ভোলাবাণী ডেস্ক: ইয়েমেনের একটি পাহাড়ি গ্রাম। এই গ্রামের রয়েছে ছোট্ট একটি ক্লিনিক। একটু দূরে দাঁড়ালেই প্রথমে আপনার মনে দাগ কাটবে কান্নার শব্দ। এই কান্না ইয়েমেনের দুর্ভিক্ষের; এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়ের।
ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলের বেনি হ্যাডেনের কেন্দ্রের এই ক্লিনিকে অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা এক ডজন শিশু জঙ ধরা দুটি বিছানায় পড়ে আছে। তাদের এই বেদনার কান্না অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।
সাদিয়ার ১৭ মাস বয়সী শিশুর রোগাপটকা শরীরে তীব্র ক্ষুধার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন তার বোন কিন্তু অপুষ্টির বেদনা তাতে মলিন হয়ে যায়।
এরকমই আরেক শিশু খুলা। তার বোন আমিলা তাকে লালন-পালন করেন। আমিলা বলেন, তার পরিবারে কিছু নেই।
‘আমার বাবা অসুস্থ্য। আমরা তাকে খাওয়াতে পারি না’- বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন আমিলা। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব ভয়ে আছি। আমরা কী করতে পারি? আমাদের কিছুই নেই।’
ইয়েমেনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রামের ক্লিনিকের চিত্র এটি। বেসরকারি দাতব্য সংস্থা কেয়ার ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় চলছে এই ক্লিনিক। ইয়েমেন জুড়ে যে চরম বিশঙ্খল ও বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটছে তার একখণ্ড চিত্র এটি।
পাশেই আরেকটি কক্ষ; যেখানে মা ও শিশুরা গাদাগাদি করে আছেন। স্বেচ্ছাসেবী কর্মী আহমেদ বাকের বলেন, এখানে যে চাহিদা আছে তা মোকাবেলা করা অত্যন্ত কঠিন।
‘যুদ্ধের কারণে মানিবক বিপর্যয় অত্যন্ত ভয়াবহ উঠেছে। অবরোধের কারণে এখানে কোনো খাবার নেই, ওষুধ নেই’- বলেন তিনি। দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের চিত্র তুলে আনা প্রায় অসম্ভব। বিভিন্ন দাতা সংস্থাগুলো বলছে, ইয়েমেনের বিভিন্ন অংশে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা বলছে, দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইয়েমেন। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটির এক কোটি ২০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের হুমকিতে রয়েছেন।
এছাড়া দেশটিতে ২১ লাখ শিশুসহ অপুষ্টিতে ভুগছে অন্তত ৩৩ লাখ মানুষ। ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় সাড়ে চার লাখ শিশু অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ২০১৬ সালে ইয়েমেনে প্রায় ৬৩ হাজার শিশুর প্রাণহানি ঘটে অপুষ্টিজনিত কারণে।
দীর্ঘদিন ধরেই ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে সৌদি জোট। মধ্যপ্রাচ্যের তুলনামূলকভাবে দরিদ্র এই দেশটিতে ২০১৫ সালের মার্চে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। শিয়া সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করার পর থেকে এই সংঘাতের শুরু হয়।
হুথিদের আক্রমণের মুখে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বা মানসুর আল হাদি পালিয়ে সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। প্রেসিডেন্ট হাদির সমর্থনে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সৌদি জোট তখন থেকেই হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৮:৫৪ ২২২ বার পঠিত |