ভোলা সরকারি হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ভোলা সরকারি হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না
সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭



---বিশেষ প্রতিবেদক ।।ভোলাবাণী।।
ভোলাসহ দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে দালালদের দৌরাত্ম কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। বরং দালাল ও হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা মিলে গড়ে তুলেছে সিন্ডিকেট। যদিও কোনো কোনো হাসপাতালে প্রায়ই অভিযান চালায় র‌্যাব-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দালালদের গ্রেফতার করে সাজাও দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও তৎপরতা থামছে না। গত এক বছরে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে দেড় শতাধিক দালালকে গ্রেফতার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। প্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর পর তারা আইনি ফাঁকফোকরে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো তৎপরতা শুরু করে। সক্রিয় দালালদের কেউ কেউ ৮-১০ বারও জেল খেটেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অসহায় রোগী ও তাদের স্বজনরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। পকেট খালে হচ্ছে বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা নিতে এসে। রোগী বা তাদের স্বজনদের টাকা যাচ্ছে দালালের পকেটে। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে দালালচক্র। ওই চক্রের হাতে কার্যত জিম্মি অসহায় রোগীরা। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা দালালদের অর্থ দেয়া ছাড়া কোনো সেবা পান না। দালাল ও হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা মিলে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেট চক্রের চাহিদা না মেটালে রোগীকে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। রাজধানীর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পুঙ্গ হাসপাতাল, হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, কিডনি হাসপাতাল, মিডফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল নিউরোসাইন্স হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালসহ প্রায় সব সরকারি হাসপাতালের চিত্রই এক। ওসব হাসপাতালে দালালদের টাকা দিলে সেবা মেলে, না দিলে ভোগান্তির শেষ নেই। দালালদের দৌরাত্ম্যের কথা স্বীকার করে ওসব হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের দাবি, দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রায়ই দালালদের পুলিশে সোপর্দ করা হচ্ছে। জেল-জরিমানা বা দ- খাটার পর তারা অগোচরে আবারো হাসপাতালে ভিড় করছে।
সূত্র জানায়, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ ব্যয় সরকার বহন করে। সরকারি হাসপাতালে ৭০ শতাংশ বেড বিনামূল্যের এবং ৩০ শতাংশ বেডের জন্য সামান্য ভাড়া নির্ধারিত রয়েছে। তাছাড়া রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে রোগীকে স্বল্প পরিমাণ ইউজার ফি বহন করতে হয়। ভাড়ায় বেডে থেকে এবং ইউজার ফি প্রদানের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা নিলেও কোনো রোগীর মোট খরচের ১৫ শতাংশের বেশি ব্যয় হওয়ার কথা নয়। সরকারি হাসপাতালে একজন রোগীর আউটডোরে চিকিৎসা নিতে খরচ হয় ১০ টাকা আর ভর্তি হতে ১৫ টাকা। ভর্তির পর থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসার সব ব্যয় সরকারই বহন করে থাকে। যদিও সরকারি হাসপাতালে দালাল প্রবেশে কড়া সতর্কবার্তা রয়েছে। কিন্তু সেটা কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। হাসপাতালের কর্মীদের যোগসাজশেই ঢুকে পড়ছে দালালরা। আর ওসব দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনরা। বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা সেবা থেকে। মূলত সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিকভাবে সেবা না মেলায় দালালদের দ্বারস্থ হতে হয় রোগীদের। আর হাসপাতালে রোগী প্রবেশের পর থেকেই দালালদের অপতৎপরতা শুরু হয়। বহির্বিভাগ থেকে টিকিট কাটা, টেস্ট বাণিজ্য থেকে শুরু করে বেড পাওয়া সব ক্ষেত্রেই দালালদের দৌরাত্ম্য।
সূত্র আরো জানায়, সরকারি হাসপাতালে একটি বেড রোগীদের কাছে অনেক মূল্যবান। কারণ বেড পেতে রোগীদের ধরনা দিতে হয় নানাজনের কাছে। দালালচক্রের সাথে হাত না মেলালে বেড পাওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া দালালরা শুধু রোগী নিয়েই ব্যবসা করে না। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগী এবং তাদের স্বজনের মোবাইল, টাকা ও মালামালসহ সর্বস্ব সুকৌশলে চুরি করে নেয়। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালে কিছু ওষুধ, বেড ও অপারেশন বিনামূল্যে পাওয়া গেলেও সবকিছুতেই দালালদের দ্বারস্থ হতে হয়। যে কারণে অনেক টাকা খরচ করতে হয় রোগীদের। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়ে গরিব মানুষ। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে তারা ভর্তি হওয়ার পর নিরুপায় হয়ে সহায় সম্বল পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়। মূলত রাজধানীতে অবস্থিত সরকারি হাসপাতালগুলোতে সক্রিয় সহ¯্রাধিক দালাল চিকিৎসার জন্য গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল মানুষকে টার্গেট করে। দালালদের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সুসম্পর্ক রয়েছে। আর তাদের সহযোগিতা নিয়েই প্রভাবশালীরা বেসরকারি হাসপাতাল-কিনিক পরিচালনা করেন।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সরকারি হাসপাতাল পরিচালকদের সতর্ক করে বলেন, রোগীর যথাযথ সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হাসপাতালে দালালদের অনুপ্রবেশ রোধে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। কোনোভাবেই যেন তারা হাসপাতালে ভিড়তে না পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:১৭:১৬   ১৯৬ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


ভোলা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৪ আপনারা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন-মোহাম্মদ ইউনুছ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৪ লালমোহনে দোয়াত কলম সমর্থকদের ওপর শালিক সমর্থকদের হামলার অভিযোগ
চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত
ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় চলছে বাগদার রেণু শিকারের মহোৎসব
ড্রেজারে সরকারি জলাশয়ের মাটি খনন ঝুঁকিতে মুজিব কিল্লা
চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্য নিহত
এসএসসিতে বরিশাল বোর্ডে শীর্ষে পিরোজপুর জেলা
ভোলা শহরে নেই কোন গণশৌচাগার ॥ জনগনের ভোগান্তি চরমে
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাচনমটরসাইকেল ও উড়োজাহাজ প্রার্থীর গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ
বিভাগীয় পর্যায়ে লোক ও উচ্চাঙ্গ নৃত্যে ভোলার মেয়ে অহনার ১ম স্থান অর্জন

আর্কাইভ