা নেই ঈদের দিনও ছেড়া জামা গায়ে খেলাধুলা করছি।
মানতা বধু হাসিনা বলেন, ৫ ছেলে নিয়ে বহু কষ্টে দিন কাটাচ্ছি, কোরবান দেয়ার সামর্থ নেই, ডাল-ভাত খেয়ে কোনরকম দিন কাটাচ্ছি। নদীতেই মাছ নেই, তাই ভালো কাবার জুটছে না।
সজেরমিন গিয়ে মানতাদের সাথে কথা বলে জানা গেল, নদীতে মাছ পেলে দু’বেলা খাবার জুটে মানতাদের, অন্যথায় না খেয়ে মানবেতর দিন কাটাতে হয় তাদের। সরকারি কোন সহযোগীতা জুটে না তাদের ভাগ্যে। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের দিনও কষ্টে কাটবে তাদের।
এ ব্যাপারে ভোলার জেলা প্রশাসক মো: সেলিম উদ্দিন বলেন, মানতাদের স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় তাদের সহযোগীতা করা সম্ভব হচ্ছে না, তবে স্থায়ী বাসিন্দা হলেই তাদের ভিজিডির তালিকায় অন্তভুক্ত করা সম্ভব। আমরা চেষ্টা করছি তাদের সহযোগীতা করার।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৬:০৩ ১৯৩ বার পঠিত |