দুর্যোগের ঝূঁকিতে ভোলার উপকূলের মানুষ

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » দুর্যোগের ঝূঁকিতে ভোলার উপকূলের মানুষ
বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৮



---ছোটন সাহা ।।ভোলাবাণী ।।উপকূল ঘুরে এসে ॥
মার্চে সাধারন ঝড়, বিশেষ করে কাল বৈশাখী ঝড় হলেও এপিল-মে এবং অক্টোর-নভেম্বর এ ৪ মাস মুলত ঘূর্ণিঝড়ের সময়। এ হিসাব ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘ঘূর্নিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর’ (সিসিপি)। সে হিসাবে কয়েকদিন পরেই আসছে দুযোগ মৌসুম, এ মৌসুমে ঝড় ঝলোচ্ছাস, অতি জোয়ার ও নদী ভাঙনসহ নানা ধরনের প্রকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। কিন্তু এ সময়ে ভোলার উপকূলের মানুষ কতটা নিরাপদ।
অভিযোগ রয়েছে, উপকূলে প্রচার-প্রচারনার অভাব, দুর্গম এলাকায় বিদ্যূৎ সুবিধা না থাকা, রেডিও, টিভি ও মোবাইল প্রযুক্তি দুর্বল নেটওয়ার্কিং থাকার কারনে এখনও দুর্যোগ সতর্ক হতে পারছেনা ভোলার উপকূলের মানুষ। তাদের কাছে পৗছায় না দুর্যোগকালীন সময়ের সতর্ক বার্তা।
উপকূলবাসীর অভিযোগ, দুর্যোগকালীন সময়ে মূল ভূ-ভন্ডে প্রচারনা চালানো হলেও দুর্গম এলাকার মানুষের কাছে সতর্কবার্ত পৌঁছায় না। যে কারনে বার বার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন উপকূলের বাসিন্দারা।
সম্প্রতি ভোলার মূল ভু-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে উকপূলবাসীর সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
উপকূলের বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক বছরে সিডর, আইলা, রেশমি, রোয়ানু ও মহাসেনসহ বিভিন্ন ঝড় বয়ে গেছে, ওই সব ঝড়ে জানমালের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু আজো উপকূলবাসী অরক্ষিত। দুর্যোগ কাটিয়ে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করলেও ফের দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারা। তার মধ্যে আবার দুর্যোগ এলেও সতর্কবার্তা পৌছায় না তাদের কাছে।
দুর্যোগ আগে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, দুর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসূচীসহ বিভিন্ন সেবাসেবী সংগঠনের কর্মীরা সতর্কবার্তা পৌছানের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও ওইসব কর্মীরা রিমোর্ট এলাকায় মাইকিং করছেন না, পৌছে না কোন সতর্ক-বার্তা।
লালমোহনের ধলীগৌর নগর ইউনিয়নের বাঁধ এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল, বাশার, ছিদ্দিক ও কাসেমসহ অন্যরা জানান, দুর্যোগকালীন সময়ে গত ৩ বছর ধরে উপকূলে কোন সতর্ক বার্তা আসেনা, মাঝে মধ্যে সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করতে শোনা যায়, তাই মানুষজন আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারেনা। গত বছরের ৭ নাম্বার সতর্কতা নিয়ে ঘর্নিঝড় ‘কোমেন’ সতর্কবার্তাও পৌঁছেনি তাদের কাছে। এমন অভিযোগ তাদের।
তারা অভিযোগ করেন, যদি কোমেন আঘাত হানতো থাহলে বহু জানমালের ক্ষতি হতো। এ জন্য কারা দায়ী হতো।
উপকূলে যখন ঘুর্ণিঝড় আতংক ঠিক সে সময়ের বিবরন দিয়ে উপকূলর বিপন্ন মানুষগুলো জানায়, বাধের উপর অস্বাভাবিকের জোয়ার থাকে। ঝড়ো বাতাসে পুরো এলাকায় গুমোট পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কিন্তু তবুও বাধের মানুষের দৈনেন্দিন কর্মকান্ড থাকে অনেকটা স্বাভাবিক। তবে, বৈরী আবহাওয়া ঝড়ের কোন পূবাভাস তা সহজেই বুঝতে পরেন তারা।
বাধের ধারের বাসিন্দা রিজিয়া, আ: খালেক, মতিউর জানান, ঝড় হবে তা মেঘ দেখলেই বুঝতে পারি কিন্তু সতর্কবার্তা আমরা পাইনা তবে বুঝতে পেরেছি বড় ধরনের কোন দুর্যোগ আসবে। তাই কিছুটা হলেও সতর্ক থাকার চেষ্টা।
সংকেত ও ঘূর্নিঝড়ের বিষয়ে কিছুই জানা থাকেনা বিবি রহিমা, লাইজু ও রেহানাসহ অনেক জেলে বধুদের। তারা জানালেন, নির্বাচন এলে মেম্বার-চেয়ারম্যান ভোট চাইতে আসে, কিন্তু দুর্যোগের সময় আমাদের কোন খোজ-খবর নেয়না। দুর্যোগের পরেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আসে না।
জেলার রিমোর্ট এলাকার মধ্যে মদনপুর, নেয়ামতপুর, চর কচুয়াখালী, রামদাসপুর, কলাতলী, চর নিজাম, চর জহির উদ্দিন, হাজিপুর, চর পাতিলা, ঢালচর, কুকরী-মুকরী, ঢালচর, চর মোজাম্মেল, সোনার চর অন্যতম। কিন্তু এসব এলাকার অধিকাংশ জনপদে সতর্ক বার্তা পৌছায় না। এছাড়াও মূল ভূ-খন্ডের বাধের ভেতর ও বাইরের এলাকার মানুষও ঝড়ের পূর্বাভাস পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উপকূলবাসীর। তবে, মূল ভুখন্ডে ব্যাপক প্রচারনা করতে দেখা যায় সেচ্চাসেবী কর্মীদের।
লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাসেম বলেন, পুরো এলাকা মানুষ অনিরাপদ। কারন এখনও তাদের জন্য পর্যপ্তন আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়নি। তাই মানুষ ঝুকির মধ্যে আছেন।
সরেজমিন ঘুরে উপকূলের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খুব কাছ থেকেই উপকূলের ছোট বড়-বড় অসংখ্য ঝড় দেখেছেন তারা। ৭০ এর ঘূর্নিঝড় গোর্কি, ৯১ এর সাইকোন তার মধ্যে অন্যতম। ওই সব ঝড়ের পরেই সিডর ও আইলা ছিলো ভয়ংকর। নদীর তীরের পরিবেশ, বাতাসের গতিবেগ, আকাশের অবস্থা দেখেই তারা বুঝতে পারেন ঝড় হবে। কিন্তু রেডিও, টিভি, প্রচারনা না থাকায় নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না তারা।
সুত্র জানায়, জেলার মোট বাসিন্দা প্রায় ১৮ লাখ। সে হিসাবে জেলায় সাইকোন সেল্টার রয়েছে ৫৭৯টি। এরমধ্যে চরফ্যাশন উপজেলায় ১৫০, বোরহানউদ্দিন ১০২, ভোলা সদরে ৭৫, দৌলদখানে ৪৯, মনপুরা ৬৩, লালমোহনে ৮৭, তজসুদ্দিনে ৫৩। এসব সাইকোন সেল্টার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবেও ব্যবহার হচ্ছে।
এছাড়া জেলার সাত উপজেলায় মোট ৫১টি মাটির কিল্লা রয়েছে। তবে এসব কিল্লার মধ্যে অধিকাংশ ব্যবহার অনুপযোগী তাই এসবের সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভোলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব প্রধান আদিল হোসেন তপু বলেন, দুর্যোগের আগে সতর্কবার্তা এবং পরে উদ্ধার কাজে আমাদের রেড ক্রিসেন্ট কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে থাকে। বিগত সময়ের মত এ বছরও আমরা সেইভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। জেলায় ৫শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী রয়েছে তারা দুর্যোগের আগে ও পরে কাজ করে।
এ ব্যাপারে ভোলা ঘূর্নিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর (সিসিপি) উপ-পরিচালক সাহাবুদ্দিন জানান, মার্চে সাধারন ঝড় হয়ে থাকে। তবে এপিল-মে, অক্টোর-নভেম্বর ৪ মাস মুলত সময়। যেহুতো দুর্যোগের সময় সন্নিকটে তাই আমরাও আমাগ প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছি। আমাদের ১০ হাজার ২০০ প্রস্তুত আছে, তারা এলাকা ঘুরে যথা সময়ে সতর্কা বার্তা পৌছে দেন। তবে আমাদের আরো কিছু আধুনিকায়ন দরকার।

বাংলাদেশ সময়: ৭:১১:১৮   ৪৮৫ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


বীজ পাইনি সার দিয়ে কি করবো ? চরফ্যাশনে কৃষকের প্রশ্ন
চরফ্যাশনে বিদ্যুৎ স্পৃস্টে শিশুর মৃত্যু
তজুমদ্দিনে ঢাকাগামী লঞ্চ থেকে ৩শ কেজি পাঙ্গাসের পোনা আটক ॥
প্রাইম ইউনিভার্সিটি ও ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির মধ্যে যৌথ চুক্তি স্বাক্ষরিত
ভোলা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৪ আপনারা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন-মোহাম্মদ ইউনুছ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৪ লালমোহনে দোয়াত কলম সমর্থকদের ওপর শালিক সমর্থকদের হামলার অভিযোগ
চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত
ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় চলছে বাগদার রেণু শিকারের মহোৎসব
ড্রেজারে সরকারি জলাশয়ের মাটি খনন ঝুঁকিতে মুজিব কিল্লা
চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্য নিহত

আর্কাইভ