বাংলাদেশে সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকর্মীদের পেশাগত ঝুঁকি বাড়ছে-আর্টিকেল ১৯

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বাংলাদেশে সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকর্মীদের পেশাগত ঝুঁকি বাড়ছে-আর্টিকেল ১৯
বুধবার, ৩ মে ২০১৭



 

---

বাংলাদেশে সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকর্মীদের পেশাগতঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম বিষয়ক আন্তর্যাতিকসংস্থা আর্টিকেল ১৯। বুধবার (৩মে ২০১৭) প্রকাশিত আর্টিকেল ১৯ বাংলাদেশের২০১৬ সালেরবার্ষিক প্রতিবেদনে অনুযায়ী২০১৬ সালেসাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকর্মীদের ওপরউগ্রপন্থীদের আক্রমনেরহার তার আগের বছরের (২০১৫) তুলনায় বেশীছিল। ২০১৬ সালে ১৪১ জনসাংবাদিক, ৩জন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকর্মী , ৩ জনপ্রকাশনাকর্মীসহভিন্নভিন্ন ১৪৭ টিইস্যুতে মোট ৩২০ টিসহিংসতারঘটনাসংগ্রহকরাহয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী আইন বর্হিভুত গ্রেফতার, ফৌজদারিমানহানিমামলা, হয়রানীমূলকমামলা ও আইসিটিএ্যাক্ট (৫৭ ধারা) সংক্রান্তবিষয়েমামলা ও গ্রেফতারছিল ৩৯ শতাংশ। শারীরিক আঘাত জনিত ঘটনাছিল ১৯.৪ শতাংশ, পেশাসংশ্লিষ্টইকুইপমেন্টস্এরক্ষতি/ধ্বংসছিল ১৮.৪ শতাংশ. অপরদিকে, এসব ঘটনার মধ্যে হুমকি ও অপহরণ সংক্রান্ত ঘটনাছিল ১৫ শতাংশএবং গ্রেফতার ও পুলিশ রিমান্ড জনিত ঘটনা ছিল ৭.২ শতাংশ। লক্ষনীয়ভাবে গত বছর মোট ৪ টি নারী ইস্যু সংক্রান্ত ঘটনা সংগ্রহ করা হয়, যা মোট হিসাবের ১.৩ শতাংশ।

২০১৬ সালে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আইন বর্হিভুত হয়রানী ও গ্রেফতার ইস্যুটি। এবছর বিভিন্ন আইন ও এ্যাক্ট সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্মীদের পেশাগত অবদমনের ক্ষেত্রেবাধা হিসেবে কাজ করে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ১৮৬০ সালেপ্রণীত পেনাল কোডএ্যাক্ট, ২০১৬ সালেপ্রণীত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এ্যাক্ট (২০১৩ সালেসংশোধিত), বিশেষক্ষমতাএ্যাক্ট ১৯৭৪ ইত্যাদি। বিগত তিন বছরের তুলনায় ফৌজদারি মানহানি সংক্রান্ত মামলা ২০১৬ সালে এসে সাত গুন বেড়েযায়। ২০১৬ সালে এ সংক্রান্তঘটনাছিল মোট ৭৮ টি, যা ২০১৪ সালেছিলমাত্র ১০ টি।

সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কর্মীদের হয়রানী ও গ্রেফতারের ক্ষেত্রে ৫৭ ধারার প্রয়োগ ছিল উদ্বেগ জনক। এবছর বিভিন্ন আইনের আওতায় সুনির্দিষ্ট ব্যাক্তি বিশেষকে পেশাগতঝুঁকি মোকাবেলা করতে দেখা যায়। দৃষ্টান্ত হিসেবে ডেইলী স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে দায়েরকরা ৬৬টি ফৌজদারি মানহানি মামলাসহ মোট৮৩টিমামলা উল্লেখযোগ্য। কয়েকবছরআগে ডেইলী স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারেরবিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা এসকল মামলা দায়েরকরেছিল।

কর্মরতসাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকর্মীদের পেশাসংশ্লিষ্টইকুইপমেন্টস্ যেমন : ক্যামেরা, ল্যাপটপ, মোবাইলইত্যাদি ভাংচুরের প্রবণতা ও হার বিগতবছর গুলোর তুলনায় অনেক বেশীছিল। এ প্রবণতা স্থানীয়পর্যায়ের ক্যামেরা পারসনও ফটো সাংবাদিকদের পেশাগত গতিশীলতাকে মন্থর করে দেয়। বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়েরইস্যু যেমন : অপরাধ, দুর্নীতি, শিশুবিবাহও সর্ম্পকাতর রাজনৈতিক বিষয়ের ছবি ও ফুটেজ সংগ্রহে সাংবাদিকরা নিরুৎসাহিত হয়।

২০১৬ সালে নির্বাচিত মেয়র কর্তৃক এক ফেলো সাংবাদিক শারীরিক আঘাত ও অপহরণের ঘটনায় এক যোগে ৩৬ জনসাংবাদিক এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গেলেতারাও ঐ প্রতিপক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হন।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে নিন্ম আদালতে সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যা মামলার রায় হয়। ১২ বছর আগে নিহত মানিকসাহা হত্যা মামলার ১১ আসামীর ৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডহয়, বাকী দুজন খালাস পায়। এমনকি ১৯৯৫ সাল থেকে সাংবাদিকহত্যাকান্ডসম্পর্কিত ৫১ টিমামলারবিচারকার্যক্রমেরমধ্যে এযাবৎমাত্র ২ টিমামলাররায়সম্পন্নহয়েছে। বাকী সব মামলারবিচারকার্যক্রম এখনওতদন্তপর্যায়েরয়েছে।

আর্টিকেল ১৯ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণ দেখা গেছে যে, ঢাকারতুলনায়মফস্বল/স্থানীয়পর্যায়েরগণমাধ্যমকর্মীরাঅধিকহারেপেশাগতঝুঁকিরমুখেপড়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয়পর্যায়েরক্যামেরাপারসন , ফটোসাংবাদিক, সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকর্মীরাঅধিকহারেঝুঁকি মোকাবেলাকরেন। বিশেষকরে স্থানীয়পর্যায়েরইস্যু যেমন : অপরাধ, দুর্নীতি, শিশুবিবাহও সর্ম্পকাতর রাজনৈতিকবিষয়েরছবি ও ফুটেজসংগ্রহেসাংবাদিকরা বেশী বেশীঝুঁকিরমুখেপড়েন।

আর্টিকেল ১৯ এরঅন্য এক পরিসংখ্যানে দেখাযায় যে ৮৬.৯ শতাংশগণমাধ্যমকর্মী অ-রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিবর্গ দ্বারাআক্রান্তহন। ১১.০৩ শতাংশঘটনার ক্ষেত্রেআইনজীবী, সাংবাদিক,ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও ডায়গোনস্টিক সেন্টারেরমালিকগণের সম্পৃক্ততা বেশীলক্ষ্য করা গেছে। অপরদিকেরাষ্ট্রীয়কার্যে দায়িত্ব প্রাপ্তদের দ্বারাঝুঁকিরশিকার হচ্ছেন ১০.৩৪ শতাংশ। এরমধ্যে ২.৭৬ শতাংশঘটনার ক্ষেত্রেসরকারিকর্মকর্তা, সাংসদ ও মেয়রগণের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

গণমাধ্যমপ্রতিষ্ঠানেনারীসাংবাদিকদেরপ্রতিনির্যাতন ও বৈষম্যেরধারা ২০১৬ সালেওঅব্যাহতছিল। যদিওভয়এবং শঙ্কার কারণেএসংক্রান্তসকলঘটনারযথাযথ পরিসংখ্যান ও প্রতিফলন এ প্রতিবেদনে উঠে আসেনি। এমনকি এ ক্ষেত্রেকার্যকরআইনি ও বিচারিকতদন্তওঅনুপস্থিত।

আর্টিকেল ১৯ বাংলাদেশ সরকারেরপ্রতিগণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাপ্রতিষ্ঠারলক্ষ্যে নিন্মলিখিতসুপারিশমালাপ্রদানকরছে :
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যমদিবসউপলক্ষ্যে আর্টিকেল ১৯ বাংলাদেশ ও দক্ষিণএশিয়াঅঞ্চলেরপরিচালকতাহমিনারহমানতারমন্তব্যে গণমাধ্যমসংশ্লিষ্টকয়েকটিবিষয়ে জোরালো উদ্যোগগ্রহণেরব্যাপারে নিন্মোক্তমতপ্রদানকরেন।

সাংবাদিকনির্যাতন রোধে জোরালো পদক্ষেপহিসেবেএসংক্রান্তসকলঘটনারতদন্ত, দায়ীদের খুঁজে বেরকরা, নির্যাতিতদের প্রয়োজনীয়সহযোগিতা ও বিচারিকঅগ্রগতিনিশ্চিতকরতেহবে। সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষানিশ্চিতকরারজন্য সরকারকেজাতীসংঙ্ঘের রাইটস্কাউন্সিল রেজুলেশন ৩৩/২ বাস্তবায়নেপ্রয়োজনীয় উদযোগগ্রহণকরা। পাশাপাশি সর্বশেষ ইউপিআর অঙ্গিকার বাস্তবায়নেকার্যকরভুমিকাপালনকরা।

তথ্য প্রযুক্তি এ্যাক্টকে ( আইসিটিএ্যাক্ট ২০০৬) বিশ্বমানেউন্নীতকরারজন্য এর ৫৭ ধারারপ্রয়োজনীয়পর্যালোচনা ও সংশোধনকরাএবংগণমাধ্যম ও মতপ্রকাশসম্পর্কিত বিদ্যমানমামলাগুলোসংশোধিত এ এ্যাক্টের আওতায়এনেবিচারকার্য সম্পন্নকরা।পাশাপাশিফৌজদারিমানহানিমামলারধারা রদ করেতাসিভিল (মানহানি) আইনেরআওতায়আনা ।মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নারীসাংবাদিকদেরঅধিকারবিরোধীকার্যক্রম বিষয়েসচেতনতাবৃদ্ধিরজন্য পুলিশ, সরকারি কৌসুলী ও সংশ্লিষ্টকর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয়প্রশিক্ষণেরআওতায়আনা।

সকলগণমাধ্যমপ্রতিষ্ঠানেরপ্রতিআর্টিকেল ১৯আরওআহবানজানাচ্ছে যে, কর্মরত সকল নারীসাংবাদিকদের প্রতি নির্যাতন, বৈষম্য ও হয়রানী লাঘব করারজন্য সমতা ভিত্তিতে আচরণকরা। পাশাপাশি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকর্মীদের সকলধরণেরঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিতে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা নিশ্চিতকরা।

আফজাল হোসেনলাভলু
গণমাধ্যমকর্মী ও উন্নয়নগবেষক।

বাংলাদেশ সময়: ১৯:২৩:৩০   ৪৮৭ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


এসএসসির ফল প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা
এ কে ফজলুল হককে কেন ‘শেরে বাংলা’ বলা হয়?
জাতীয় পর্যায়ের লোকনৃত্য প্রতিযোগীতায় ভোলার মেয়ে স্বস্তিকার ২য় স্থান অর্জন
ভোলায় ইসতিসকার নামাজ আদায়
চরফ্যাসনে হিটস্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু
ভোলায় তীব্র প্রবাহে অস্থির জনজীবন
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর বিলুপ্তির পথে ॥
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাচন ২০২৪আপনাদের পবিত্র ভোট ৫ বছরের জন্য ভাল পাত্রে জমা রাখবেন-মোহাম্মদ ইউনুছ
দেশ ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কংগ্রেস: নরেন্দ্র মোদি
ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার খালের উপর ব্রিজ নির্মানের দাবী মনপুরাবাসীর ॥

আর্কাইভ