রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মনপুরার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাংবাদিক সম্মেলন

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মনপুরার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাংবাদিক সম্মেলন
মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৭



---

ভোলাবাণী : সোমবার ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে মনপুরার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। নিন্মে তাদের লিখিত বক্তব্যটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

সংগ্রামী কলম যোদ্ধা দ্বীপজেলা ভোলার মনপুরা উপজেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন গ্রহণ করুন। আপনাদের প্রতি আমাদের অকৃত্রিম ভালবাসা, শ্রদ্ধা, আস্থা রয়েছে। শত বিপদে পড়লে তাদের পাশে আপনারা বটবৃক্ষ’র মতো দাঁড়ান আর সে কারণেই মানবাধিকার সংগঠনের মাধ্যমে আজ আমরা বড় অসহায় ও নিরুপায় হয়ে উপস্থিত হয়েছি। আপনারা জানেন সারাদেশে আমাদের সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও নিপিড়ন চলছে।

নাসিরনগরের কথা আজও আমাদের মনে পড়লে আতঁকে উঠি। গাইবান্ধার সাওতালদের এখনো মাথার উপর ছাদ নেই কিন্তু তাদের পাশে আপনারা দাড়ানোর কারণে দেশে বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে সুশীল সমাজ সহ সব শ্রেণীর মানুষ সোচ্চার হয়েছে ধীরে ধীরে তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে শুরু করেছে। আমরা নাসিরনগর ও গাইবান্ধার সংখ্যালঘু মানুষদের চেয়েও বেশি বিপদগ্রস্থ। বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চালের বঙ্গপসাগরের কোল ঘেঁসে ভোলা জেলাধীন মনপুরা থানায় আমাদের হাজার বছরের বসবাস।

যুগের পর যুগ নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে আমরা একেতো অসহায় অন্যদিকে ভূমিগ্রাসি, সন্ত্রাসী, জলদুস্য, অত্যাচার নিপিড়ণে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার জিম্মি দশা নিয়ে জীবন যাপন করছি। সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে আমাদের পাশে এখন আর কেউ নেই বিছিন্ন দ্বীপ হওয়ার কারণে প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্টরা সময় মতো কেউ উপস্থিত হতে পারে না কেউ কেউ উপস্থিত হলেও সময় গড়িয়ে অনেক দুর চলে যায়।

আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করে ছিলাম আমাদের পাশে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি দাঁড়াবে। কিন্তু অতিব দুঃখের সাথে আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বরাবর দুই হাত তুলে প্রার্থনা করছি। আমাদের বাঁচান আমাদের পাশে কেউ নেই। যার উপরে সবচেয়ে বেশি ভরসা করেছিলাম, চোখ বন্ধ করে ভোট বাক্স ভরে দিয়েছিলাম সেই ১ নং মনপুরা ইউপি চেয়ারম্যান জল ও ভূমিদস্যু আলাউদ্দিন এখন জীবন্ত আতঙ্ক হয়ে আমাদের চারপাশে ঘুরঘুর করছে।

চিল পাখির মতো ইচ্ছামতো আমাদের বুকের ধন-সম্পত্তি জবর দখল করে নিচ্ছে।

এখানে সরকারের শাসন চলে না আলাউদ্দিন বাহিনীর কথায় এখানে রাত দিন হয়। ইতিপূর্বে আমাদের দুঃখের কথা জানিয়ে ভোলা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করি পাঁচ হাজার পরিবারের পক্ষ থেকে আমি বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ মনপুরা উপজেলা পরিষদের আহ্বায়ক শ্রী ভবেশ মজুমদার পিতা: মৃত অবিনেশ মজুমদার সাং- ঈশরগঞ্জ, হরিবাড়ী, মনপুরা, ভোলা।

আমার লিখিত অভিযোগে জানাই আমরা নিম্ম স্বাক্ষরকারী হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় ৫০০০ লোক সম্পত্তিতে আদিকাল থেকে পূর্ব-পুরুষের জমা জমিতে বসবাস এবং চাষবাদ করে আসিতেছি। জমির পরিমান আনুমানিক ৪০০০ (চার হাজার) একর। বিষয়ে বর্ণিত সম্পত্তি জেএল নং ৫৬ ও ৫৭ মনপুরা ইউনিয়নের রেকর্ডীয় বহু পুরাতন মৌজা বটে।

উক্ত মৌজাদ্বয় গত ১৯৮৮-৮৯ই সনে মেঘনার ভাঙ্গনে নদী গর্ভে পতিত হয় এবং পুনরায় ১৯৯৪-৯৫ই সন হইতে খুব স্বল্প সমেয়ের মধ্যে জেগে উঠে এবং ৫/৬ বছরের মধ্যে স্বস্থল পয়স্থি হয় এবং পুনরায় বসতি স্থাপন হতে শুরু করে।

এমতাবস্থায়, আমরা সকল রেকর্ডীয় মালিকগণ একত্রিত হয়ে সরকারের সকল রাজস্ব এবং নিয়ম-কানুন মেনে বসবাস এবং চাষাবাদ করে দিনাতিপাত করিতেছি।

আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সুযোগ সন্ধানী আলাউদ্দিন চেয়ারম্যান, পিতা-মৃত আব্দুল খালেক, মনপুরা, ভোলা নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা দাবী কের তার সন্ত্রাসী ও জলদস্যুদের সহযোগিতায় আমাদের উপর বিভিন্ন রকম অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন করে আমাদের বসতি থেকে উচ্ছেদ এবং চাষাবাদের জমি জোর দখল

চলমান পাতা-২

 

পাতা-০২

করে বিভিন্নভাবে হয়রানী করিতেছে। তাহারা পাঁচ ভাই মিলে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, নিজের নামে ও ভাই, পিতার নামে বাজার করে সেখান থেকেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এবং ঢাকায় এসে বিভিন্ন ডেভেলপারদের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের বাপ-দাদার ভিটা বাড়ী ও ধানী জমি তাদের অনুকুলে রেজিঃ করার পায়তারা করছে। ইতিমধ্যে সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন ভোলা হেলিপোর্ট রোডে বিলাস বহুল বাড়ীসহ ঢাকায় নামে বে-নামে ফ্ল্যাট কিনে আরাম আয়েশে জীবনযাপন করছে আর আমরা জমির মালিক হওয়ার সত্ত্বেও জমির উপর কোন দখল নিতে পারছি না কারণ তার সসস্ত্রবাহিনী সব সময় আমাদের দিকে বন্দুক তাক করে রাখে।
এছাড়াও, রাতের আধাঁরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মহিলা ও যুবতী মেয়েদের উপর বিভিন্ন রকম নারী  নির্যাতন সহ সকল ধরনের অপরাধ অলাউদ্দিন চেয়ারম্যান চালিয়ে যাইতেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পদ বিভিন্নভাবে জবর-দখল করে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে নেয় এই আলাউদ্দিন চেয়ারম্যান। স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পরও স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেওয়াতে আলাউদ্দিন চেয়ারম্যান আরও বেপরোয়া হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার-নির্যাতন করে যাচ্ছে।
আমরা বর্তমানে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পরিবারবর্গ নিয়ে দুঃসহ দিনাতিপাত করিতেছি। আমরা ভোলা তথা বাংলাদেশের একটি বিচ্ছিন্ন থানা মনপুরার বাসিন্দা হওয়াতে ভূমিদস্যূ আলাউদ্দিন এর জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার পাওয়া এবং আমাদের জমি ফেরত পাওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের দ্বার-প্রান্তে পৌছাতে না পারায় অসহায়ভাবে সু-বিচারের স্বার্থে আপনার স্মরণাপন্ন হইলাম এ বিষয়ে

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ভোলা,
(জে.এম.শাখা)

 

স্মারক নং-০৫.১০.০৯০০.০০৬.০৪.০২.২০১৬-১৪০, তারিখ: ২৫/০১/২০১৭ খ্রি.

বিষয় : তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল।

সূত্র : জেলা প্রশাসক, ভোলা মহোদয়ের কার্যালয়ের ২৮-১১-১৬ তারিখের জেপ্রোডো/জেএম/২০১৬-১৬৭০ নং স্মারক

 

            উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্র স্মারকের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, মনপুরা উপজেলাধীন কলাতলীর চরের জমি নিয়ে বিরোধ অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন উপস্থিত হয়ে অভিযোগের বিষয় তদন্ত করি। তদন্ত প্রতিবেদনটি  মহোদয়ের সদয় পরবর্তী প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এসাথে প্রেরণ করা হলো।

 

 

আবদুল মান্নান
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়
ভোলা।

 

চলামান পাতা-৩

পাতা-৩

তার তদন্তে জমির মালিক আমরা তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছে এবং তার অপকর্মের বিস্তারিত ফিরিস্তিও রয়েছে তার পরেও কার ইশারায় সে এখনো বেপরোয়া ভাবে চলছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। সরকার বাহাদুর যদি আমাদের জমি উদ্ধারে এবং নারী শিশু নির্যাতন বন্ধে সাহসি পদক্ষেপ  গ্রহণ না করে তা হলে আমরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি সহ জাতিসংঘ বরাবর আমাদের দুদর্শার কথা তুলে ধরতে বাধ্য হবো।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
শতবাধা বিপত্তি সত্ত্বেও আপনাদের কলম কখনো থেমে থাকেনি। দ্বীপজেলা ভোলা থেকে বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরার প্রায় পাঁচ হাজার সংখ্যালঘু পরিবারের উপর আপনাদের সু-দৃষ্টি একান্ত ভাবে কামনা করছি। আপনাদের লিখনির মধ্যে দিয়ে আমাদের পাশে থেকে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করেবেন। উল্লেখ্য, বহু হিন্দু পরিবার আলাউদ্দিন বাহিনীর অত্যাচারে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে বসবাস করছে। যাওয়ার সময় তাদের সাংসারিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যেতে পারেননি। কোন রকম জীবন নিয়ে পালিয়ে গেছে। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত আছেন- বৌদ্ধিষ্ট ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ড. প্রফেসর সুকমল বড়–য়া, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত, সংগঠনের আহ্বায়ক শ্রী ভবেশ মজুমদার, মানবাধিকার সমিতির মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা-সহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যবৃন্দ।

 

 

ধন্যবাদান্তে
পাঁচ হাজার সংখ্যালঘু পরিবারের পক্ষে
(শ্রী ভবেশ মজুমদার)
আহ্বায়ক
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
মনপুরা উপজেলা শাখা, ভোলা
মোবাইল : ০১৭১৩৯৬৩১১১

বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩৪:২৭   ২৫৩ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত
ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় চলছে বাগদার রেণু শিকারের মহোৎসব
ড্রেজারে সরকারি জলাশয়ের মাটি খনন ঝুঁকিতে মুজিব কিল্লা
চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্য নিহত
এসএসসিতে বরিশাল বোর্ডে শীর্ষে পিরোজপুর জেলা
ভোলা শহরে নেই কোন গণশৌচাগার ॥ জনগনের ভোগান্তি চরমে
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাচনমটরসাইকেল ও উড়োজাহাজ প্রার্থীর গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ
বিভাগীয় পর্যায়ে লোক ও উচ্চাঙ্গ নৃত্যে ভোলার মেয়ে অহনার ১ম স্থান অর্জন
মনপুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৮ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা ॥ ১ জনের মনোনয়ন বাতিল ॥
এসএসসির ফলাফল জানা যাবে যেভাবে

আর্কাইভ