এ বছরেই সমুদ্রের নগরে ট্রেন

প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » এ বছরেই সমুদ্রের নগরে ট্রেন
রবিবার, ২৩ জুলাই ২০২৩



ভোলাবাণী চট্টগ্রাম ডেক্স।।: পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে তৈরি হওয়া দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। রেলপথ নির্মাণের কাজও চলছে পুরোদমে। আর এ বছরেই ঢাকা থেকে ট্রেনে করে আসা যাবে কক্সবাজার। এর মধ্যদিয়ে দেশের পর্যটনখাত এগিয়ে যাচ্ছে আরও একধাপ। সড়ক পথের দীর্ঘ যাত্রার ভোগান্তি ছাড়াই পর্যটন পিয়াসীরা এখন সহজেই ছুঁয়ে দেখতে পারবে সমুদ্রের জল।

এ বছরেই সমুদ্রের নগরে ট্রেন

জানা গেছে, আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেনের প্রথম ট্রায়াল রান হওয়ার কথা রয়েছে। আর তা অনুষ্ঠিত হতে পারে ১৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। সড়কপথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে যেখানে সময় লাগে প্রায় সাড়ে ১১ ঘণ্টা, ট্রেনে আসতে সেখানে লাগবে মাত্র সাড়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। কমে আসবে পরিবহন ব্যয়ও। ঢাকা থেকে এসি বাসে যেখানে গড়ে ২ থেকে তিনি হাজার টাকা খরচ হয়, সেখানে ট্রেনের এসি চেয়ারে বসে কক্সবাজার আসতে লাগবে মাত্র এক হাজার টাকার কিছু বেশি।ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। বলা হচ্ছে- রেলপথ নির্মাণের ফলে বদলে যাবে কক্সবাজার, এই অঞ্চলসহ দেশের পর্যটনেও যোগ হবে নতুন দিগন্ত। অর্থনীতির চাকাও ঘুরবে আরও দ্রুত। ঢাকার সঙ্গে ট্রেনের যোগাযোগ ও দৃষ্টিনন্দন রেলস্টেশন নিয়ে উচ্ছ্বসিত কক্সবাজারবাসীও। তারা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা যোগ হবে ট্রেন যোগে। সরেজমিনে নির্মাণাধীন কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

এ বছরেই সমুদ্রের নগরে ট্রেন

জানতে চাইলে দোহাজারী কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, ‘এ প্রকল্পের ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। আশা করছি, সেপ্টেম্বরের ১৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে চট্রগ্রাম তথা ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি ট্রায়াল রানের চেষ্টা করব।’

তিনি বলেন, ‘সড়ক পথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে প্রায় ১১ ঘণ্টা সময় লাগে। ট্রেন চালু হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে সাড়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লাগতে পারে। আমরা সেপ্টেম্বরে ট্রায়াল রান করলেও কমার্শিয়ালি যেতে আরও দুই তিন মাস লাগবে। এ বছরের মধ্যেই এই রেলপথে আমরা ট্রেন চালুর চেষ্টা করব।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দুই জোড়া ট্রেন চলবে। পরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ঢাকা থেকে যেসব ট্রেন চট্রগ্রাম পর্যন্ত আসে, সেইসব ট্রেনের শেষ গন্তব্য কক্সবাজার হবে। এছাড়া সম্পূর্ণ নতুন একটি ট্রেন চালু হবে। তবে এখনো ট্রেনের নাম নির্ধারণ করা হয়নি।’

ট্রেনের ভাড়া কেমন হবে জানতে চাইলে আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকা চট্রগ্রামে আন্তনগর এসি চেয়ারের ভাড়া ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকার মতো, এখানে হয়ত ১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।’

জানা গেছে, সরকার দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মায়ানমারের নিকটে গুমদুম র্পযন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়লেগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। ২০১০ সালে এই কাজ শুরু হয়, শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। দুই পর্যায়ে এই প্রকল্প শেষ হবে।

প্রকল্প সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০.৮৩১ কিলোমিটার সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। আর এই অংশেরই ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রামু হতে মায়ানমারের নিকটে গুনদুম পর্যন্ত ২৮.৭৫২ কিলোমিটার সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্যে সম্পর্কে বলা হয়েছে, এর ফলে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হবে। পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওর্য়াক এর আওতায় আনা। পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, রাবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন করা যাবে।’

এ বছরেই সমুদ্রের নগরে ট্রেন

যা বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা: শুক্রবার দুপুরে নবনির্মিত কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের সামনে কথা হয় নগরীর বাহারছড়ার বাসিন্দা খোরশেদ আলমের সঙ্গে। মহেশখালী থেকে আসা এক বন্ধুকে নিয়ে স্টেশন দেখতে এসেছিলেন তিনি।খোরশেদ আলম  বলেন, ‘কক্সবাজারে রেল হচ্ছে! আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে, যেহেতু দোকান আছে। এটি কক্সবাজারবাসীর জন্যে আলাদা সুযোগ সুবিধা তৈরি করবে। সবাই খুব খুশি। হঠাৎ রেলপথ হচ্ছে, পর্যটক বেশি আসবে। ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে। এজন্যে কক্সবাজারবাসী হিসাবে সবাই সরকারকে ধন্যবাদ দিচ্ছে।’

এই রেলস্টেশনের সামনে কথা হলে সেলিম নামের স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘এটি সরকারের অত্যন্ত সুন্দর একটি উদ্যোগ। এত সুন্দর ও নান্দনিক রেলস্টেশন বাংলাদেশে দ্বিতীয় আর একটিও নেই। এই রেলস্টেশন পর্যটক ও কক্সবাজারবাসী সবার জন্যেই সুখবর। আমরা অনেক খুশি ও আনন্দিত।’

কক্সবাজারের সুগন্ধা বীচে কথা হলে কুতুবদিয়ার বাসিন্দা মুন্না বলেন, ‘বীচের কাছে আমাদের হোটেলের ব্যবসা রয়েছে। এখানে ১০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। রেলস্টেশন হলে মানুষ সহজে ট্রেনে আসতে পারবে। এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। আমরা অনেক উপকৃত হবো।’

এই বীচের পাড়েই চায়ের দোকান রয়েছে নুরুর। কথা হলে  নুরু বলেন, ‘এখন কক্সবাজার আসতে হয় বাসে। ট্রেন চালু হলে বাসের ভাড়া কমবে। ট্রেনে ভাড়াও কম থাকবে। সব মিলিয়ে আগের চেয়ে বেশি মানুষ কক্সবাজারে আসবে। এতে আমাদের ব্যবসা বাড়বে। আমাদের অনেক লাভ হবে।’

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩৮:৩৬   ১১০ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

চট্টগ্রাম’র আরও খবর


রাঙামাটিতে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে সাংবাদিক নির্মল বড়ুয়া মিলন এর বাগান বাড়ি পুড়ে ছাই
মিয়ানমারে সংঘাত সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবিকে ধৈর্য ধারণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
বাংলাদেশ মিয়ানমার সিমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি ও বোমা বর্ষণ মিয়ানমার থেকে পালাচ্ছে বিজিপি সদস্যরা, আশ্রয়প্রার্থী বেড়ে ৫০
বাবার মতো বুকের রক্ত দিতেও প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষনা
ফেনীতে প্রথমবারের মতো নারীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু
এ বছরেই সমুদ্রের নগরে ট্রেন
ডিসেম্বরে চালু হবে সাগরজলে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে
ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজারে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত

আর্কাইভ