স্বপ্নের পদ্মা সেতু ৬০০ মিটার দৃশ্যমান

প্রথম পাতা » জাতীয় » স্বপ্নের পদ্মা সেতু ৬০০ মিটার দৃশ্যমান
সোমবার, ২৭ আগস্ট ২০১৮



স্বপ্নের পদ্মা সেতু ৬০০ মিটার দৃশ্যমান।।ভোলাবাণী ডেস্ক।। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা বহুমুখী সেতুর কাজ। মূল কাজের ৫৯ শতাংশেরও বেশি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর জাজিরা প্রান্তে একে একে চারটি স্প্যান পাঁচটি পিলারের ওপর বসে ৬০০ মিটার দৃশ্যমান হয়ে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করেছে, পদ্মা সেতু সম্পন্ন শুধু সময়ের ব্যাপার। দেশবাসীর প্রিয় এই সেতুর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে ঈদের দিনও কাজ চলমান থাকতে দেখা গেছে। এখানে কর্মরত দেশি-বিদেশি কর্মীরা দরদের সঙ্গেই দিন-রাত কাজ করে চলেছেন। তবে এখানে কর্মরত অমুসলিমরা ছুটিতে না গিয়ে কাজে ব্যস্ত থাকেন এবং মুসলিম কর্মীরা ঈদের ছুটিতে বাড়ি যান। মুসলিমরা ঈদ কাটিয়ে নির্ধারিত কর্মদিবসেই কাজে যোগ দিয়েছেন বলে দায়িত্বশীলরা নিশ্চিত করেছেন। ভরা বর্ষার শেষে পদ্মায় কাজে আরও গতি আসতে শুরু করেছে। বর্ষার পানি নেমে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই এবার পদ্মায় যথেষ্ট কাজ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। ৪২ পিলারে ৪১টি স্প্যান বসবে। অর্থাৎ ৪২টি পিলারের ওপর দাঁড়াবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এর মধ্যে মূল নদীতে ৪০টি পিলার এবং দুই পাড়ে দুটি পিলার থাকবে। নদীর মধ্যে ৪০ পিলারের মধ্যে ২৯টির ডিজাইন আগেই পাওয়া গিয়েছিল। পরে পাওয়া আরও তিনটিসহ ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয় ৩৩টি পিলারের। বাকি সাতটির ডিজাইন যে কোনো দিন চূড়ান্ত হবে। মাটির গঠনগত বৈচিত্র্য ও গভীরতার তারতম্যের কারণে পদ্মা সেতুর মাঝনদী ও মাওয়া প্রান্তের এসব পিলার নিয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি হলেও এর অবসান ঘটিয়ে সেতুর কাজ শিডিউল মোতাবেক এগিয়ে চলেছে। পদ্মার তলদেশেরে গভীরে নরম মাটি থাকার কারণে ইতিমধ্যে ৩৩, ৩৪, ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারের ডিজাইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিবর্তিত ডিজাইনে এই চার পিলারে সাতটি করে পাইল বসছে। এর মধ্যে অন্যান্য পিলারের মতো রেকিং ছয়টি পাইল এবং মাঝে ভার্টিক্যাল অর্থাৎ সরাসরি সোজা আরও একটি অতিরিক্ত পাইল স্থাপিত হচ্ছে। তবে দৈর্ঘ্য কমিয়ে ১২৮ থেকে ১১৪ মিটার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১৫, ১৯, ২৪, ২৫ ও ২৮ নম্বর পিলারেও একই ডিজাইনে সাতটি করে পাইল বসবে। তলদেশের নরম মাটি থাকার কারণে পদ্মা সেতুর ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১ ও ৩২ নম্বর পিলারেও একই ডিজাইনে সাতটি করে পাইল বসবে। পদ্মাবক্ষের ২২টি পিলারে সাতটি করে পাইল এবং বাকি ১৮টি খুঁটিতে ছয়টি করে পাইল থাকছে। এসব পাইলের ড্রাইভ সম্পন্ন হলে সেতুতে স্প্যান তোলা হবে। স্প্যানে গার্ডার বসিয়ে সড়ক নির্মাণ করলেই পূর্ণাঙ্গ হবে পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুর স্প্যানগুলো চীনে তৈরি এবং মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার কুমারভোগ এলাকার ওয়ার্কশপে সেগুলোকে পিলারে বসানোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের বিষয়ে স্থানীয় এমপি সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্তে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে বাঙালি বিশ্ববাসীর কাছে এক বিশেষ উচ্চতায় স্থান করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পদ্মা সেতু তৈরির এই সঠিক সিদ্ধান্তে বাঙালি জাতির মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম। ইতিমধ্যে রেলমন্ত্রী মাওয়া প্রান্ত ঘুরে দেখে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী এই এলাকায় রেল সংযোগের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ খবরে মুন্সীগঞ্জের মানুষ আনন্দিত। তারা তাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি পদ্মা সেতুর জন্য উৎসর্গ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে পদ্মাপাড়ের মানুষ।’ তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মূল সেতুর কাজের উদ্বোধন করতে প্রধানমন্ত্রী মাওয়া এসেছিলেন। সেদিন মানুষের ঢল নেমেছিল পদ্মাপাড়ে। আবারও এ বছরই পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেল সংযোগের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী মাওয়া আসছেন।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রী আসছেন এমন খবরে প্রকল্প এলাকায় উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। প্রায় আড়াই বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প এলাকায় আসছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে চড়ে পদ্মা সেতুর কাজ অবলোকন করেছেন বলে বিশেষ বার্তায় জানা যায়। তবে সরেজমিনে আবার আসছেন আড়াই বছর পর আর এই সময়ে বদলে গেছে পুরো দৃশ্যপট। এখন সেতুর অবকাঠামো অনেক এগিয়ে গেছে। সেতুর বাস্তবায়ন ক্রমেই এগিয়ে চলেছে। পদ্মা নদীতে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এই সেতুর সঠিক বাস্তবায়ন যখন একেবারেই চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মানুষের আস্থাও অনেক বেড়েছে। সেতুটি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ স্থাপনই নয়, দেশের অর্থনীতিতে এটি যুগান্তকারী অধ্যায় রচনা করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সেতু হলে জিডিপি বৃদ্ধি পাবে প্রায় দেড় শতাংশ। শুধু নির্মাণ নয়, সেতু ঘিরে চলছে আধুনিক সব সড়ক নির্মাণ। দেশে আধুনিক এক্সপ্রেস রোডের নির্মাণকাজও এগিয়ে চলেছে। ঢাকার তেঘরিয়া থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের এই এক্সপ্রেস রোড হচ্ছে। এর বাইরে আরও দুই লেনের সড়ক। অর্থাৎ ছয় লেনের এই সড়ক তৈরি হচ্ছে বিশেষভাবে। আর রেললাইন তৈরির কাজও এগিয়ে চলেছে। তাই ঢাকার পোস্তগোলার পাশের তেঘরিয়া থেকে শুরু করে মাওয়া পর্যন্ত এখন কাজ আর কাজ। কাজের এই দৃশ্য দেখে সাদা চোখেই স্পষ্ট হবে কত বড় কর্মযজ্ঞ চলছে এখানে।

বাংলাদেশ সময়: ২২:২৪:৫০   ৫১৩ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জাতীয়’র আরও খবর


তৃণমূল থেকে উন্নয়নই আ.লীগের মূল লক্ষ্য : প্রধানমন্ত্রী
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করা হচ্ছে
কাউকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করতে দেব না : প্রধানমন্ত্রী
বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট ব্যবসায়ীসহ গ্রাহকবিদ্যুত বিহীন মনপুরা ॥ তীব্রতাপদাহে ভোগান্তিতে সাধারন মানুষ
আজ পহেলা বৈশাখ
সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন: প্রধানমন্ত্রী
জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে , ভোটের চিন্তা থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এডিবির আরও সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনেছে : প্রধানমন্ত্রী

আর্কাইভ