‘আয়া সুফিয়া’র ইতিহাস

প্রথম পাতা » ইসলাম ও ধর্ম » ‘আয়া সুফিয়া’র ইতিহাস
সোমবার, ২৭ জুলাই ২০২০



ভোলা বাণী ইসিলামিক ডেক্সঃ আজ তুরস্কের ‘আয়া সুফিয়া’ মসজিদের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব। খ্রিস্টিয় চতুর্থ শতকে খ্রিস্টান সম্রাট দ্বিতীয় কনস্টান্টিন প্রথম এই মসজিদের স্থাপনাটি নির্মাণ করেন। ৩৬০ খ্রিস্টাব্দের ১‌৫ ফেব্রুয়ারি ‘হাজিয়া সোফিয়া’ গির্জা নামে এই স্থাপনা খ্রিস্টানদের উপাসনার জন্য খুলে দেয়া হয়। ৪০৪ খ্রিস্টাব্দে কনস্টান্টিনোপলে সৃষ্ট দাঙ্গায় এই গির্জার একাংশ ভস্মীভূত হয়।

তুরস্কের ‘আয়া সোফিয়া’ মসজিদ

পরবর্তীতে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে এটিকে পুনর্নির্মাণ করা হয়। এরপর দীর্ঘ প্রায় এক হাজার বছর এটি খ্রিস্টানদের উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে তৎকালীন বাইজান্টাইন সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়ে কনস্টান্টিনোপলের নিয়ন্ত্রণ নেন দ্বিতীয় মুহাম্মাদ খ্যাত ওসমানীয় শাসক সুলতান মোহাম্মাদ ফাতেহ। তিনি কনস্টান্টিনোপলের নাম পরিবর্তন করে ইস্তাম্বুল রাখেন এবং ‘হাজিয়া সোফিয়া’ গির্জাকে ‘আয়া সোফিয়া’ মসজিদে রূপান্তর করেন।আয়া সোফিয়া মসজিদের অবস্থা তখন খুব খারাপ; এমনকি এর দরজাগুলিও ভেঙে নীচে পড়েছিল। সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মাদ এটির মেরামতের নির্দেশ দেন এবং স্থাপনাটিতে চারটি মিনার সংযুক্ত করেন। পরবর্তীতে ষোড়শ শতাব্দীতে দ্বিতীয় সুলতান সেলিমের শাসনামলে আয়া সোফিয়া মসজিদের বহিরাবরণকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এই কাজের দায়িত্ব পান তৎকালীন ওসমানীয় সাম্রাজ্যের বিখ্যাত স্থাপত্যশিল্পী ‘মিমার সিনান’। ইতিহাসে সিনান ছিলেন প্রথম স্থাপত্যশিল্পী যিনি তার নির্মিত স্থাপনাগুলোকে ভূমিকম্প প্রতিরোধক্ষম করে তৈরি করেছিলেন। আয়া সোফিয়া মসজিদকেও একই বৈশিষ্ট্য দেয়ার পর তিনি মসজিদের পশ্চিম পার্শ্বে আরো দু’টি মিনার সংযোজন করেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয় সুলতান সেলিম ইন্তেকাল করলে ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে মসজিদের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে সুলতানের সমাধি স্থাপন করা হয়।

তুরস্কের ‘আয়া সোফিয়া’ মসজিদ

ওই সময়ে মসজিদটিতে আরো যেসব স্থান সংযোজন করা হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সুলতানের বসার জায়গা, মরমর পাথরে তৈরি মিম্বার এবং মুয়াজ্জিনের জন্য একটি ছাদযুক্ত বারান্দা। ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন সুলতান প্রথম মাহমুদ আবার এই মসজিদ পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দেন। এই সময়ে আয়া সোফিয়া মসজিদে একটি মাদ্রাসা সংযোজন করা হয় যেটি বর্তমানে লাইব্রেরিতে রূপ নিয়েছে। এই লাইব্রেরিতে রয়েছে তিন লাখেরও বেশি বই। সে

 

সঙ্গে এ সময়ে দরিদ্র মানুষদের তৈরি করা খাবার পরিবেশনের জন্য একটি বড় রান্নাঘর স্থাপন করা হয়। এই মসজিদে সবচেয়ে ব্যাপকভিত্তিক মেরামত ও পুনর্নির্মাণ কাজ হয় ১৮৪৮ ও ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে। সে সময় এই কাজে ৮০০ শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। এবার মসজিদের পিলারগুলোতে বিশাল বিশাল গোলাকৃতি ফলক ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এসব ফলকে শোভা পায় আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নামগুলো। পাশাপাশি বিশ্বনবী (সা.), আবুবকর, ওমর, ওসমান, আলী, হাসান ও হোসেইনের নামও এসব ফলকে স্থাপন পায়।আয়া সোফিয়া মসজিদের আয়তন প্রায় ছয় হাজার বর্গমিটার। চারটি বিশাল স্তম্ভের উপর মসজিদের মূল গম্বুজ স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া, মসজিদে রয়েছে মোট ১০৭টি স্তম্ভ ও নয়টি দরজা। মূল গম্বুজের নীচ দিয়ে মসজিদের ভেতরে সূর্যের আলো পৌঁছানোর জন্য স্থাপন করা হয়েছে ৪০টি জানালা। এসব জানালা দিয়ে মসজিদের সোনালী মোজাইকের উপর যখন সূর্যের আলো নিক্ষিপ্ত হয় তখন চমৎকার এক আধ্যাত্মিক পরিবেশ ও দৃশ্যের অবতারণা হয় যা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।

এত সুদীর্ঘকালের ইতিহাস সমৃদ্ধ এই মসজিদটিকে ১৯৩৫ সালে তৎকালীন তুর্কি প্রেসিডেন্ট কামাল আতাতুর্ক যাদুঘরে রূপান্তর করেন। প্রেসিডেন্টের নির্দেশে আল্লাহ, রাসূলুল্লাহ (সা.), খোলাফায়ে রাশেদিন এবং ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেইন আলাইহিমুস সালামের নাম সম্বলিত ফলকগুলো নামিয়ে ফেলা হয়। অন্য কোনো মসজিদে স্থাপনের জন্য ফলকগুলোকে মসজিদ থেকে বের করতে গিয়ে দেখা দেয় বিপত্তি। এসব ফলকের আকার আয়া সোফিয়া মসজিদের দরজাগুলোর চেয়ে বড় হওয়ায় সেগুলো বের করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে ফলকগুলোকে মসজিদের এক কোণে ফেলে রাখা হয়। অবশ্য এর একযুগেরও বেশি সময় পর ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ফলকগুলোকে আগের মতো স্তম্ভের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়া হয়।

১৯৩৫ সালে মসজিদটিকে যাদুঘরে রূপ্তান্তর করার পর থেকে এখানে নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ ছিল। ২০০৬ সালে তুর্কি সরকার মুসলমানদের নামাজ আদায় এবং খ্রিস্টানদের উপাসনার জন্য যাদুঘরের একটি অংশ বরাদ্দ দেন। ২০১৩ সালে মসজিদের মিনার থেকে প্রতিদিন দুই ওয়াক্ত নামাজের আজান প্রচার শুরু হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩:০৯:৪২   ৫৭৬ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ইসলাম ও ধর্ম’র আরও খবর


নারীরা যেভাবে ইতেকাফ করবেন
পবিত্র মাহে রমজানের ৮ সুন্নত
আল্লাহর যেসব হক আদায় করা মুমিনের কর্তব্য
তুরাগতীরে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত
আতিথেয়তায় আল্লাহর অনুগ্রহ মিলে যেভাবে
লিবিয়ায় মুসলিম বিজয়ের ইতিহাস
আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী
কাদের জন্য ওমরাহ , এর ফজিলত ও কবুল হওয়ার শর্ত
ধর্মীয় সম্প্রীতির নতুন ভুবন: আমিরাতে একই কমপ্লেক্সে মসজিদ-গির্জা-সিনাগগ
পবিত্র হজ আজ লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর হবে আরাফাতের ময়দান

আর্কাইভ