মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাংলাবাজারে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী, শ্বাশুরী ও শ্যালককে পিটিয়ে আহত

প্রথম পাতা » দৌলতখান » বাংলাবাজারে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী, শ্বাশুরী ও শ্যালককে পিটিয়ে আহত
মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮



---।।ভোলাবাণী ।।দৌলতখান প্রতিনিধি ।। ভোলার বাংলাবাজারে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী, শ্বাশুরী ও শ্যালককে পিটিয়ে আহত করার ঘটনা ঘঠেছে। সোমবার বিকেলে দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের বাংলাবাজার পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন খোকন ডাক্তার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। জীবন বাঁচাত আহতরা পুলিশ ফাঁড়িতে আশ্রয় নেয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলাতে আসতে সন্ত্রাসীরা বাধা দিলে পুলিশ পাহারায় সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বাংলা কলেজের ছাত্র মো: রায়হানের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
আহত ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচরা চৌধুরী বাড়ির ইউসুফ হাওলাদারের মেয়ে শিরিনা আক্তার ইমা (২৩) এর সাথে প্রায় দেড় বছর আগে বাংলাবাজার পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন জননী মেডিকেলের মালিক গোলাম কাদের খোকনের ছেলে তৌফিক কাদের ইভানের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে ইভানকে স্বর্ণালংকার সহ বিভিন্ন আসবাবপত্র সামগ্রী প্রদান করা হয়। বিয়ের কয়েকদিন যেতেই ইভান ব্যবসা করার জন্য শ্বশুর বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক নেন। এর পর মাছের ঘের করার জন্য আবারও ৮০ হাজার টাকা দাবি করেন। তার দাবি অনুযায়ী ইমার পরিবার তাকে ৮০ হাজার টাকা দেয়। সর্বশেষ গত কয়েকদিন ধরে ইভান আবারও স্ত্রী ইমা আক্তারের কাছে বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা এনে দিতে বলে। ইমা এতে রাজি না হওয়ায় তাকে বেশ কয়েকবার মারধর করে। এর মধ্যে ইভান ও ইমার দাম্পত্য জীবনে একটি কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করে। কিন্তু ইভান বিভিন্ন সময় নেশা ও খারাপ কাজের সাথে জড়িত থাকার কারনে ইমা তার স্বামী ইভানকে নেশা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলতো। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ইভান। গত রবিবার সকালে ইভান তার স্ত্রী ইমাকে বিনা কারনে মারধর করে এবং ইমার ব্যবহৃত মোবাইল নিয়ে যায়। পরে ইভান শ্বাশুরী ফাতেমা বেগমকে তার বাড়িতে আসতে বলে। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ইমার মা ফাতেমা ও তার ছোট ভাই রায়হানকে নিয়ে ইভানের বাড়িতে আসে। পরে বিকেল বেলা ইমার মা ইমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললে জামাই ইভান ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এসময় তারা ইমার মা ও ভাই রায়হানকে গালিগালাজ করতে থাকে এক পর্যায়ে ইভান, তার পিতা গোলাম কাদের ও বোন অনন্যা মিলে ঘরের দরজা আটকিয়ে রায়হান, ফাতেমা বেগম ও ইমাকে মারধর করে। এসময় ইভান ও তার বোন অনন্যা ফাতেমা বেগমের সাথে থাকা স্বর্ণের রুলী, কানে দুল, গলার চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে রায়হান, ফাতেমা ও ইমা আত্মরক্ষার্থে পাশের পুলিশ ফাঁড়ির আশ্রয় নেয়। পরে পুলিশ আহতদেরকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠালে ইভানের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তাদের বাঁধা দেয়। পরে বাংলাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির থেকে পুলিশ সদস্যদের পাহারায় তাদেরকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত তৌফিক কাদের ইভান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার স্ত্রী ও শিশু মেয়েকে শ্বাশুরী বাড়ি যেতে নিষেধ করায় উল্টো শ্বাশুরী ও শ্যালক তাদের বাড়িতে এসে তার ছোট বোন ও বাবাকে মারধর করছে।
বাংলাবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আবদুল হাকিম জানান, সোমবার বিকেলে আমাদের ফাঁড়ির পাশের গোলাম কাদের ডাক্তারের ছেলে ইভানের স্ত্রী ইমা, ইমার ভাই রায়হান ও তার মা ফাতেমাকে ইভান ও তার পরিবার মারধর করে। তারা আহত অবস্থায় আত্মরক্ষার্থে আমাদের ফাঁড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে আরো ভালো চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠানে হলে পথে ইভান বাধা দেয় এবং হামলার চেষ্টা চালায়। পরে আমি নিরাপত্তার জন্য ফাঁড়ির কনস্টাবল মনির ও লাল মিয়াকে সাথে করে তাদেরকে ভোলা সদর হাসপাতালে প্রেরনের ব্যবস্থা করি।
দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনায়েত হোসেন জানান, আমরা ঘটনা শুনেছি। উভয় পক্ষের লোক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তবে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ৬:৫৮:৪০   ৪১৭ বার পঠিত  |