বাংলার প্রথম ‘ম্যাট্রিক পাস’ কারা ছিলেন?

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বাংলার প্রথম ‘ম্যাট্রিক পাস’ কারা ছিলেন?
শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪



---

ভোলাবাণী শিক্ষা ডেক্স।। মাতৃকূলনাশিনী’ শব্দটি থেকেই কি ম্যাট্রিকুলেশন মানে ম্যাট্রিক শব্দটি এসেছে?না, একেবারেই নয়। অবশ্য ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ বরিশালের সুপুত্তুর তপন রায়চৌধুরী তাঁর বহুল চর্চিত ও সুখপাঠ্য আত্মজীবনী ‘বাঙালনামা’য় এ সংক্রান্ত মজার একটি গল্প তুলে ধরেছেন।

“ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষাকে ইস্কুলের পণ্ডিতমশায় কোনও অজ্ঞাত কারণে মাতৃকুলনাশিনী বলে খুব আনন্দ পেতেন। পরীক্ষার ফল বের হবার পর রাস্তায় দেখা হলেই বলতেন, “মাতৃকুল নাশ ত হইয়া গেল। যাও, এইবার যাইয়া পিতৃকুল নাশ কর। বলে নিজের রসিকতায় নিজেই খুব কিছুক্ষণ হা-হা করে হাসতেন। এই অর্থহীন রসিকতার পিছনে একটা ঐতিহ্যঘটিত ব্যাপার ছিল। সেটা হচ্ছে উদ্ভট শ্লোকের ঐতিহ্য: শব্দের ধ্বনির সুযোগ নিয়ে কিংবা সমাস-সন্ধি, ধাতু-প্রত্যয়ের অপব্যবহার করে প্রতিপক্ষের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া। পণ্ডিতমশায়ের প্রিয় একটি উদ্ভট শ্লোক: “হনুমতা হতারাম, সীতা হর্ষম উপগতা।। ক্রন্দন্তি রাক্ষসাঃ সর্বে হারাম হারামারাম”। আপাত অর্থ- হনুমান কর্তৃক রাম নিহত, তাতে সীতা উৎফুল্ল আর রাক্ষসরা সবাই কেঁদে আকুল–হা রাম হা রাম বলে। প্রকৃত অর্থের ইঙ্গিত শব্দজোটের সন্ধিতে: তা ভাঙলে দাঁড়ায় হা আরাম, আরাম। অর্থাৎ, হনুমান কর্তৃক নিহত রাম না, আরাম মানে কানন, অশোককানন। কিন্তু ম্যাট্রিকুলেশন কেন মাতৃকুলনাশ হবে তার কোনও ব্যাখ্যা ছিল না। ধ্বনিসান্নিধ্যই রসিকতাটির মূল কথা। সে যাক, মোট কথা ওই বাক্যটি বারবার বলে পণ্ডিতমশায় অত্যন্ত আনন্দ পেতেন।”
পরীক্ষার হলে। ফটো: সাজ্জাদ হোসেন

আসিল কেমনে?

রসিকতা বাদ দিয়ে এবার তাহলে প্রকৃত ইতিহাসে আসা যাক। ‘ম্যাট্রিকুলেশন’ শব্দটির প্রচলন ১৫৭০ সাল থেকে। ল্যাটিন থেকে আসা শব্দটি তখন যে অর্থে ব্যবহৃত হতো তা হলো- কোন রেজিস্টারে বা তালিকায় নতুন করে একটি নাম ঢোকানো। সেই অর্থে কলেজে ভর্তির সময়ও নতুন করে নাম রেজিস্টারে নথিভুক্ত করাকেও লোকে ম্যাট্রিকুলেশন বলতো।

অনেকেই আবার গ্রিক ‘মেট্রা’ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন শব্দটি এসেছে বলে দাবি করতে ছাড়েন না। আসলে গুলিয়ে ফেলাটাও খুবই স্বাভাবিক। কেননা, ‘মেট্রা’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে মাতৃগর্ভ। কলেজে ভর্তির পরীক্ষা তো নয়া দুনিয়ার জ্ঞানার্জনের মাতৃগর্ভেরই সমতুল্য!

১৮৫১ সাল থেকে ‘ম্যাট্রিকুলেশন’ শব্দটি বহুলভাবে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে থাকে। এর একটি কারণ হলো ঠিক এর পরের বছর থেকেই ব্রিটিশরা তাদের উপনিবেশগুলোতে স্কুল পাসের পর শিক্ষার্থীদের মান যাচাইয়ের জন্য চালু করে ‘ম্যাট্রিকুলেশন’ পরীক্ষা, যা আমাদের এখানে এককালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা বা এখন এসএসসি পরীক্ষা নামে পরিচিত।

কবে থেকে চালু হলো ম্যাট্রিক পরীক্ষা?

ম্যাট্রিক পরীক্ষা এই পুরো পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফিনল্যান্ডে, ১৮৫২ সালে, হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ১৮৭৪ সাল নাগাদ অবশ্য সেই নিয়ম পরিবর্তিত হয়ে যায়। শুরুতেই বরং বলে রাখা ভালো যে, প্রথমদিকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পরীক্ষা। অর্থাৎ ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করা যেত। কেননা, তখন আলাদা করে ইন্টারমিডিয়েট বা এইচএসসি পরীক্ষার চল ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশের পরেই সেখানে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা দেওয়া হতো। অবশ্য শুরুর দিকে সেটাও পড়তে হতো না। অর্থাৎ ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেওয়ার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে উচ্চশিক্ষা বা বিএ পাস করা যেত বলেই ইতিহাস বলছে।

চার্লস উড

ভারতীয় উপমহাদেশে ১৮৫৪ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক গঠিত বোর্ড অব কন্ট্রোল-এর প্রধান স্যার চার্লস উড একটি শিক্ষাপ্রস্তাব প্রণয়ন করেন। পরে তা ব্রিটিশ সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হয়; এটিই ‘উডের শিক্ষাপ্রস্তাব’ বা ‘উডস ডেসপ্যাচ’ নামে পরিচিত। ব্রিটিশরা তখন সদ্য ভারতে জেঁকে বসেছে। নিজেদের প্রশাসনিক কাজ সামলাতে তাদের প্রয়োজন অনেক লোক। মূলতঃ সেই সব সহযোগীদের নিয়োগের জন্যেই শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে হাত দিয়েছিল তারা।

মজার বিষয় হচ্ছে, ‘উডস ডেসপ্যাচ’ বোর্ডের সদস্য ছিলেন মাত্র এক জন, অর্থাৎ চার্লস উড নিজেই।

উডের ডেসপ্যাচকে বলা হয় ভারতীয় শিক্ষার ‘ম্যাগনা কার্টা’ বা ‘শিক্ষা অধিকার সনদ’। উডের সুপারিশ ১৮৫৪ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির কাছে উপস্থাপন করা হয়। এবং ওই বছরেরই ১৯ জুলাই তা অনুমোদনও পেয়ে যায়।

উডের ওই সুপারিশমালার মধ্যেই ছিল নতুন উপনিবেশ ভারতীয় উপমহাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা। একইসঙ্গে ছিল এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের যোগ্যতা হিসেবে একটি সামগ্রিক মানদণ্ড যাচাইয়ের পরীক্ষার কথাও। আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, এর আগেই ফিনল্যান্ডে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা চালু হয়ে গেছে। কাজেই ভারতবর্ষেও এরকম একটি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

উডের পরামর্শে প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

ভারতবর্ষের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ও ম্যাট্রিক পরীক্ষা

উডের সুপারিশ অনুযায়ী নির্মিত ভারতবর্ষের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টির অবশ্য যাত্রা শুরু করতে আরও আড়াই বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

১৮৫৭ সালের ২৪ জানুয়ারি পাস হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আইন। বিশ্ববিদ্যালয়টির নীতিনির্ধারণের জন্য একটি ৪১ সদস্যের সেনেটও গঠিত হয়। সেই সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকা ছিল বর্তমানের পাকিস্তানের লাহোর থেকে মিয়ানমারের রেঙ্গুন পর্যন্ত ছড়ানো।

নানা জায়গায় নানা তথ্য থাকলেও এটা নিশ্চিত যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই এ উপমহাদেশে প্রথম ম্যাট্রিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৫৭ সালের মার্চের প্রথম সোমবার ছিল ভারতের প্রথম ম্যাট্রিকুলেশনের প্রথম পরীক্ষা।

সেসময় ব্রিটিশ ভারতের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দখলকৃত এলাকা মোট ৫টি প্রদেশে বিভক্ত ছিল। বাংলা, মাদ্রাজ, বোম্বে, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ এবং পাঞ্জাব। এরমধ্যে কলকাতা, মাদ্রাজ ও বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয় একসাথেই ১৮৫৭ সালে যাত্রা শুরু করে। যদিও মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অধীনে প্রথম ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা নেয় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে। আর বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়তো নিজেদের প্রথম ম্যাট্রিক পরীক্ষা নিয়েছিল ১৮৫৯ সালে, ঠিক দু’ বছর পরে।
‘ম্যাট্রিক পাস’ পরীক্ষার্থীদের হদিস মেলা শক্ত!

বাংলাদেশের প্রথম ম্যাট্রিক পাস কারা?

এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন। বিস্তর ঘাঁটাঘাঁটি করে কিছু নামোদ্ধার সম্ভব। কিন্তু আড়ালেও থেকে যায় অনেকের নাম। ১৭৫ বছর পর পাসকৃত ছাত্রদের (ছাত্রী ছিলেনই না তখন) অধিকাংশেরই ঠিঁকুজি পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

১৮৫৭ সালে অনুষ্ঠিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে উপমহাদেশের প্রথম সেই ম্যাট্রিক পরীক্ষার সিট পড়েছিল কলকাতা টাউন হলে। ইতিহাসের নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে কলকাতা টাউন হল এখন লাইব্রেরি ও মিউজিয়ামে রূপান্তরিত হয়েছে।

সে যাইহোক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথমবার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন মোট ২৪৪ জন। যার মধ্যে পাস করেছিলেন ১৬২ জন। পাসের হার ছিল ৫০ পার্সেন্টেরও বেশি।

কলকাতা টাউন হল, প্রথম ম্যাট্রিক পরীক্ষার সিট পড়েছিল এখানেই

এখন এই ১৬২ জনের মধ্যে ঠিক কতজন বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মানুষ ছিলেন- তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের ভূসীমানায় পড়ে এমন কলেজগুলো থেকে কতজন ম্যাট্রিক পাস করেছিলেন- সেটির নিশ্চিত খতিয়ান অবশ্য পাওয়া যায়।

যেমন- ঢাকা কলেজ থেকে ১৮৫৭ সালে অনুষ্ঠিত ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাস করেছিলেন ১৬ জন, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১ জন, চট্টগ্রাম জিলা স্কুল থেকে ৩ জন এবং যশোর থেকে ১ জন। এর মধ্যে ঢাকা কলেজ থেকে পরীক্ষায় পাস করা এ জে স্টিফেন এবং এম জে স্টিফেন ঠিক বাঙালি ছিলেন কিনা তা নথিপত্র থেকে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

ভারতীয় উপমহাদেশের ব্যক্তি ও স্থান নামের বানান ও উচ্চারণ অধিকাংশ সময়েই ব্রিটিশরা ভুল করতেন। আবার এ উচ্চারণজনিত কারণে অনেক পরীক্ষার্থীর নামের বানানটাই চিরকালের জন্যে বদলে গেছে। প্রথমবার ম্যাট্রিক পাসকৃতদের নামগুলো নথিতে যেহেতু ইংরেজি ভাষায় ভুক্তি দেওয়া হয়েছিল- সেক্ষেত্রে প্রকৃত নামের এদিক-সেদিক হয়েছে বলেই ধরে নেওয়া উচিত হবে।

এই লেখায় বর্তমান বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানায় পড়ে এমন সব স্কুল বা কলেজ থেকে ১৮৫৭ সালের সেই প্রথম ম্যাট্রিক পরীক্ষায় কৃতকার্যদের একটি তালিকা দেওয়া হলো।

ঢাকা কলেজের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম বিভাগে পাস করেন- গৌরমোহন বসাক, ঈশাণ চন্দ্র নাগ, কাশীনাথ মুখার্জি, রজনী কুমার দত্ত, এ জে স্টেফেন, এম জে স্টেফেন, তনয় প্রসাদ রায়, ভগবান সি চক্রবর্তী, ব্রজমোহন রায়, কালীনাথ দে, চণ্ডীচরণ বোস এবং দ্বারকানাথ রায়।

ঢাকা কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেছিলেন- বসন্ত সুন্দর দাস, জগবন্ধু রায়, শ্যামাচরণ সেন এবং সারদা পেরসাদ (প্রসাদ!) রায়।

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে পাস করেছিলেন দীননাথ সেন।

চট্টগ্রাম কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে পাস করেছিলেন- লুখন (লক্ষ্মণ!) চন্দ্র দাশ, উমাচরণ দত্ত এবং প্রসন্ন কুমার দাশ।

এছাড়া যশোর জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে পাস করেছিলেন বসন্ত কুমার ঘোষ।

প্রেসিডেন্সি কলেজ

কেন ম্যাট্রিক পাস করা বাংলাদেশিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা কঠিন?

সেসময় কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজটি পরিচিত ছিল হিন্দু কলেজ নামে। ১৮৫৫ সাল পর্যন্ত আসলে প্রতিষ্ঠানটির নাম হিন্দু কলেজই ছিল।
শিশির ঘোষ

বর্তমান বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীই সেখানে পড়েছেন, সেখান থেকেই ম্যাট্রিক পাস করেছেন।

১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হওয়া ম্যাট্রিকুলেশনে পরীক্ষায় প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ২৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। তারা সবাই উত্তীর্ণও হয়েছিলেন।

শিশির কুমার ঘোষ

তো এই ২৩ জনের মধ্যে একজন ছিলেন- শিশির কুমার ঘোষ। যশোরের ঝিকরগাছার এই গুণী সন্তান বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাসের প্রণম্য এক ব্যক্তিত্ব। তারই সম্পাদনায় প্রথম প্রকাশিত হয় ‘অমৃত বাজার’-এর মতো পত্রিকা। শিশির কুমার ঘোষের মতো এরকম আরও অনেকেই প্রেসিডেন্সি কলেজের ওই ২৪৪ জনের তালিকায় আছেন- যারা হয়তো বর্তমান বাংলাদেশের মাটির সন্তান।যশোরের আইনজীবী হরিনারায়ণ ঘোষের সন্তান শিশির কুমার ঘোষের এক ভাইয়ের নাম ছিল বসন্ত কুমার ঘোষ। তবে একথা নথিপত্রের ভিত্তিতে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে, যশোর জিলা স্কুল থেকে প্রথম ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কৃতকার্য ছাত্রটি শিশির কুমার ঘোষের ভাই কিনা। এজন্যে প্রয়োজন বাংলার শিক্ষার ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত ও পূর্ণাঙ্গ গবেষণা।

যশোর জিলা স্কুল থেকে প্রথম ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন বসন্ত ঘোষ

ইংরেজদের আনুকূল্যে প্রতিষ্ঠিত স্কুলগুলো থেকে প্রথমবার ম্যাট্রিক পরীক্ষায় কৃতকার্যদের তালিকায় কোনও মুসলিম নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে কলকাতা মাদ্রাসার অন্ততঃ ৭ জন শিক্ষার্থী সেবারের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছিলেন বলেই পুরনো নথিপত্র বলছে। এছাড়া পাঠককে এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে যে, প্রথমবার ম্যাট্রিক পরীক্ষাতে কিন্তু প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবেও অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল।

কারণ প্রথমবার ম্যাট্রিকুলেশনে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিয়েই পাস করেছিলেন শম্ভু চন্দ্র রায়, যদুনাথ মিত্র, নন্দলাল ঢোলে, নরেন্দ্র কুমার দাশ এবং সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

একাত্তরের ম্যাট্রিক পরীক্ষা: জনযুদ্ধের হাতিয়ার!

ম্যাট্রিক পরীক্ষার নাম বদল মানে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা অর্থাৎ এসএসসি নামকরণটা হয় প্রথমে ভারতে। ১৯৬৫ সালে। পাকিস্তানেও সম্ভবতঃ ওই একই বছর এই পরীক্ষার নাম পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মাবধি আমরা শুধু এসএসসি পরীক্ষাই দিয়ে আসছি।
বিখ্যাত এ মিছিলের বাম থেকে প্রথম মানুষটিই নীনা১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেও এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দেশের অবস্থা স্বাভাবিক দেখাতে একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার শোষকরা নানা ফন্দি অবলম্বন করেছিল। স্বাধীনতার সংগ্রামে মুখর কিশোর-কিশোরীদেরকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ানোও ছিল তেমনি এক ফন্দি। সেসব দিনের কথা তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম নারী ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা নীনা। তার স্মৃতিকথায় ১৯৭১ সালের ১৫ জুলাই শুরু হওয়া ম্যাট্রিক পরীক্ষার প্রথম দিনের ঘটনাটি ঠিক এভাবে উঠে এসেছে-

‘সকালে কয়েকবারই খুব জোরে বোমার শব্দ শুনলাম। পারুল ফোন করে বলল, শান্তিনগরে এত জোরে আওয়াজ হয়েছে যে মাটি কেঁপে উঠেছে। ফোনে সব কথা খুলে বলতে পারে না। বুঝলাম, নিশ্চয় সিদ্ধেশ্বরী স্কুলেও বোমা পড়েছে। ১০টার সময় ম্যাট্রিক পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই অনেকবার বোমার আওয়াজ পেলাম। সরকারের এতো ডাকাডাকি সত্বেও খুব কম ছাত্রছাত্রীই পরীক্ষা দিতে যাবে। আজকে বাইরে বের হওয়া নিরাপদ নয়। কখন কোথায় বোমা পড়ে বলা যায় না। বিকেলেও বোমা পড়লো। টেলিভিশনে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে দেখাল। বোধ হয় এক ঘরে সবাইকে বসিয়ে ছবি তুলেছে। তবু দেখলাম খুব কম মেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে, তার মধ্যে অনেক চেয়ার খালি পড়ে আছে। ছেলেদের দু-তিনজনকেই খুব বড় করে দেখাল।”

নীনার স্মৃতিচারণে একাত্তরে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টিতে গণমাধ্যম (রেডিও ও টিভি) এবং সংবাদপত্রে পাকিস্তানের হানাদারদের চালানো সরকারি প্রচারণার মুখ্য বিষয়টি সরাসরি উঠে এসেছে। একইসঙ্গে এসেছে একাত্তরে পাকিস্তানি দখলদারদের নেওয়া ম্যাট্রিক পরীক্ষা বন্ধ করতে মুক্তিবাহিনীর নানা তৎপরতা ও বোমা হামলার কথাও।

সেইসব যোদ্ধারা কারা- যারা একাত্তরে পাকিস্তানি শোষকদের ম্যাট্রিক পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে বার্তা দিতে চেয়েছিলেন, আমরা- বাংলার মানুষেরা কেবল প্রতিরোধ যুদ্ধে আর নেই- জনযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছি?
রশীদ হায়দার সম্পাদনা করেছেন স্মৃতি: ১৯৭১

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক রশীদ হায়দার

এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় লেখক, ঔপন্যাসিক এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক রশীদ হায়দারের লেখায়। একটি জাতীয় দৈনিকে ‘যুদ্ধের বছরে এসএসসি পরীক্ষা’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন-“১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাস চারেক আগে থেকেই আমি ভাড়া বাসায় বাস করতাম খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা লুত্ফর রহমান বীণুদের দোতলায়। বীণুরা ওই এলাকার আদি বাসিন্দা। বীণু ১৯৭১ সালেই এসএসসি পরীক্ষা দেবে। আমার সঙ্গে পরিচয় হয় আমার ছোট ভাই জাহিদ হায়দারের মাধ্যমে। জাহিদও সে বছর এসএসসি দেবে। দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু; দুজনই কী করে না করে কিংবা কোথায় যায় না যায়, কার সঙ্গে মেশে না মেশে—কিছুই জানি না।…”

এর মধ্যে একদিন বীণু ও জাহিদ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে আগরতলায় প্রশিক্ষণ নিতে ঘর ছাড়েন।

রশীদ হায়দার লিখেছেন, “…জাহিদ কুমিল্লা বা ব্রাহ্মণবাড়িয়া দিয়ে ছয়-সাত দিন পর ঢাকা ফিরে আসে। বীণু জাহিদের সঙ্গেই এসেছিল কি না মনে নেই, তবে একদিন জাহিদ একটা প্রস্তাব করে বসে। জাহিদের ডাক নাম স্বপন। স্বপন বলে—

যুদ্ধে যখন যেতেই পারলাম না, তখন ঘরে বসেই একটা কিছু করব।

কী করবি?

সামনেই তো এসএসসি পরীক্ষা। আমরা পরীক্ষা হতে দেব না ঠিক করেছি।

ঝরা ও আমি দুজনই আঁতকে উঠি। কী করতে চায় ওরা?

বলেছি, আমার বাসার সামনেই মিনি ক্যান্টনমেন্ট আনসার হেডকোয়ার্টার্স, তার ঠিক পূর্ব পাশেই খিলগাঁও গভর্নমেন্ট বয়েজ হাই স্কুল, সেখানেই পরীক্ষার সেন্টার।

শুকনো গলায় আরো জানতে চাই, আমরা বলতে আর কে কে?

বীণু আর স্বপন বলে, ছয়-সাতজনের মতো বন্ধু।

কিন্তু তারা কারা?

স্বপন জানায়, বীণু (লুত্ফর রহমান), জন (নজিবুল্লাহ), সোহেল (সামাদ), ফেরদৌস (নাজমী), ফিরোজ মাহমুদ, বাবু (আহসান নওয়াজ), মাহবুবুর রহমান, স্বপন (জাহিদ হায়দার)—আরো দু-একজন ছিল। কিন্তু প্রায় ৪৭ বছর আগের কথা, সবার সম্পূর্ণ নাম মনে পড়ছে না বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”

রশীদ হায়দার তাঁর লেখায় তুলে ধরেছেন কিভাবে বীণু-জাহিদরা হানাদারদের প্রহসণের ম্যাট্রিক পরীক্ষা আটকাতে চেষ্টা করেছিলেন-

“… জন, বীণু, স্বপনরা ভেতরে কী করছে? ওরা লিফলেট ছাপাচ্ছে একটা অদ্ভুত উপায়ে। জনদের বাড়ি নারিন্দায়, ওখানেই ওদের একটা নিজস্ব প্রেস রয়েছে। ট্রেডল মেশিনে ছাপার কাজ চলে। জনই প্রস্তাব দেয়, আমাদের নিজস্ব প্রেস থেকে লিফলেটটা ছাপানো যেতে পারে।

ওদেরই একজন বলে, প্রেসে তো আরো লোক আছে। যদি জানাজানি হয়? সে আশঙ্কাটাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কেউ কোনো কথা বলছে না। কিছুক্ষণ পর জনই জানায়, ওদের প্রেসে একজন অত্যন্ত বিশ্বাসী লোক আছে। তাকে দিয়েই কম্পোজ করাব।

তখন প্রশ্ন এলো, ছাপা হবে কোথায়? জনদের ছাপার মেশিন আছে, কিন্তু এক কান দুই কান হয়ে যে পাঁচ কানে খবরটি যাবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?
কিন্তু লিফলেটে যে কথাগুলো লেখা হবে, সেটাই তো ঠিক হয়নি। ওরাই সিদ্ধান্ত নেয়—ওটা আমাকেই লিখতে হবে।

এটা আমার কাছে যুদ্ধে সরাসরি না যাওয়ার গ্লানি থেকে কিছুটা মুক্তি লাভ করার একটা সুযোগ বলে মনে হয়। রাজি হয়ে যাই। পরদিন সকালেই স্বপন-বীণুরা লেখাটা নিয়ে জনকে পৌঁছে দেবে।

প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে লেখাটা লিখি আর কাটি, কাটি আর লিখি। শেষে যেটা দাঁড়ায়—

প্রিয় এসএসসি পরীক্ষার্থী বন্ধু, তুমি নিশ্চয়ই জানো, আর কয়েক দিন পরই আমাদের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু আমরা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই পরীক্ষা দেব না, নিতে দেওয়া হবে না, বানচাল করব। তুমি জানো নিশ্চয়ই, গণহত্যাকারী পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেখাতে চাইছে, দেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে, কোথাও কোনো সমস্যা নেই প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এটা প্রমাণ করার জন্য এসএসসি পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, তুমি পাকিস্তানের এই চক্রান্তে পা দেবে না। তুমি জানো না, আমরা তোমারই আশপাশে আছি। যদি পরীক্ষা দাও, তাহলে যেকোনো মুহূর্তে জীবনের শেষ পরীক্ষার মুখোমুখি হবে।

মনে রেখো। সবার আগে দেশ। অতএব, সাবধান!

ইতি, তোমারই সতীর্থ শুভাকাঙ্ক্ষী

হুমকির লেখাটির বয়ান মোটামুটি এ রকমই ছিল। মূল লেখাটি দীর্ঘদিন কাছেই রেখেছিলাম, এখন আর খুঁজে পাই না।

তবু অনেকে পরীক্ষা দিতে এসেছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অনেক পরীক্ষার্থীই খাতায় প্রতি পৃষ্ঠায় লিখেছিল—‘জয় বাংলা’, ‘বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই’, ‘তোমার দেশ-আমার দেশ—বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’ ইত্যাদি স্লোগান। তথ্যটি আমি পেয়েছি আমারই এক খাতা-পরীক্ষক আত্মীয়ের কাছ থেকে। পরীক্ষা যে আদৌ হয়নি তা পরীক্ষার্থী বন্ধুরা প্রমাণ করে ছেড়েছিল। এবং শেষ পর্যন্ত পুরো পরীক্ষাই হয়নি। কিন্তু পরীক্ষা যে ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে, সেটি সরকার প্রচার করতে ভোলেনি। খবর দেখে আমরা শুধু হাসি।”

ম্যাট্রিক পরীক্ষা ঠেকাতে এই খণ্ড লড়াইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ঘটানো নৃশংস একটি ঘটনাও তুলে ধরেছেন রশীদ হায়দার।

“খিলগাঁও, চৌধুরীপাড়া থেকেই যে কাজটি হয়েছে, পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের চরেরা টের পেয়ে যায়। এরপর শুরু হয় মিলিটারি তৎপরতা। স্বপন-বীণুদের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরপরই ভারতীয় কাগজ ও কম্পোজ করা ম্যাটার সরিয়ে ফেলা হয়।

যে মর্মান্তিক ঘটনাটার কথা বলছিলাম। মিলিটারির ছোটাছুটি শুরু হয়েছে দেখে বীণু কোথায় গেল জানি না, স্বপন গিয়ে লুকাল বীণুদের বাড়ির ঠিক পেছনেই ঘন কচুগাছের ঝোপের ভেতরে। আমরা বাসার দোতলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মিলিটারি জিপের ছোটাছুটি দেখছি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো, রাতও নামল, কচুগাছের মধ্যে লুকিয়ে থাকায় স্বপনের সারা গা চুলকাতে চুলকাতে চাকা চাকা দাগ হয়ে গেছে, ওর খুব কাছ দিয়েই মিলিটারি জিপ এসেছে, গেছে। সেই রাতেই জানলাম, খিলগাঁও এলাকা থেকে সন্দেহ করে দুটি ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে।

পরে তারা আর ফেরেনি।”

আচ্ছা পৃথিবীতে ম্যাট্রিক পরীক্ষার কারণে আর কেউ কখনো শহীদ হয়েছেন? এ গর্ব শুধুই কি বাঙালিদের মুকুটে?

ঢাকা কলেজ, পূর্ব বাংলার অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

কী কী প্রশ্ন কমন পড়েনি?

একাত্তরে যারা ম্যাট্রিক বা এসএসসি পরীক্ষা দেননি, তারা বাহাত্তরে সেই পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। বাহাত্তর সালে অবশ্য দুই বছরের পরীক্ষার্থীরা দুই দফায় আলাদা আলাদাভাবে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সবাইকেই অটোপাস দেওয়া হয়। এ নিয়ে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তার স্মৃতিচারণে লিখেছেন- প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং তিনি এই অটোপাসের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলী তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়েই ‘অটোপাস’ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন।

সে যাই হোক উপশিরোনামে ফিরে আসি। আসলে ম্যাট্রিক পরীক্ষা নিয়ে লিখতে গেলে সঙ্গত কারণেই ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এমনকি রাষ্ট্রিক কাঠামো পর্যন্ত আলোচনায় চলে আসে। অতোটা গভীরে ঢুব দিলে, আর থই পাওয়ার যো থাকে না।

তাই আপাতত কিছু প্রশ্ন রেখেই আজকের লেখার সমাপ্তি টানা যাক।

১. কেন মুসলিমদের সংখ্যা কম ছিল প্রথম ম্যাট্রিকুলেশন পাসের তালিকায়? মাদ্রাসাগুলো কেন আর ১৮৫৭ ও ১৮৫৮ সালের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য আর নিজেদের শিক্ষার্থীদের পাঠায়নি?

২. ঠিক কে বা কারা মান নির্ধারণ প্রক্রিয়া শুরু করলো. মানে ফার্স্ট, সেকেন্ড ও থার্ড ডিভিশন কীভাবে নির্ধারিত হতো? কত নম্বর পাওয়া লাগতো?

৩. উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কবে থেকে নেওয়া শুরু হলো?

৪. প্রথমদিকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় কয়টি বিষয়ের উপরে হতো? কী কী বিষয়? কারা ছিলেন পরীক্ষক?

৫. পৃথিবীতে ম্যাট্রিক পরীক্ষা চালু হওয়ার পর এমন কোনও বছর কি গেছে, যে বছরে আদৌ কোন পরীক্ষাই অনুষ্ঠিত হয়নি?

৬. প্রথমদিকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা কতক্ষণ হতো?

৭. প্রথম বাঙালি ও প্রথম বাংলাদেশি নারী কে ছিলেন- যিনি ম্যাট্রিক পাস করেছিলেন?

৮. ম্যাট্রিক পরীক্ষায় কবে থেকে মেধাতালিকা চালু হয়েছিল? নারীদের জন্যে পৃথক মেধাতালিকাই বা কবে চালু হয়?

৯. ম্যাট্রিক সমমানের অন্যান্য পরীক্ষা কবে থেকে কারা চালু করেছিল?

আপাতত এ কয়টি প্রশ্নের উত্তর গুগল, ভূগোল ঘেঁটে দেখুন। উত্তরের খোঁজ পেতে পেতে মুখোমুখি হতে হবে আরও অনেকগুলো প্রশ্নের। আর এর মধ্য দিয়েই হয়তো পাওয়া যাবে- একটি সাম্রাজ্যবাদী দেশ কীভাবে অপর একটি দেশকে যার রয়েছে চার হাজার বছরেরও বেশি বয়সী নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থার ঐতিহ্য তাকে দুইশো বছর পরে স্বাধীনতা দিয়েও পরোক্ষভাবে পরাধীন করে রাখতে পারে- সেই মহামূল্যবান অতিজরুরি প্রশ্নের উত্তরও।

ওহ! হ্যাঁ! বলে রাখি, ১৮৫৭ সাল দিয়ে সার্চ করলেই যে তথ্যটি গুগলে প্রথম দেখাবে তা হলো- সিপাহী বিপ্লব। আরও অবাক করা বিষয় হচ্ছে, যে মার্চ মাসে পরাধীন ভারতের ব্রিটিশদের গড়া রাজধানীতে প্রথম ম্যাট্রিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঠিক সেই মাসেরই ২৯ তারিখে ব্যারাকপুরে মঙ্গল পান্ডে তুলেছিলেন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আওয়াজ।

তথ্য সংগ্রহিত

বাংলাদেশ সময়: ১২:২৫:১৩   ৩৪ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


আজ থেকে সমুদ্রে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি মারা গেছেন
ভোটারদের নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচার- প্রচারনা শেষ ভোলায় আগামিকাল ভোটের মাঠে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি
বীজ পাইনি সার দিয়ে কি করবো ? চরফ্যাশনে কৃষকের প্রশ্ন
তজুমদ্দিনে ঢাকাগামী লঞ্চ থেকে ৩শ কেজি পাঙ্গাসের পোনা আটক ॥
প্রাইম ইউনিভার্সিটি ও ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির মধ্যে যৌথ চুক্তি স্বাক্ষরিত
ভোলা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৪ আপনারা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন-মোহাম্মদ ইউনুছ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৪ লালমোহনে দোয়াত কলম সমর্থকদের ওপর শালিক সমর্থকদের হামলার অভিযোগ
চরফ্যাশনে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত
ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় চলছে বাগদার রেণু শিকারের মহোৎসব

আর্কাইভ