।।ভোলাবাণী ডেক্স ।। হজ এজেন্সিগুলোর গাফিলতিতে ৩৯৭ জন এবার হজে যেতে পারছেন না। ভিসা না হওয়াসহ বিভিন্ন জটিলতায় তাদের হজে যাওয়া হচ্ছে না। এ দিকে একজন হজযাত্রীকে রেখে সৌদি আরবে যাবেন না বলে ঘোষণা দিলেও ৩৯৭ জনকে রেখেই রবিবার হজে গেছেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। এ নিয়ে যারা হজে যেতে পারেননি তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গতকাল সোমবার বিকালে সচিবালয়ে হজযাত্রী পরিবহন কার্যক্রমের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, রবিবার দিবাগত রাত ৩টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের শেষ ফ্লাইটে হজযাত্রী পরিবহন করা হয়। এটাই ছিল বিমানের শেষ হজ ফ্লাইট। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিমানের হজ ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করেছি। বিমানের ফ্লাইট বন্ধ থাকলেও সৌদি এয়ারলাইন্সের আরো দুটি ফ্লাইট রয়েছে। ভিসা-টিকিটে যদি কেউ থাকে আমরা সৌদি ফ্লাইটে তাদের হজে পাঠাতে পারব।

মন্ত্রী বলেন, এবার এক লাখ ২৭ হাজার ৫০০ জন হজযাত্রী পাঠানোর কথা ছিল, সেখানে সরকারিভাবে যাওয়ার কথা ছিল ৪ হাজার ২০০ জন, এজেন্সিরা পাঠাবে এক লাখ ২২ হাজার, আর ডেলিগেট যাবে এক হাজার ২৫০ জন। চুক্তি অনুযায়ী ৫০ ভাগ পাঠাবে সৌদিয়া এয়ারলাইন্স। আর বাকি ৫০ ভাগ পাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সেই হিসেবে বিমান ও সৌদিয়ার ৬৩ হাজার ১২৫ জন করে হজযাত্রী বহনের কথা। তবে বিমানের গভর্নমেন্ট ডেলিগেট এক হাজার ২৫০ জন যুক্ত ছিল। মন্ত্রী বলেন, বিমান ৬৪ হাজার ৮৭৩ জন যাত্রী বহন করেছে। সৌদিয়া ৬২ হাজার ২৩০ জন যাত্রী পরিবহন করেছে, যেখানে তাদের ৬৩ হাজার ১২৫ জন পাঠানোর কথা ছিল। বিমান ও সৌদি মিলিয়ে এক লাখ ২৭ হাজার ১০৩ জন হজযাত্রী পাঠিয়েছে। ৩৯৭ জন রয়েছেন যাদের সবারই ভিসা হয়নি, কিংবা তারা পাসপোর্ট করেননি বা টিকেট করেনি; তারা রয়ে গেছেন। তারা আমাদের হিসাবের মধ্যে আসেনি।

রাশেদ খান মেনন বলেন, এজেন্সি সমস্যা, মোয়াল্লেম ফিস, ভিসা সমস্যা, মক্কায় বাড়িভাড়া, পরপর দুবার হজে গেলে অতিরিক্ত দুই হাজার রিয়াল দেওয়ার সৌদি সরকারের যে নিয়ম রয়েছে এ সব কারণেই হজযাত্রীদের পাঠাতে সমস্যা হয়েছে। আমরা এ সব সমস্যাগুলো কাটিয়ে যারা ভিসা পেয়েছেন ও টিকিট ক্রয় করেছেন তাদের সবাইকে সৌদিতে পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত আমাদের হজ এজেন্সিকে ধরে আনতে র্যাবকে বলতে হয়েছে। তাদের ধরে আনা হয়েছে টাকা আদায়ের জন্য। এবার যেসব হজ এজেন্ট প্রতারণা করেছে তাদের আমরা চিহ্নিত করতে যাচ্ছি। তাদের লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটা মূলত ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। যে সব ট্রাভেল এজেন্ট টিকেট নিয়ে যাত্রী দেননি তাদের লাইসেন্স বাতিল করার পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা হজযাত্রী পাঠানো নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তায় ছিলাম। হজযাত্রী সংকটের কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অনেক লস হয়েছে। তবে আর্থিক লসের চেয়ে বড় লস বহির্বিশ্বে আমাদের ইমেজ। কারণ হজযাত্রী পরিবহন করতে গিয়ে বিদেশগামী বেশ কিছু ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে।

ফিরতি হজ ফ্লাইট ৬ সেপ্টেম্বর শুরু

এ দিকে বিমানের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ফিরতি হজ ফ্লাইট শুরু হবে এবং চলবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত।

চোখের পানিতে হজক্যাম্প

ছাড়লেন ১২২ জন

গতকাল শেষ দিনে ভিসা হওয়ার পরও হজ এজেন্সির প্রতারণার শিকার হয়ে বিমানের টিকেট না পেয়ে ১২২ জন হজযাত্রী হজে যেতে পারেনি। এই ১২২জন উল্লেখিত ৩৯৭জনের একটি অংশ।

ভুক্তভোগী হজযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আল-সাফা এজেন্সির ১৫ জন, মদিনা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল হজ এজেন্সির ছয়জন, সাইদ এয়ার ইন্টারন্যাশনালের চারজন, আল-বালাদ অভারসিজ হজ এজেন্সির দুজন, গোল্ডেন এয়ার ইন্টারন্যাশনাল হজ এজেন্সির আটজন, উলামা আউলিয়া হজ এজেন্সির সাতজন, আশা এভিয়েশন হজ এজেন্সির ছয়জন, ইকো এভিয়েশন অ্যান্ড টুরিজম হজ এজেন্সির ১১ জন, গুলশানে মোহাম্মাদীয়া হজ এজেন্সির সাতজন, ইউনাইটেড টুরস হজ এজেন্সির পাঁচজন, সাউথ এশিয়া হজ এজেন্সির ১৬ জন, বুশরা হজ এজেন্সির তিনজন, ইউরো এশিয়ার দুজন, আবাবিল হজ এজেন্সির একজন, সাওবান এয়ার ইন্টারন্যাশনাল হজ এজেন্সির চারজন হজে যেতে পারেননি।

ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন বলেন, আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই ১২২ জনকে সৌদি পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা করতে পারিনি। কারণ আজ রাত ৯টার পর আর কোনো হজযাত্রী সৌদি প্রবেশ করতে পারবে না। তবে আমি কথা দিচ্ছি- আগামী বছর এদের সবাইকে সরকারি খরচে হজে পাঠানো হবে।

জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে এই হজযাত্রীরা হজক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। তারা আশা করছিলেন শেষ মূহুর্তে তারা যেতে পারবেন। কিন্তু তাদের সব আশা শেষ হয়ে যাওয়ায় চোখের পানিতে শেষ পর্যন্ত হজক্যাম্প ছেড়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২:১১:৩২   ১৯০ বার পঠিত  |