আসাদুল ইসলাম সবুজ ।।ভোলাবাণী।। একটি ছবি খুব সহজেই যেমন হাজার মানুষের হৃদয় নাড়িয়ে অনেক কিছু বুঝিয়ে দেয়, ঠিক তেমনি আবার একটি ছবি হাজার লক্ষ শব্দের সমান। কয়েক হাজার শব্দ ব্যবহার করে যা বোঝানো সম্ভব নয় তা খুব সহজেই একটি ছবির মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব। প্রত্যেকটি মানুষ তার জীবনের সকল কর্মকান্ডের মাধ্যমে সফলতা খোঁজেন। অনেককে সফলতার পেছনেই ছুটতে দেখা যায় বেশীরভাগ সময়। জীবনটাকে উন্নত করতে হলে জীবনে আনতে হবে সফলতা। কতোটা ত্যাগ-তিতিক্ষা শেষে আজকের এই সফল মানুষ। আমি এত্তখান যার কথা বলছিলাম, তিনি আর কেউ নয়, তিনি লালমনিরহাট শহরের বিডি আর হাট এলাকার শারীরিক প্রতিবন্ধী মাসুম পারেভজ। তিনি নিজেই শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে স্বপ্ন আকঁছেন। ইতিমধ্যে সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করলেও উত্তরা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে সুদের চাপে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে স্বপ্ন আকাঁ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মাসুম পারেভজ এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানা গেছে, লালমনিরহাট শহরের বিডিআরহাট এলাকার সাবেক কাউন্সিলর মোঃ মোক্তার হোসেন এর পুত্র মাসুম পারভেজ। তার জম্ম ১৯৮২ সালে ৫মে। তারা ২ভাই ও ২বোন। ভাই-বোনের মাঝে মাসুম পারভেজ তৃতীয়। জম্মে ৬মাস পর থেকে আজওবর্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্কুলে ভর্তি হয়েও পড়াশুনা থেকে ছিটকে পড়েন মাসুম পারভেজ। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় পড়াশুনা করতে না পারলেও ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোবল হারায়নি। দুইটি পায়ের মধ্যে ডান পা কর্মক্ষম তাই এভাবেই ক্রেসের উপর ভর করেই চলতে হয় মাসুম পারভেজকে। শারীরিক প্রতিবন্ধী মাসুম পারেভজ শারীরিক প্রতিবন্ধীর প্রতিবন্ধকতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি, পারেনি সমাজের বোঝা করে রাখতে। জীবন সংগ্রাম মঞ্চে সংগ্রামী মাসুম পারভেজ প্রতিবন্ধীর সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ১৯৯৬ সালে বাবা সাথে সার কীটনাশকের ব্যবসায় মনোযোগী হোন। বাবার নামে সার ডিলারশীপ লাইসেন্স আর ৩৮ হাজার টাকার সার কীটনাশক নিয়ে একটি টিনশেড ঘরে পুর্ণাঙ্গ ভাবে ব্যবসায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। কিছু বছর পরে যুক্ত করেন সিমেন্ট ও পরিবহনের ব্যবসা। আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিকে টিনশেড ঘর থেকে তিন তলা বিশিষ্ঠ বিশাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রুপ দেন। ক্ষুদ্র ব্যবসাকে আজ কোটি কোটি টাকার ব্যবসায় পরিনত করেছেন তিনি। সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠার পাশাপাশি শারিরীক প্রতিবন্ধী মাসুম পারভেজ নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন সমাজসেবা ও কল্যাণমুলক নানা কাজে। সামাজিক কাজের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিনোদনেও রয়েছে তার নিবীড় সর্ম্পক। সাধ্যমতে সহযোগিতা করে আসছেন প্রতিবন্ধী ও অনাথ শিশুদের। সমাজের হতদরিদ্র মানুষজনকে দিচ্ছেন সহযোগিতা। গড়ে তুলেছেন ২০১৩ সালের ৬ডিসেম্বর তালুক খুটামারা মোক্তার টারী মাসুদ রানা হাফেজিয়া মাদ্রাসা। সেই মাদ্রাসায় ঠাঁই পেয়েছে বর্তমান ২৯জন অনাথ শিক্ষার্থী। অনুদান দিয়ে থাকেন আসছেন মসজিদ ও মন্দির উন্নয়নে প্রতিদিন সংগ্রাম করে সংগ্রামী শারিরীক প্রতিবন্ধী মাসুম পারভেজ হয়ে উঠেছেন সফলতার অনুকরন। আজ তিনি সফল ব্যবসায়ী হয়ে সকলের কাছে পরিচিত। সার, কীটনাশক, সিমেন্ট আর পরিবহন ব্যবসায় করেছেন সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান।
কিন্তু উত্তরা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে গিয়ে সুদের ভাড়ে হিমশিম খেতে হয় সংগ্রামী এই শারীরিক প্রতিবন্ধী মাসুম পারভেজকে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় সুদমুক্ত অথবা স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা পেলে তার ব্যবসাকে বেগবান করতে পারবেন। আর বাস্তবায়ন হবে প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন ও তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার স্বপ্ন। শুধু ব্যবসায় সফলতা নিয়ে আসেননি, সমাজসেবা ও সমাজে কল্যাণমুলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন সদা। আর সৃষ্টি করেছেন সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান। তবে উত্তরা ব্যাংক, লালমনিরহাট শাখায় ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে সুদের চাপে তাকে অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিবন্ধী হিসেবে তিনি উত্তরা ব্যাংক থেকে কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে উত্তরা ব্যাংক, লালমনিরহাট শাখা ব্যবস্থাপক মাজেদুল আলম সরকার বলেন, প্রতিবন্ধীদের ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা রয়েছে। তবে এবিষয়ে আমাকে হেড অফিসে কথা বলতে হবে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মাসুম পারেভজ বলেন, আমি ব্যাংক থেকে কোন সুযোগ পাচ্ছি না। আমি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যবসায়ী, আমার প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কিছু স্বপ্ন রয়েছে, হোক না সে শারীরিক প্রতিবন্ধী, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, মানুষিক প্রতিবন্ধী, আমি প্রথমত এদের পূর্নবাসন ব্যবস্থাসহ সামাজিক আট-দশ জনের মতোই মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারে। সমাজের কাছে উপহাস অথবা ঘৃনার পাত্র হয়ে বাঁচতে না হয়। কারন তারাও এই সমাজের কারো ভাই-বোন-পিতা-মাতা। আমার প্রতিবন্ধী হলেও আমাদের স্বপ্ন আছে। ছোট ছোট স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করার লক্ষে দেশের সর্বস্থরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৩:২০ ২৩০ বার পঠিত |