ভোলায় খাদ্য অধিদপ্তরের টেন্ডার নিয়ে আ’লীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষ: আহত-১১ , শহর উত্তপ্ত

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ভোলায় খাদ্য অধিদপ্তরের টেন্ডার নিয়ে আ’লীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষ: আহত-১১ , শহর উত্তপ্ত
শুক্রবার, ২৬ মে ২০১৭



 

---

আদিল হোসেন তপু,বিশেষ প্রতিনিধি, ভোলাবাণী: ভোলায় খাদ্য অধিদপ্তরের গুদামের জন্য শ্রম ও চালান ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র কেনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ২ গ্রুপের মধ্যে হট্টগোল, হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছে।

লাঞ্চিত করা হয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরের ডাটাএন্টি অপারেটর মোঃ ইউসুফকে। এসময় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর খায়রুল কবিরের নেতৃত্বে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাস্কুল মোড় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। রাতে ওই দু’গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।

তারা শহরে প্রতিবাদ সভা, পাল্টা প্রতিবাদ সভা, শোডাউন ও পাল্টা শো-ডাউন করেছে। রাতব্যাপী পুলিশ শহরের বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থায় ছিলো। ফলে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তবে, যে কোন সময় আ.লীগের ওই দুই পক্ষের মধ্যে ফের বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন, চর শশীভূষণ ও মনপুরা খাদ্য গুদামের আগামী ২ বছরের জন্য শ্রম ও চালান ঠিকাদার (মালামাল প্রেরণ ও গ্রহণ ঠিকাদার) গত ৩ মে নিয়োগের দরপত্র আহবান করেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। ২৮ মে ২০১৭ পর্যন্ত দরপত্র বিক্রী ও ২৯ মে দরপত্র গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গতকাল দুপুর ২ টায় দরপত্র কেনা নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জহুরুল ইসলাম নকীব ও পৌর মেয়র ও জেলা যুবলীগ সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান সমর্থিত দু’গ্রুপের মধ্যে হট্টগোলের এক পর্যায়ে মারধরের ঘটনা ঘটে। এসময় লাঞ্চিত করা হয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরের ডাটাএন্টি অপারেটর মোঃ ইউসুফকে। এনিয়ে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

দুপুরের পর থেকে দু’গ্রুপ দুই স্থানে অবস্থান নেয়।

রাত ৮টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জহুরুল ইসলাম নকীব বাংলা স্কুল মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় তার সমর্থিত নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি প্রতিবাদ সভা করেন। পৌর আ’লীগের সভাপতি নজিবুল্লাহ নজিব ও প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

প্রতিবাদ সভায় জহুরুল ইসলাম নকীব দুপুরের অপ্রীতিকর ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে হামলাকারীদের শাস্তি দাবী করেন। পরে প্রতিবাদ সভা শেষে জহুরুল ইসলাম নকীবের নেতৃত্বে তার সমর্থিত নেতাকর্মীরা শহরে শোডাউন করেন। এর পরপরই পৌর মেয়র ও জেলা যুবলীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনিরের নেতৃত্বে তার সমর্থিত নেতাকর্মীরা শহরে শোডাউন করেন। পরে পৌর ভবনের সামনে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় মনিরুজ্জামান মনির অবৈধ দখলদার, চাদাবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

জেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম আহবায়ক জহুরুল ইসলাম নকীব অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন নেতাকর্মী দরপত্র কিনতে আসলে মনিরুজ্জামান সমর্থিত কয়েকজন তাদেরকে প্রথমে বাঁধা দেয় এবং এক পর্যায়ের দলবল নিয়ে হামলা চালায়।

এসময় পিটিয়ে আহত করা হয়েছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ যুগ্ম আহবায়ক মনসুর, তুহিন, সদস্য মাকসুদ, আকবর হোসেন, ধনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শামসুদ্দিন, কাচিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সেক্রেটারী মহিউদ্দিন, মারুফ, এছাহাক সহ ১১জনকে। রণি, সরোয়ার, পশাল, সকেট কামাল ও পাভেলের নেতৃত্বে এ হামলা করা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করে মেয়র মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এসব ঘটনার সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা নাই।

 

---

এদিকে আহত মাকসুদ, আকবর, মনসুর, তুহিনসহ অন্যরা অভিযোগ করেন, দরপত্র কিনতে গেলে গুদামের বর্তমান ঠিকাদার ও পৌরসভার কাউন্সিলর মিথুন মোল্লা দরপত্র কিনতে বাঁধা দেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব টেন্ডারগুলো বাগিয়ে নিয়েছেন। তবে মিথুন মোল্লা এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে জানান, বর্তমান ঠিকাদার হিসেবে তিনিও দরপত্রের জন্য টাকা জমা দিয়েছেন। কাউকে বাঁধা দেওয়া বা মারধরের সাথে তিনি জড়িত নন। মনসুর, তুহিনসহ কয়েকজন পরপত্রের জন্য এসে ‘উপরের নির্দেশ’ আছে বলে অসৌজন্যমুলক আচরণ করলে তিনি অফিস থেকে বেরিয়ে যান।

ঘটনার পর খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে গিয়ে সবগুলো কক্ষ বন্ধ পাওয়া যায়। হট্টগোল সৃষ্টিহলে কক্ষগুলোতে তালা মেরে অফিসের সবাই অন্যত্র চলে যায়। দপ্তর প্রধান জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অনন্ত কুমার বিশ্বাস মোবাইল ফোনে জানান, তিনি ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। তার অফিসে ধাওয়া- পাল্টাধাওয়ার কথা তিনি শুনেছেন উল্লেখ করে বলেন, তার ডাটা এন্টি অপারেটর ইউসুফকেও লাঞ্চিত করা হয়েছে। তবে ২৮ মে পর্যন্ত দরপত্র বিক্রীর সময় আছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, গতকাল পর্যন্ত কোন দরপত্র বিক্রী হয়নি।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ভোলা সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর খায়রুল কবির জানান, টেন্ডার নিয়ে সংঘর্ষের খবর পেয়ে তিনি অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে এসেছেন। এসে কয়েকজনকে আহতাবস্থায় দেখেছেন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় শহরে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ৯:২০:৩৭   ১০১৫ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


বীজ পাইনি সার দিয়ে কি করবো ? চরফ্যাশনে কৃষকের প্রশ্ন
চরফ্যাশনে বিদ্যুৎ স্পৃস্টে শিশুর মৃত্যু
তজুমদ্দিনে ঢাকাগামী লঞ্চ থেকে ৩শ কেজি পাঙ্গাসের পোনা আটক ॥
প্রাইম ইউনিভার্সিটি ও ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির মধ্যে যৌথ চুক্তি স্বাক্ষরিত
ভোলা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৪ আপনারা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন-মোহাম্মদ ইউনুছ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৪ লালমোহনে দোয়াত কলম সমর্থকদের ওপর শালিক সমর্থকদের হামলার অভিযোগ
চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত
ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় চলছে বাগদার রেণু শিকারের মহোৎসব
ড্রেজারে সরকারি জলাশয়ের মাটি খনন ঝুঁকিতে মুজিব কিল্লা
চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্য নিহত

আর্কাইভ