।।ভোলাবাণী বিভাগীয় সংবাদ।। নতুন সাজে সজ্জিত বিলাসবহুল এমভি সুন্দরবন-১১ লঞ্চটি এখন যাত্রার অপেক্ষায়। বরিশাল-ঢাকা নদী পথে চলবে লঞ্চটি। এরই মধ্যে দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে লঞ্চটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে।
আগামী বুধবার (২৩ আগস্ট) এমভি সুন্দরবন-১১ লঞ্চ বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে বলে জানিয়েছে মালিকপক্ষ। এর অধিকাংশ কেবিন ইতোমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে।
অত্যাধুনিক বিশাল আকারের এই লঞ্চটির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান দেশের অন্যতম আধুনিক ও বিলাসবহুল নৌযান সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানি। যাত্রীদের যাত্রা আরও আরামদায়ক ও সেবার মান বাড়াতে সুন্দরবন-৭ লঞ্চকে নতুন করে নির্মাণ ও নতুন সাজে সজ্জিত করে সুন্দরবন-১১ লঞ্চটি তৈরি করা হয়েছে। সমুদ্রগামী বড় জাহাজের আদলে তৈরি প্রায় চারতলা এ লঞ্চটিতে চলাফেরায় অক্ষম শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সুবিধার জন্য লিফটের ব্যবস্থা রয়েছে।
এছাড়া যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে প্লে-গ্রাউন্ড, ফুড কোড এড়িয়া, কফি হাউজ এবং ওয়াইফাই সুবিধাসহ রাখা হয়েছে বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা। রোগীদের জন্য লঞ্চে করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আধুনিকতা ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে কমতি নেই লঞ্চটিতে।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিলাসবহুল এই লঞ্চটি বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা নদীর তীরে বেলতলা ফেরিঘাট এলাকায় সুন্দরবন নেভিগেশন ডকইয়ার্ডে নতুন করে নির্মাণ ও নতুন সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ নৌ স্থপতির নকশায় সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের প্যানেল প্রকৌশলীদের নিবীড় তত্ত্বাবধানে প্রায় ১২ মাস ধরে সুন্দরবন-১১ লঞ্চের বর্ধিত ও নতুন সাজে সজ্জিত করার কাজ চলে। প্রতিদিন প্রায় ২৫০ জন শ্রমিকের নিরলস পরিশ্রমে সুন্দরবন-১১ লঞ্চের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
বরিশাল নদী বন্দরে নোঙ্গর করে রাখা অবস্থায় সুন্দরবন-১১ লঞ্চ ঘুরে দেখা গেছে, লঞ্চের করিডরগুলোতে করা হয়েছে নান্দনিক ডিজাইন। জানালার কাচ, কাঠের ব্যবহার, রঙ প্রভৃতি লঞ্চটির সৌন্দর্যবর্ধন করেছে। দুই ও তিন তলায় কাঠের কারুকাজ যে কারও মন কাড়বে। নতুন সাজ-সজ্জায় একেবারে আধুনিক করে তোলা হয়েছে লঞ্চটিকে।
এছাড়া ৪ তলা এই লঞ্চটির ডেকের যাত্রীদের জন্য নিচ তলা ও দুই তলায় বিছানো রয়েছে মসৃণ কার্পেট। যাত্রীদের বিনোদনে প্রতি কেবিনে এলইডি রঙিন টেলিভিশন ও ইন্টারকম যোগাযোগের ব্যবস্থা ছাড়াও রয়েছে তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য বড় পর্দার টিভি, অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম এবং উন্মুক্ত ওয়াইফাই ব্যবস্থা । আর নিরাপত্তার জন্য থাকছে সিসি ক্যামেরা।
লঞ্চ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, সুন্দরবন-৭ লঞ্চকে ২৯৫ থেকে বাড়িয়ে ৩৩০ ফুট দৈর্ঘ্য করা হয়েছে। প্রস্থ ৪৮ ফুট থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০ ফুট। প্রায় সবকিছু নতুন সাজে-সজ্জিত করে সুন্দরবন-১১ লঞ্চটি তৈরি করা হয়েছে। এতে করে কেবিন ছাড়াও যাত্রী ধারণক্ষমতা এবং পণ্য পরিবহনের সুবিধা অনেক বেড়েছে।
লঞ্চটিতে একটি ডুপ্লেক্সসহ ৬টি ভিআইপি কেবিন, ৪টি সেমি ভিআইপি, ১১টি ফ্যামিলি, ২টি সৌখিন, ৩৮টি ডাবল ও ৬১টি সিঙ্গেল কেবিন এবং ৪৫টি সোফা রয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় নতুন নৌযানে সিসিইউ মেডিকেল সুবিধা, অত্যাধুনিক লিফট ব্যবস্থা, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) স্থাপন এবং নামাজের স্থান রাখা হয়েছে।
নিরাপত্তার জন্য থাকবে একজন কমান্ডার সহ সশস্ত্র আনসার সদস্যরা। এছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক লাইফ গার্ড রাখা হয়েছে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য। বিশাল জাহাজটির ঝুঁকিমুক্ত চলাচলের জন্য জিপিআরএস সিস্টেম, রাডার, ইকোসাউন্ডার, এক জাহাজ থেকে একই কোম্পানির আরেক জাহাজে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য ভিএইচএফ এবং জাহাজের অভ্যন্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বক্ষনিক কথপোকথনের জন্য ওয়কিটকির ব্যবস্থা রয়েছে।
লঞ্চ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা আরও জানান, জার্মানের একটি কোম্পানির তৈরি ২ হাজার ২৫০ অশ্ব শক্তির ২টি মূল ইঞ্জিন ছাড়াও নৌযানটির বাতানুকূল প্রথম শ্রেণী ও ভিআইপি কক্ষসহ ডেক যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস নিশ্চিতকরণে ৩টি জেনারেটরসহ আরও একটি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটরও সংযোজন করা হয়েছে।
সুন্দরবন-১১ লঞ্চের নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা আশিকুর রহমান সাগর জানান , সমুদ্রগামী বড় জাহাজের আদলে তৈরি এ লঞ্চটি। আমরা প্রচলিত ভাষায় লঞ্চ বলে অভিহিত করলেও বাস্তবে এটি পরিপূর্ণ জাহাজ। তৈরির সময়ই যাত্রী ও নৌযানের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রথম শ্রেণির কেবিনগুলো বানানো হয়েছে বিলাসবহুল আবাসিক তিন তারকা হোটেলের আদলে। ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্রে সাজানো হয়েছে প্রতিটি কক্ষ।
তিনি আরও জানান, লঞ্চ পরিচালনার জন্য দক্ষ মাস্টার অফিসার ও ইঞ্জিন অফিসার ছাড়াও মোট ৫০ জনের মত বিভিন্ন শ্রেণির ক্রু দায়িত্বে থাকবে। লঞ্চে কয়েক স্তর বিশিষ্ট স্টিলের মজবুত তলদেশ থাকায় দুর্ঘটনায় তলদেশ ফেটে লঞ্চ ডুবির আশঙ্কা নেই। নৌযানটি বিলাসবহুল হলেও ভাড়ায় তেমন পরিবর্তন হবে না। সব শ্রেণির যাত্রী ভাড়া অন্যসব নৌযানের মতোই থাকবে। মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি যাত্রীসেবা দেয়া হবে সুন্দরবন-১১ লঞ্চের মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৮:৫৫ ৭৫২ বার পঠিত |