সাগরে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ।। ডুবচরের কারনে দেখা নেই নদীতে

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সাগরে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ।। ডুবচরের কারনে দেখা নেই নদীতে
শনিবার, ১৯ আগস্ট ২০১৭



---বিশেষ প্রতিবেদন ॥ভোলাবাণী ।।
গত কয়েক দিন ধরে সাগরে জেলেদের জালে ইলিশের দেখা মিললেও ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় দেখা নেই ইলিশের। কারন হিসেবে ডুবচরকে দায়ী করেছেন জেলে ও ইলিশ বিশেষজ্ঞরা। অথচ এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। গত কয়েক বছর আগেও এ সময়ে মেঘনা-তেঁতুলিয়া জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ দেখা যেতো। ভরা মৌসুমে ইলিশ না পেয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছে ভোলার উপকূলের জেলেরা।
জেলেরা জানান, জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকে কার্তিকের শেষ পর্যন্ত ইলিশ ধরার মৌসুম। এর মধ্যে আষাঢ়-শ্রাবণ ইলিশের ভরা মৌসুম। সে অনুযায়ী এখন জালে ঝাঁেক ঝাঁকে ইলিশ পড়ার কথা। কিন্তু তা পড়ছে না। অথচ এনজিওর ঋণ ও মহাজনদের দাদনের টাকার চাপে দিশেহারা হয়ে পরেছেন জেলেরা।
ভোলার দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া ইউনিয়নের বাঁধের পাড়ে থাকেন মো. হানিফ (৩৪)। মেঘনা নদীতে মাছ ধরে সংসার চলে তাঁর। ইলিশের আকালে অচল হওয়ার পথে তাঁর পাঁচ সদস্যের সংসার।
তিনি আরও বলেন, ভোরে ফজরের আজানের আগে ৪/৫ জন জেলে মিলে তাঁরা নদীতে জাল ফেলেন। জাল তোলার পর মাত্র দুটি ইলিশ দেখা পায়। বিক্রি করে পাওয়া গেছে ২৫০ টাকা। তা-ও আবার চার ভাগ হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হানিফের মতো অনেক জেলে মেঘনায় ইলিশ না পেয়ে বেকার বসে আছেন। তাঁরা জানান, ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে গেলে তাঁদের জ্বালানি তেল ও খাবার খরচই উঠতে চায় না। এ জন্য মাছ ধরতে না গিয়ে বসে আছেন।
মেদুয়া মাঝির হাটের মো. ফারুক মাঝি (৩২) বলেন, মৌসুমের শুরুতে অনেক আশা নিয়ে তিনি জাল নিয়ে নদীতে যান। মাছ না পেয়ে শেষে তাঁকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। বারবার একই ঘটনা ঘটায় এখন ইলিশ ধরতে যাওয়ার উৎসাহও কমে গেছে। জ্বালানি তেলসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়াও তাঁদের মাছ ধরতে না যাওয়ার একটি বড় কারণ।
মদনপুরের জেলে সিরাজ মাঝি (৪৫), নাছির মাঝি (৩৫), নুরুল ইসলাম মাঝিসহ (৪৯) অনেক জেলে বলেন, ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে গেলে দুই-তিন হাজার টাকা খরচ হয়। প্রথম দিকে প্রতিবারে দুই-এক হালি করে ইলিশ পাওয়া গেলেও এখন মাছ পাওয়াই দায়। এতে খরচ উঠে না। তাই তাঁরা উৎসাহ পাচ্ছেন না। ভরা মৌসুমেও মাছ না পড়ার কারণ হিসেবে সদর উপজেলার তুলাতুলির জেলে আ. মতিন মাঝি (৬১) জানান, ইলিশের উৎস হিসেবে পরিচিত ছিল মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেল। ঝাঁকে-ঝাঁকে ইলিশ পড়ত সেখানে। এখন সেখানে হরদম ট্রলার চলাচল করায় ইঞ্জিনের বিকট শব্দে ইলিশ আসে না। ওই চ্যানেলে একজন জেলে এখন দিনে দু-একটি ইলিশও পাও যায় না।
দৌলতখান মদনপুরের জেলে রহমত মুন্সি (৮০) বলেন, ‘ইলিশ মাছ আইবো কোইত্তন! নদীডার মাইদ্যে যে পরিমাণ চর পড়ছে, বাডা (ভাটা) ওইলে হাড়– পানি থাহে। এই পানিতে আইয়ে সব জাটকা ইলিশ। হেগিন ধরি হালায় পিডাইন্যা জাইল্যারা। ওরা তো মাছেরে বড় অইতো দেয় না। আমরা পামু কুডে?’
২৭ বছর ধরে মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত দৌলতখান গুপ্ত বাজারের ব্যবসায়ী আলম মাঝি (৫২) বলেন, নদীতে ডুবোচর রয়েছে। এতে পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় ইলিশ আসতে চায় না। ইলিশ তাড়াচ্ছে ট্রলারের শব্দ। বর্ষাকালে আগে যে পরিমাণ বৃষ্টি হতো, এখন তা হচ্ছে না। এই প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে জুন-জুলাই মাসেও ইলিশের দেখা নেই।
সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কমকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ইলিশ মাছ চলাচলে যে পরিমান ¯্রােত প্রয়োজন নদীর তলদেশ ভড়াট হয়ে যাওয়ার কারনে ওই পরিমান ¯্রােত নেই। তাই ইলিশ চলাচলে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় নদীতে ইলিশ কমে গেছে। তবে দু’এক সপ্তাহর মধ্যে ইলিশ কিছুটা বাড়বে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৭:২৩   ৭৮৩ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত
ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় চলছে বাগদার রেণু শিকারের মহোৎসব
ড্রেজারে সরকারি জলাশয়ের মাটি খনন ঝুঁকিতে মুজিব কিল্লা
চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্য নিহত
এসএসসিতে বরিশাল বোর্ডে শীর্ষে পিরোজপুর জেলা
ভোলা শহরে নেই কোন গণশৌচাগার ॥ জনগনের ভোগান্তি চরমে
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাচনমটরসাইকেল ও উড়োজাহাজ প্রার্থীর গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ
বিভাগীয় পর্যায়ে লোক ও উচ্চাঙ্গ নৃত্যে ভোলার মেয়ে অহনার ১ম স্থান অর্জন
মনপুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৮ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা ॥ ১ জনের মনোনয়ন বাতিল ॥
এসএসসির ফলাফল জানা যাবে যেভাবে

আর্কাইভ